‘খোলা’ তালাক বলা হয় স্ত্রী থেকে স্বামী বিনিময় গ্রহণ করে তাকে তালাক দেওয়া ‘খোলা’ তালাকের প্রতি ইসলামী শরিয়ত কাউকে উদ্বুদ্ধ করে না।
নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে শর্ত সাপেক্ষে তা বৈধ। শর্ত পাওয়া না গেলে তালাকের বিনিময় গ্রহণ করা অবৈধ। ‘খোলা’ তালাকের বিধান হলো, যদি স্বামীর অন্যায় বা দোষের কারণে স্ত্রী তালাকের আবেদন করে, এ অবস্থায় তাকে তালাক দিতে স্বামী বিনিময় চাইতে পারবে না; বরং তা তার জন্য হারাম হবে। (ফাতহুল কাদির : ৩/২০৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/৫১৫)
আর যদি স্ত্রীর সীমা লঙ্ঘন বা অন্যায়ের কারণে তালাক দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে স্বামী তার থেকে তালাকের বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে। উভয়ে সম্মতিক্রমে যে পরিমাণ বিনিময়ের ওপর একমত হবে, তা-ই নেওয়া বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রেও বিনিময়টি বিয়েতে ধার্যকৃত মহরের বেশি না হওয়া উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/১৫০, আলবাহরুর রায়েক : ৪/৮৩)
মহান আল্লাহ এ বিষয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে তোমরা জোর করে নারীদের (সত্তা বা সম্পদের) উত্তরাধিকারী হবে। আর তোমরা তাদের আবদ্ধ করে রেখো না—তাদের যা দিয়েছ, তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ১৯)
মহান আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের জন্য হালাল নয় যে তোমরা তাদের যা দিয়েছ, তা থেকে কিছু নিয়ে নেবে। তবে উভয়ে যদি আশঙ্কা করে যে আল্লাহর সীমারেখায় তারা অবস্থান করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে তারা আল্লাহর সীমারেখায় অবস্থান করতে পারবে না, তাহলে স্ত্রী যা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবে, তাতে কোনো সমস্যা নেই।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৯)
আয়াতদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়, স্বামীর অন্যায় আচরণ বা কোনো দোষের কারণে যদি স্ত্রী ন্যায়সংগতভাবে স্বামীর থেকে তালাকের আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে স্বামীর উচিত হলো, কোনো বিনিময় ছাড়াই তালাক দিয়ে দেওয়া। এ অবস্থায় যদি সে বিনিময় দাবি করে, তাহলে তা তার জন্য অবৈধ হবে। আর যদি স্ত্রী প্রকাশ্যে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়—অর্থাৎ স্ত্রী দোষী হয়, এ অবস্থায় স্বামী তাকে তালাক দেওয়ার সময় তার থেকে ন্যায্য বিনিময় দাবি করতে পারবে। এটিই ‘খোলা’ তালাক। (আহকামুল কোরআন : ২/৮৯)
হাদিস শরিফে খোলা তালাক
একাধিক হাদিসে ন্যায়সংগত ও ন্যায্য ‘খোলা’ তালাকের বিনিময়ের বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। যথা—এক. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাবিত ইবনু কায়সের স্ত্রী নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! চরিত্রগত বা দ্বিনি বিষয়ে সাবিত ইবনু কায়সের ওপর আমি দোষারোপ করছি না। তবে আমি ইসলামের ভেতরে থেকে কুফরি করা (অর্থাৎ স্বামীর সঙ্গে অমিল) পছন্দ করছি না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তার বাগানটি ফিরিয়ে দেবে? (সাবেত মোহরানা হিসেবে তাকে বাগান দিয়েছিল) সে বলল, হ্যা। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাবিতকে বলেন, তুমি বাগানটি গ্রহণ করো এবং ওই নারীকে এক তালাক দিয়ে দাও। (বুখারি, হাদিস, ৫২৭৩)
দুই. রুবায়্যি বিনতে মুআব্বিজ (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে তার স্বামী থেকে ‘খোলা’ তালাক নিয়েছেন। তালাকের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ঋতুস্রাব গণনার মাধ্যমে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস, ১১৮৫)
এই হাদিসগুলোতে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) ন্যায়সংগত ‘খোলা’ তালাকের নির্দেশ বা তাতে সমর্থন দিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :