AB Bank
  • ঢাকা
  • বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রমজান মাস জাকাত আদায়ের উত্তম সময়


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
০২:১০ পিএম, ১১ মার্চ, ২০২৫
রমজান মাস জাকাত আদায়ের উত্তম সময়

জাকাত ইসলামের অন্যতম মূল স্তম্ভ এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত। এটি সম্পদের পবিত্রতা বিধান করে এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। জাকাত কেবল আর্থিক লেনদেন নয়; এটি মানবসেবার এক অনন্য মাধ্যম। জাকাত আদায়ের জন্য রমজান মাসকে সর্বোত্তম সময় হিসেবে গণ্য করা হয়, কারণ এ মাসে দান-সদকার গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়, এবং এর মাধ্যমে অধিক সওয়াব ও বরকত লাভ করা সম্ভব।

রমজানে জাকাত আদায়ের ফজিলত

রমজান মাস হলো বরকতময়, রহমতের ও মাগফিরাতের মাস। এই মাসে প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি এই মাসে একটি নফল আমল করে, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আমল আদায় করল; আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। তা ছাড়া রমজানে সমাজের দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। জাকাত এই দুঃস্থ মানুষের জন্য এক বিরাট সহায়তা হতে পারে। বিশেষ করে ঈদের সময় যেন সবাই আনন্দ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য রমজানে জাকাত দেওয়া উত্তম।

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বদা দানশীল, কিন্তু রমজানে তিনি আরও বেশি দান করতেন। হাদিসে এসেছে,

عن عبد الله بن عباس رضي الله عنه قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أجود الناس، وكان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه جبريل، وكان يلقاه في كل ليلة من رمضان فيدارسه القرآن، فلرسول الله صلى الله عليه وسلم أجود بالخير من الريح المرسلة.
)بخاري، كتاب الصيام، حديث 6؛ مسلم، كتاب الصيام، حديث 1154(

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি, আর তিনি রমজানে আরও বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন। (বুখারি ৬; মুসলিম ১১৫৪)
 


আত্মশুদ্ধির মাস রমজান

জাকাত কেবল দান করা নয়, বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি এবং সম্পদের পবিত্রতারও মাধ্যম। আর রমজানও আত্মশুদ্ধির মাস। তাই এই মাসে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে আত্মা আরও পরিচ্ছন্ন হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,


خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۝۱۰۳ তাদের সম্পদ থেকে সদকা (জাকাত) গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। সুরা তাওবা : ১০৩

বার্ষিক হিসাবের সুবিধা

রমজান মাস বার্ষিক হিসাবের জন্য একটি সুবিধাজনক সময়। পুরো বছরের উপার্জনের হিসাব করে রমজানে জাকাত প্রদান করা অত্যন্ত সহজ হয়, এবং এতে নিয়মিত জাকাত দেওয়ারও অভ্যাস গড়ে ওঠে।

যদিও ইসলামে নির্দিষ্ট কোনো মাসে জাকাত দেওয়ার শর্ত নেই, তবে রমজানে জাকাত আদায় করা অধিক সওয়াব ও বরকতের কারণ। রমজান হলো দানশীলতার মাস, আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের মাস, এবং দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর সেরা সময়। তাই আমাদের উচিত এই মাসকে জাকাত দেওয়ার এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা, যাতে আমাদের সম্পদ পরিশুদ্ধ হয় এবং আমাদের সমাজ আরও মানবিক ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে।

এবার জেনে নেওয়া যাক জাকাত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসাআলা:

জাকাত একদিকে আল্লাহর হক, অন্যদিকে তা বান্দারও হক। আমাদের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানুষ সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে না। অথচ কুরআনে ও হাদিসে সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আবার অপরদিকে যে সকল মানুষ জাকাত দেয়, তারাও সবাই সঠিকভাবে তার হিসাব করে না। তাই আমাদের উচিত জাকাদের মাসআলা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা এবং সঠিকভাবে জাকাত আদায় করা। তাই জাকাত সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা তুলে ধরা হলো:

১. জাকাতআবশ্যক হওয়ার শর্তসমূহ
জাকাত আবশ্যক হওয়ার জন্য রয়েছে কিছু শর্ত। কারো মাঝে নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার উপর জাকাত আবশ্যক:
• মুসলমান হওয়া।
• স্বাধীন হওয়া।
• নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
• সম্পদের উপর এক বছর অতিক্রম করা। বছর পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রবর্ষের হিসাব ধর্তব্য, সৌর বর্ষের নয়।
• উক্ত সম্পদ মৌলিক চাহিদা পূরণের পর প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া।

২. নিসাব পরিমাণ সম্পদ কতটুকু?
সাধারণভাবে জাকাতের হার হলো ২.৫%, অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা। আর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদ (নিসাব) নির্দিষ্ট পরিমাণ হতে হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো:-
• স্বর্ণের ক্ষেত্রে জাকাতের নিসাব হল বিশ মিসকাল। -সুনানে আবু দাউদ ১/২২১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদিস ৭০৭৭, ৭০৮২।আধুনিক হিসাবে সাড়ে সাত ভরি।

• রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হল দু’শ দিরহাম। বুখারি ১৪৪৭;  মুসলিম, ৯৭৯। আধুনিক হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। এ পরিমাণ সোনা-রুপা থাকলে জাকাত দিতে হবে।
• প্রয়োজনের উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা বা বাণিজ্য-দ্রব্যের মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় তাহলে জাকাতের নিসাব পূর্ণ হয়েছে ধরা হবে এবং এর জাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাস ৯৯৩৭

• যদি সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্য-দ্রব্য- এগুলোর কোনোটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু এসবের একাধিক সামগ্রী এ পরিমাণ রয়েছে, যা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে সকল সম্পদ হিসাব করে জাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদিস ৭০৬৬,৭০৮১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৯৩

৩. জাকাত প্রদানের যোগ্য খাতসমূহ

কুরআনে (সূরা তাওবা: ৬০) আট শ্রেণির লোককে জাকাত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে:
• ফকীর – যার ন্যূনতম প্রয়োজনও মেটে না।
• মিসকীন – যার চাহিদা আছে, কিন্তু ফকীরের চেয়ে ভালো অবস্থানে।
• জাকাত আদায়কারীরা – যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণে নিয়োজিত।
• নতুন মুসলিমরা – যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন।
• দাস মুক্তির জন্য – যারা দাসত্ব মুক্ত করতে চায়।
• ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি – যারা হালাল কাজে ঋণগ্রস্ত হয়েছে।
• আল্লাহর পথে – জিহাদ বা দ্বীনি কাজে নিযুক্ত যারা।
• মুসাফির – যারা সফরে আর্থিক সংকটে পড়েছে।
 

৪. যাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে না

নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের জাকাত দেওয়া যায় না:
• নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানী।
• নিজের সন্তানাদি ও নাতি-নাতনি।
• স্বামী-স্ত্রীও একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না।

জাকাত ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ। এটি সম্পদের পবিত্রতা আনয়ন করে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখে। যারা জাকাত দেয় না, কুরআন ও হাদিসে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে (সূরা তাওবা: ৩৪-৩৫)। তাই নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে অবশ্যই জাকাত আদায় করা উচিত। আল্লাহ আমাদেরকে শরিয়তের বিধান মতে জাকাত আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ, মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

 

একুশে সংবাদ/স.ট/এনএস

Link copied!