স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল স্তরের মানুষ যাতে উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছেন। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে সরকারি বিভিন্ন সুবিধা হাতের নাগালে পায় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হলে বাংলাদেশ উত্তরোত্তর পৃথিবীর বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
তিনি আজ শুক্রবার স্থানীয় সরকার বিভাগের আয়োজনে রাজধানীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অডিটোরিয়ামে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের সাথে বিগত ৫ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। এতে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার হোসেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলি আখতার হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব ড. মহঃ শের আলী, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ সময় বিএনপি শাসনামলের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হত মাত্র ১১০০ মেগাওয়াট। মানুষ তখন লোডশেডিং এর জ্বালায় অস্থির হয়ে বলতো বিদ্যুৎ যায়না মাঝে মাঝে আসে। দেশের শিল্প উৎপাদন কৃষি উৎপাদন প্রচন্ডভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। কৃষক বিদ্যুৎ ও সারের দাবিতে আন্দোলন করতে যেয়ে গুলি খেয়ে মরেছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফলে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোন কৃষক বিদ্যুৎ বা সারের দাবিতে আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়েনি। আজকের বাংলাদেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ যা এক সময় কল্পনাও করা যেত না, উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ভৌগোলিক আয়তনে ছোট্ট ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সতের কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও খাবারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মত বিভিন্ন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বেই খাদ্য সামগ্রীর দাম বাড়লে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়েছে কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমাদের এখানে কোন খাদ্য সংকট তৈরি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
বিএনপি-জামাত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ভালো উদ্যোগ নস্যাৎ করার উদাহরণ টেনে মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রান্তিক মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবার আওতায় আসতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অথচ বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। সংকীর্ণ দলীয় বিবেচনার উর্ধ্বে বিএনপি কখনো যেতে পারেনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অথচ কমিউনিটি ক্লিনিক আজ শেখ হাসিনা মডেল হিসাবে জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত এবং সারা বিশ্বে প্রশংসিত একটি উদ্যোগ।
মন্ত্রী এ সময় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের অনেকের চিন্তাভাবনায় নেতিবাচকতা রয়েছে। এই নেতিবাচকতা দূর করে ইতিবাচকতায় আসতে হলে মনোজাগতিক একটি পরিবর্তন দরকার। মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন একদিনে হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। সমাজ ব্যবস্থা মানুষের চিন্তা-ভাবনার জগতে প্রভাব বিস্তার করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই নেতিবাচকতার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃশ্যমান শত শত উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখেও অনেকে তা অস্বীকার করে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল এর মত বড় প্রকল্পের কথা না হয় বাদই দিলাম, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এবং পানির সুবিধা নিশ্চিত করার কৃতিত্বটুকুও অনেকে সরকারকে দিতে চায় না বলেন তিনি। ভালো কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাহলে মানুষ আরো বেশি ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পায়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্ষায় জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক এবং ন্যাক্কারজনক বিষয় হচ্ছে জাতির পিতার খুনিদের আইন করে অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু যেরকম সারাজীবন সংগ্রাম করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে আজ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও নানা রকমের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বিএনপি জামাতের বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সুশাসন ও সুবিচারের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :