বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, জনগণের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জনগণের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেলের মতো সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি, সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও সম্প্রসারিত করে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা হবে, যাতে কেউ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশের কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ স্বাস্থ্যকর্মী ব্যবস্থা করা এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আলোচনায় প্রায়ই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের বিবেচনায় রেখে সব পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণীত হয়। এর ফলে দেশে বিদ্যমান প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি ও কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্তিত্ব উপেক্ষিত হয়।
তিনি আরও বলেন, অতীতের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিবিধ সহায়তা প্রদান সমান গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।
স্বল্পমেয়াদী (১-৩ বছর)
১. প্রতিরোধের মাধ্যমে সুরক্ষিত স্বাস্থ্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইউনিয়ন সাব-সেন্টার উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ।
২. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেল সেন্টার হিসেবে রূপান্তর, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পুষ্টিবিদ ও পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনা।
৩. জিপির (জেনারেল ফিজিশিয়ান) অধীনে প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থার প্রবর্তন।
৪. বিদ্যমান দ্বিতীয় (জেলা ও সদর হাসপাতাল) এবং তৃতীয় স্তরের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ ও সঠিক রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন। কিডনি, ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ চিকিৎসাসহ ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন, জরুরি সেবা, দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবা ও দ্রুত রোগী স্থানান্তর ব্যবস্থাপনা।
৫. স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায়বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন। সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও মিডিয়ার যথাযথ এবং ইতিবাচক ব্যবহার।
মধ্যমেয়াদী (১-৫ বছর)
১. স্বাস্থ্য কার্ড প্রবর্তন ও স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা প্রবর্তন।
দীর্ঘমেয়াদী
১. আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
২. স্বাস্থ্যশিক্ষা ও গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
৩. স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণ।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রেই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও পরিশীলনের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী ও প্রয়োগযোগ্যভাবে বাস্তবায়নই সফলতার মূল কথা। এ বিবেচনায় উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবটি একটি ধারণাগত কাঠামো। চলমানভাবে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক পর্যালোচনা, অংশীজনের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে যে কোনো সংস্কার প্রস্তাব জনকল্যাণে কার্যকরভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনকল্যাণমুখী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবার মতামতকে পুনঃমর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :