আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিআরআইয়ের ১০ বছর: পরবর্তী সোনালি দশকের সূচনা’ শীর্ষক সেমিনারে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন দেখতে চায় চীন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত এক বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, চীন বাংলাদেশের ‘সংবিধান অনুযায়ী’আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়।
রিজভী বলেন, রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সমগ্র জাতি গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রদূত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে “বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলার” ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তার এই উদ্বেগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এটিও মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনকারী দল হিসেবে বিএনপি সব সময় সেই সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা জনগণ দ্বারা অনুমোদিত ও গৃহীত। দুঃখজনকভাবে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপপ্রয়াসে বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার।’
হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা সরকার সর্বজনস্বীকৃত ও বহুল প্রশংসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ মতামত এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকামী জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে শাসকগোষ্ঠী জাতির সঙ্গে এই প্রতারণা করেছে।
‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দুটি প্রহসনমূলক জাতীয় নির্বাচন স্পষ্টতই প্রমাণ করেছে যে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, নির্বাচনের নামে যে রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তায়ন, তাতে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি চিহ্নিত অংশ সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ।’
চীন বাংলাদেশের ‘সংবিধান অনুযায়ী’ আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয় উল্লেখ করে রিজভীর বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের একটি বিশাল অংশ গত ১০ বছরে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তাই দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন ও কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার অধীনে নয়, বরং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ না করবার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেটির সাথে তার নিজের বক্তব্যই অসামঞ্জস্যপূর্ণ কারণ, তিনিই আবার বলছেন বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন সম্পন্ন করা উচিত।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা, বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনেই কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি চীনকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করার জন্য। দেশের মানুষের চলমান সংগ্রামে বিএনপি সর্বাত্মক সমর্থন প্রত্যাশা করে, যেন অচিরেই বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :