রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের নামে দূরপাল্লার যাত্রাপথে বাসের ভাড়ার চেয়ে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুলে সংগঠনটি রেলপথকে আগের মতো নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রাখার দাবি জানায়।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রেল খাত লাভজনক করার ঘোষণা দিয়ে ২০১২ সালে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৭ শতাংশ রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। একই সঙ্গে ২০১২ সালের ভাড়া বৃদ্ধিকালে ওই সময়ে বিদ্যমান ‘সেকশনাল রেয়াতি সুবিধা’ প্রত্যাহারের পর আসলেই কি রেল লাভবান হয়েছিল? ওই বছর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলের লোকসান ছিল ১২২৬ কোটি টাকা। এতে বোঝা যায়, শুধু ভাড়া বৃদ্ধি করে লাভবান হওয়া বা লোকসান কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বর্তমানে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে যে হারে রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, এতে যাত্রীরা রেলবিমুখ হবে, রেলে টিকিটবিহীন যাত্রী যাতায়াতের সংখ্যা বাড়বে, রাজস্ব আয় কমবে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লুটপাটের সুযোগ আরো বাড়বে। রেলের আয়বর্ধক খাত যেমন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে পণ্যবাহী ট্রেন থেকে আয় বাড়ানোর দিকে না ঝুঁকে রেলওয়ে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে আয় বাড়ানোর যে আকাশকুসুম পরিকল্পনা করছে, তা কার্যত ব্যর্থ বলে প্রমাণিত।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার রেলকে বিকশিত করতে গত ১৪ বছরে ৯৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও এখনো ৬০ শতাংশ রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ। আর ৮০ শতাংশ লোকোমোটিভ ও ৬৩ শতাংশ কোচ মেয়াদোত্তীর্ণ, যার অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। পরিকল্পনার গলদে ট্রেনের টিকিট ১০ দিন আগে কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অথচ ৯০ শতাংশ যাত্রী ১০ দিন আগে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারে না। অন্যদিকে বাসের টিকিট তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ট্রেনের টিকিট যাত্রীরা সহজে কাটতে পারে না। ফলে কখনো কালোবাজারি বা স্টেশনের পার্শ্ববর্তী কম্পিউটারের দোকান থেকে টিকিট কিনতে হয়। এভাবে টিকিট ক্রয়ের কারণে সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষ অনেক সময় প্রতারিত হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে কখনো কখনো রেলে কর্তব্যরতদের ম্যানেজ করে বিনা টিকিটে ভ্রমণে বাধ্য হন অনেক যাত্রী। ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটলে মাঝপথে যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে রেললাইনের আশপাশে দোকান থাকে না বলেই অনেককে অনাহারে-অর্ধাহারে কষ্ট ভোগ করতে হয়।
এ সময় রেলের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পাঁচটি রুটের বাস ও রেলের ভাড়া এবং সময়ে তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :