বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য জিলহজ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। বিশেষ করে এই মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ ফজিলতের। এই দশকে নফল রোজার গুরুত্ব অনেক বেশি। হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো ৪টি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো- আশুরার রোজা, জিলহজের ১০ দিনের রোজা, প্রত্যেক মাসে ৩ দিনের রোজা ও ফজরের পূর্বের ২ রাকাত নামাজ। (আহমদ: ৬/২৮৭, আবু দাউদ: ২১০৬, নাসায়ি: ২২৩৬)
বিশেষ করে ৯ জিলহজ তথা আরাফার দিন রোজা রাখলে আগে-পরে ২ বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের (৯ জিলহজের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের ১ বছরের এবং পরের ১ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন’। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
রোজা ছাড়াও জিলহজের প্রথম দশকে অন্যান্য নেক আমলেরও বিশেষ মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়’। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না’। (আবু দাউদ: ২৪৩৮, বুখারি: ৯৬৯)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই’। (সহিহ ইবনে হিববান: ২৮৪২)
জিলহজ মাসের এত মর্যাদার কারণ হলো- জিলহজ মাসে কয়েকটি মহান ইবাদত রয়েছে। যেমন- ইয়াওমে আরাফা; এটি ক্ষমা ও মাগফেরাতের দিন, জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। এছাড়াও এতে রয়েছে কোরবানির দিন। কোরবানি আল্লাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। (তিরমিজি: ৮৯৩; নাসায়ি: ৩০১৬; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৮৬৬)
হাফেজ ইবনে হাজর (রহ.) ফাতহুল বারি গ্রন্থে বলেন,‘জিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ হলো, এতে সব মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা: সালাত, সিয়াম, সদকা, হজ ইত্যাদি। অন্যকোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না’। (ফাতহুল বারি: ২/৪৬০)
অতএব, এমন মর্যাদাপূর্ণ দিনগুলোতে এমন আমল বেশি করা উত্তম, যার সমকক্ষ কোনো আমল নেই। আর সেটি হলো রোজা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবীজি (সা.)-কে বলেন- يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِأَمْرٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهِ قَالَ عَلَيْكَ بِالصِّيَامِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ
অর্থ: ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমকক্ষ (মর্যাদা সম্পন্ন) কোনো ইবাদত নেই’। (নাসায়ি: ২২২১)
বিশেষ করে জিলহজের ৯ তারিখের রোজা যেন কোনো ক্রমেই বাদ পড়ে না যায়, সেই চেষ্টা থাকা আমাদের উচিত হবে। ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে জিলহজের নফল রোজাগুলো রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :