ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এর যুক্তি হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন কাগুজে’ সংস্থা হিসেবে বর্ণনা করে সংগঠনটি বলেছে, ঢাকায় তাদের কার্যালয় খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী হবে।
এতে বলা হয়, দেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলজুড়ে অজস্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল। গুম-খুন ছাড়াও বিশেষত বিডিআর হত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যার পরেও নির্বিঘ্নে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখতে পেরেছিল হাসিনা। পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। উল্টো গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাগুজে মানবাধিকার সংস্থার অফিস ঢাকায় হোক তা দেশের জনগণ চায় না।
‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পলিসিতে এলজিবিটিকিউ তথা সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশ মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্র হওয়ায় এদেশে সমকামিতা শুধু ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে নিষিদ্ধই নয়, রাষ্ট্রীয় আইনেও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়াও উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে তাদের নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও সর্বজনীন যৌনশিক্ষার ইস্যুগুলো ইসলামের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খ্রিস্টান রাজ্য বানানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও উদ্বেগের বিষয়।’
হেফাজতে ইসলাম আরও জানায়, সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সন্ত্রাসবাদ, অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করেছে তা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩৮ হাজার বাঙালি হত্যার দায় ও সব ঘটনার দায় অবশ্যই সন্ত্রাসীদের নিতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘ তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সন্ত্রাসীদের পক্ষে বক্তব্য বিবৃতি দিয়েছেন। ফলে ঢাকায় তাদের অফিস খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী হবে। নতুন করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হোক এবং তাতে অন্তর্বর্তী সরকার আরও দুর্বল হয়ে পড়ুক তা আমরা চাই না।
‘আমরা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অফিস এদেশে খুলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি। গত কয়েক যুগ ধরে একের পর এক মুসলিম দেশে রুশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে বোমাবর্ষণ, গণহত্যা, আগ্রাসন, লুটপাট ও নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। অথচ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ সেসবের কিছুই ঠেকাতে পারেনি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দশকের পর দশক বিনা বাধায় ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যা ও দখলবাজি চলমান এবং কাশ্মিরে ভারত কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়মিত ঘটনা ঘটছে। এমনকি সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনকবলিত ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও লেবাননসহ অসংখ্য মুসলিম দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতেও চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সংস্থাটি। তাই দেশের স্বার্থে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সভ্যতা সংস্কৃতি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খুলতে দেয়া যাবে না।
একুশে সংবাদা/আ স/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :