মুসলিম ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরা। ইতিহাসের বহু স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে এই দিনে। তবে অনেকেই এই দিনটিতে বিশেষভাবে কারবালায় হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনাটিকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। কিন্তু এই দিনটি ইসলাম এবং ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।
এই দিনেই হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে এদিনই তার তওবা কবুল করা হয়। ফেরআউনের কবল থেকে হজরত মুসা (আ.)-এর মুক্তি, হজরত ইবরাহিম (আ.) -এর বিজয় ও দাম্ভিক নমরুদের পরাজয় ঘটে। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তিও আশুরাতেই সংঘটিত হয়েছিল।
আশুরাকে কেন্দ্র করে দুই রোজা ও তওবার আমল শরীয়ত সম্মত। এর বাইরে সমাজে কারও কারও মাঝে কিছু আমলের প্রচলন হয়েছে যা ইসলাম সম্মত নয়। এগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত। এমন কিছু আমল হলো-
** তাজিয়া বানানো অর্থাৎ, হজরত হুসাইন রা.-এর নকল কবর বানানো। এটা বস্তুত এক ধরণের ফাসেকী শিরকী কাজ।
কারণ, সঠিক ধর্মীয় জ্ঞান নেই এমন মানুষেরা বিশ্বাস করেন যে, হজরত হুসাইন রা. এতে সমাসীন হন’ এই বিশ্বাস নিয়ে তারা এখানে নযর-নিয়ায পেশ করে, এর সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়, এর দিকে পিঠ প্রদর্শন করাকে বেয়াদবী মনে করে।তাজিয়ার দর্শনকে ‘যিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয় এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিছিল করে; যা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। এছাড়াও আরো অনেক কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তাজিয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৯৪,৩৩৫, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৩২, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৩)
মনে রাখতে হবে, তাজিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে) নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরা মাইদাহ, আয়াত, ৩)
**মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৯৪, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৩২, ৪২)
** ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। যারা এগুলো করেন, দেখেন এবং শোনেন সবার প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (আবূ দাউদ, হাদিস, ৩১২, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৫৮৪)
** কারবালার শহীদরা পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৫/২৮৯, কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৪০)
** হজরত হুসাইন রা. ও তার স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। (কিফায়াতুল মুফতী, ৯/৪০)
** হজরত হুসাইন রা.-এর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ওই বাচ্চার দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মুহাররম বিষয়ক কু-প্রথা ও বিদয়াত। (ইসলাহুর রুসূম)
** তাজিয়ার সঙ্গে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।(সূরায়ে লুকমান, আয়াত, ৬)
** আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। কারণ শরীয়ত শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে। এই সময়ের পর শোক পালন করা জায়েজ নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না। (বুখারী, হাদিস, ৫৩৩৪, ৫৩৩৫, ৫৩৩৬, ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৪)
** শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ২/৩৪৪)
**এই দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জাল হাদীস বর্ণনা করা। কারণ হাদীসে মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামে ঠিকানা বানিয়ে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারী, হাদিস, ১০৭)
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :