গুনাহের পর তওবা করা একজন প্রকৃত মুমিনের গুণ। মানুষের মাঝে গুনাহের পর তওবা করার এবং আপন রবের কাছে ফিরে যাওয়ার ক্ষমতা আছে বলেই আল্লাহ তায়ালা তাকে সৃষ্টি করেছেন। এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। -(মুসলিম, হাদিস, ২৭৪৮)
এজন্য পাপের পর চুপচাপ বসে না থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদেরও ভালোবাসেন যারা পবিত্র থাকে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ২২২)
অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত, ৭০)
তবে অনেক সময় তওবা করবো করবো করেও তওবা করা হয়ে উঠে না, তবে কিছু কিছু ভাবনা মানুষকে তওবা করতে সাহায্য করবে। এখানে এমন কিছু ভাবনার কথা তুলে ধরা হলো-
>> আল্লাহ তায়ালার শক্তিমত্তা ও ক্ষমতার বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে। তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিতে পারেন, এই অনুভূতি নিজের ভেতরে থাকতে হবে। তাহলে তা তওবা করতে সাহায্য করবে। এজন্য বুজুর্গ আলেমরা বলে থাকেন, ‘কেমন গুনাহ করেছো, তা না দেখে বরং দেখো তুমি কার বিরুদ্ধে গুনাহ করছো’।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কি হলো যে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব আশা করছো না, অথচ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।’ (সূরা নূহ, আয়াত, ১৩-১৪)
>> মানুষের উচিত মৃত্যু ও মৃত্যু যন্ত্রণার কথা স্মরণ করা। ভাবা উচিত কতটা নিঃসঙ্গ আর একাকী হবে কবর!
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণভাবে বদলা পাবে। (সূরা আল ইমরান, আয়াত, ১৮৫)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে। কেউ এটাও জানে না কোথায় তার মরণ হবে। ( সূরা লোকমান, আয়াত, ৩৪)
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, সকালে তুমি আরেকটি সন্ধ্যা আর সন্ধ্য্যায় তুমি আরেকটি সকাল পাবে এমন আশা করো না।
>> ভেবে দেখা উচিত, পরকালের জন্য করা আমল ও কাজের মাধ্যমেই দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর জীবন অল্প কিছু মুহুর্ত মাত্র, পরকালের জীবন অনন্ত, অসীম, যা শেষ হবার নয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ, তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত তার সন্তুষ্টি জন্য কঠিন পরিশ্রম করো। ( সূরা আল ইনশিকাক, আয়াত, ৬)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তাহলো পানির মতো, যা আমি আকাশ থেকে নাজিল করি। এরপর সংমিশ্রণে সবুজ শ্যামল ভুমিজ লতাপাতা নির্গত হয়। তারপর তা এমন শুষ্ক চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এসব কিছুর ওপর শক্তিমান। (সূরা কাহাফ, আয়াত, ৪৫)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য, সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাকে প্রতারণায় না ফেলে। সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে ধোঁকা দিতে না পরে।’ (সূরা আল ফাতির, আয়াত, ৫)
>> মনে রাখতে হবে, কিছু গুনাহের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দিয়ে থাকেন এবং যেকোনো মুহুর্তে দিতেন পারেন। এমন ভাবনা গুনাহ থেকে বেঁচে তওবার প্রতি আগ্রহী করবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অবিচার করেননি। বরং তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে। ( সূরা নাহল, আয়াত, ৩০)
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :