সম্প্রতি মোজাম্বিকে সহিংসতায় প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শপিংমল-মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাড়ী, ঘরবাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পুরো মোজাম্বিকে প্রতিটি শহর-গ্রামে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। লুটপাট, ভাঙচুর জ্বালাও পোড়াও করে এ সহিংসতায় গত এক সাপ্তাহে অন্তত আটশতেরও অধিক দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। ৯ অক্টোবর থেকে হিসাব করলে প্রায় ১ হাজার ও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকারও অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
আন্দোলনকারীরা ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করার পাশাপাশি জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের সংবাদও পাওয়া গেছে। অনেক বাংলাদেশি শহর ছেড়ে পালিয়ে গভীর জঙ্গলে অবস্থান নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশিরা সবকিছু হারিয়ে মানবেতর জীবন পার করছে। ভয়ভীতি আর আতংকের মধ্যে রয়েছেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ বলেন, ‘আমার তিলতিল করে ৩টা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় আমার ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, ‘আমার দোকানের জিনিসপত্রের তাক, কারেন্টের তার থেকে শুরু করে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এতে প্রায় কমপক্ষে ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার তিন ভাইদের নিয়ে গড়ে উঠা সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও লুটপাট হয়েছে। আমার পরিবারে বড় ধরনের বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালা যেন সবর করার তৌফিক দেন ‘
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম আর মুজিব বলেন, ‘নির্বাচনপরবর্তী মোজাম্বিকে চুরি-ডাকাতি এবং খুনসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। এসব অপরাধীর টার্গেট মূলত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। সোমবার আমার দোকান থেকে ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমিসহ অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
দেশটির প্রবীণ ব্যবসায়ী, ইসলামিক ফোরাম অব আফ্রিকার কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কমিউনিটির সহ-সভাপতি মাওলানা সামছুল হক বলেন, আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে করে জাতিসংঘের মাধ্যমে হোক কিংবা মোজাম্বিক সরকারের মাধ্যমে হোক আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, মোজাম্বিকে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায়। দেশটির পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ হাইকমিশন শাহ আহমেদ শফী।
তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশিদের হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশিরা নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করলে নিকটবর্তী দেশ মালাওয়ে, জাম্বিয়া, ইসোয়াতিনি, তানজানিয়াসহ আশপাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা উইং, ডিজি, বি, এম জামাল হোসেন বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেন।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কমনা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :