মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে নবম হিজরি থেকে। এর আগে তৎকালীন লোকেরা নিজস্ব নিয়মে হজ পালন করতেন। হজ নবম হিজরিতে ফরজ হলেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সময়কাল থেকে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, এবং মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে (সওয়ার হয়ে), তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ, আয়াত, ২৭)
হজের বিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ। হজ ফরজের জন্য প্রাধানত পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এই শর্তগুলো কারো মাঝে পাওয়া গেলে তার জন্য হজ ফরজ।
শর্তগুলো হলো—
এক. মুসলমান হওয়া। দুই. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া। তিন. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। চার. স্বাধীন হওয়া। পাঁচ. সামর্থ্য থাকা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, `মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।` (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)।
তবে নারী-পুরুষের হজ ফরজ হওয়ার শর্তের মাঝে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে পার্থক্যকারী বিধানটি হলো অন্যসব শর্তের সঙ্গে সঙ্গে মাহরাম থাকা।
ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে—
পুরুষের মতো আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যবান হলেই নারীর ওপর হজ ফরজ হয় না, বরং নারীর জন্য কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। আর তাহলো— হজের সফরে নারীর সঙ্গেস্বামী বা মাহরাম থাকা। মাহরাম ছাড়া নারীদের হজে গমন শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়, এতে হজ মাকরুহের সঙ্গে আদায় হয়ে গেলেও মহিলা গুনাহগার হবে। (আল জাওহারা: ১/১৫০)
মাহরামের হজের খরচ সম্পন্ন করার সক্ষমতা থাকা। শুধু নিজের হজ করার সামর্থ্য থাকলেও নারীর জন্য হজ ফরজ হয় না। তবে, মাহরাম যদি ফরজ হজ করতে যায়, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে গেলে খরচ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। (বাহরুর রায়েক: ২/৩৩৯)
তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা হলে (পরবর্তী ৩ মাস) ইদ্দত পরিপূর্ণ করা।
বিবাহিত নারীর ফরজ হজের জন্য স্বামীর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে অনুমতি নেওয়া মুস্তাহাব।
স্বামী যদি স্ত্রীর হজের যাবতীয় খরচ বহনের সক্ষমতা অর্জন করেন, এতে স্ত্রীর ওপর হজ ফরজ হয় না। স্ত্রীর যদি নিজ মালিকানায় হজ ফরজ হওয়ার মতো সম্পদ থাকে, তাহলেই নারীর ওপর হজ ফরজ হবে।
তবে, স্বামী যদি স্ত্রীর হজের সকল ব্যয়ভার বহন করে স্ত্রীকে হজ করান, এতে স্ত্রীর হজের ফরজিয়াত শেষ হয়ে যাবে।
নারীরা অন্য নারীর সঙ্গে মিশে হজ করতে পারবে না। টাকার ব্যবস্থা থাকার পরও উপযুক্ত মাহরাম না থাকায় হজ করতে না পারলে বদলি হজের অসিয়ত করে যাবে। মৃত্যুর পর তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা তা আদায় করা হবে। নারীর ওমরার ক্ষেত্রেও এই শর্তগুলোই প্রযোজ্য।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :