মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক গণেশকে বিসর্জন দেওয়া হয়। এসময় বির্সজন ঘিরে ছিলো বিষাদের ছায়া। এরমধ্যেও আনন্দ দিচ্ছে সনাতনী নারীদের সিঁদুর খেলা। এ সময় একে অপরের গালে মুখে সিঁদুর মেখে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। পাশাপাশি তরুণরাও একে অপরের গালে সিঁদুর মেখে দেন। পূজা শেষে নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে ও পায়ে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়। সিঁদুর খেলা, উল্লাস আর ভারাক্রান্ত মনে কৈলাস যাত্রায় দুর্গাকে বিদায় জানালো লাখো ভক্ত।
রমনা কালীমন্দিরে পুজো দেখতে এসেছেন শিখা কর্মকার। সঙ্গে মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে উনিশা, কলেজ পড়ুয়া ছেলে সুমিত এবং স্বামী নিখিল কর্মকার। গোটা পরিবারের সেকি উচ্ছ্বাস। এবারে নির্বিঘ্ন পুজা উদযাপন করতে পেরে কৃতজ্ঞ। উনিশা উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, মা চলে যাচ্ছে তাতে মন খারাপতো হবেই। তারপরও খুবই ভালো লাগছে। বাবা-মা আর ভাই এক সঙ্গে পুজা দেখতে এসেছি। আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রমনাকালী মন্দিরের বিশাল প্যাণ্ডেলে চলছে উচ্চ ভলুউমে গান আর সেই সঙ্গে নাচ। এযেন তারুণ্যের বাঁধ ভাঙ্গ উল্লাস।
এই মণ্ডপে কথা হয় আশোক দাস এবং রথিন্দ্রনাথ দাস। তারা এসেছেন কলকতা থেকে। তাদের উচ্ছ্বাস বলে দিচ্ছে সম্প্রীতির বাংলাদেশে সকল উৎস বই সার্বজনীন। আশোক বাবু বলেন, বাংলাদেশে এতো জাকজমকপূর্ণ পুজা হয়, তা না আসলে বুঝতে পারতেন না। তাদের ধারণা আমূল পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এতোইটাই বন্ধুপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাউৎসব উদযাপন হয়ে থাকে যা কিনা জানা ছিল না।
শাঁখারীবাজারে এখানে ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়। প্রতিটি মণ্ডপেই সিঁদুর খেলা আর উলু ধ্বনিতে মুখরিত। শেষ মুহূর্তে প্রতিমায় সিঁদুর লাগানো, প্রসাদ খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে মেতে উঠছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠা সিঁথি সেন বলেন, মা আজ চলে যাবে খুব খারাপ লাগছে। আজকের বিষাদের মাঝে আমাদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব এটি।
মণ্ডপের অন্য নারীরা জানান, সিঁদুর হলো উৎসবের রং। এই পাঁচদিন আনন্দের শেষ ছিল না। ঢাকার প্রতিটি মণ্ডপে ঘোরাঘুরি করেছি। সব জায়গায় পূজা দিয়েছি। মা একেক জায়গায় একেক রূপে আসেন। বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখার মজাই আলাদা।
তারা আরও জানান, সিঁদুর একটি ঐতিহ্য। স্বামীর মঙ্গল কামনা করা হয়। বিবাহিত, অবিবাহিত সবাই এই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন।
জানা যায়, শুধু সিঁদুর নিয়ে খেলাই নয়, বড়দের পায়ে প্রণাম করে, শাখা-সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো হয়। একে অপরকে মিষ্টি উপহার দেয়। দেবী পূজা সম্পন্ন হয় বিসর্জন পূজার সঙ্গে। তারপর দেবী বরণ করা হয়, যেখানে বিবাহিত নারীরা দেবীকে বিদায় জানান। তারা সাধারণত লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরেন।
একুশে সংবাদ/এএইচভি/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :