দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের রায় আজ। কিছুক্ষণ পরই এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান।
আইনের চোখে পলাতম বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতার ১৩ বছরের সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী। তারেক রহমানকে এ ঘটনায় সহায়তা করা তার স্ত্রী ডা. জোবাইদারও একই সাজা হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন দুকদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
তিনি বলেন, এ মামলায় ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ডের প্রত্যাশা করছি।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকেও মামলায় আসামি করা হয়।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করেছে। মামলাটি শুরু হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু পরবর্তীতে সব পর্যালোচনা করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ১৮টা এক্সিবিটের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা তার অবৈধ উপার্জন এবং ৫৮ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন।
তিনি দাবি করে বলেন, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি যেহেতু তিনি সবকিছু জানেন, তিনি সম্পদ বিবরণী ঘোষণা করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে আইনজীবীরা পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তারপরও তিনি আদালতে উপস্থিত হন নাই। সুতরাং এই যে আদালত এবং আইনের প্রতি তার শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা- আমরা মনে করি তিনি এটা সঠিক কাজ করেননি।
দুদকের জ্যেষ্ঠ এই কৌঁসুলি বলেন, আমরা ৪২টি সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এই অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি। তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছি।
উল্লেখ্য, এর আগে পৃথক চার মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তবে জোবাইদার এটি প্রথম ও একমাত্র মামলার রায় বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
মুদ্রা পাচারের মামলায় ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে প্রথমে খালাস দিয়েছিলেন ঢাকার আদালত। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর হাইকোর্ট তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানকেও কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড, তারেকের হয় ১০ বছর সাজা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে তিনবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। তবে সব সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় তারেককে যাবজ্জীবন সাজা খাটার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একুশে সংবাদ/স/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :