AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও করণীয় আমলসমূহ


Ekushey Sangbad
মোঃ আল যাবিদ হাসান
০৭:৫৪ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২৫
লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও করণীয় আমলসমূহ

লাইলাতুল কদর ইসলামের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাতগুলোর একটি। এটি এমন এক বরকতময় রাত, যা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে এই রাতের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও মাহাত্ম্য
১️. এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম
আল্লাহ তাআলা বলেন—لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌۭ مِّنْ أَلْفِ شَهْر
"লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।" (সূরা আল-কদর: ৩)

হাজার মাস মানে প্রায় ৮৩ বছর ৪ মাস। অর্থাৎ, এই রাতে ইবাদত করলে ৮৩ বছরের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।

২️. গুনাহ মাফ ও ক্ষমার সুযোগ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—"যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।"(বুখারি: ২০১৪, মুসলিম: ৭৬০)

৩️. ফেরেশতাদের আগমন ও শান্তির বার্তা
আল্লাহ বলেন—"সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল আ.) অবতীর্ণ হন, তাদের রবের আদেশক্রমে, সমস্ত কল্যাণ নিয়ে। এটি শান্তিতে ভরা রাত, যা ফজরের আগ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।" (সূরা আল-কদর: ৪-৫)

এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসেন, এবং মুসলমানদের জন্য রহমত ও বরকত নিয়ে আসেন।

৪️. তাকদির নির্ধারণের রাত
আল্লাহ বলেন—"এই রাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়।(সূরা আদ-দুখান: ৪)

অর্থাৎ, মানুষের জীবন, মৃত্যু, রিজিক, রোগ-বালাইসহ অনেক বিষয় এই রাতে নির্ধারিত হয়।

লাইলাতুল কদর কখন হয়?
লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট তারিখে নয়, তবে এটি রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) হয়ে থাকে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
"তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।"(বুখারি: ২০১৭, মুসলিম: ১১৬৯)

বিশেষ করে ২৭তম রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে অন্য বিজোড় রাতগুলোতেও গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা উচিত।

লাইলাতুল কদরের আমলসমূহ
১️. নফল নামাজ আদায় করা
বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

নফল নামাজের নিয়ম:২ রাকাত করে যত ইচ্ছা পড়া যায়।
নামাজে দীর্ঘ কিয়াম ও সিজদায় বেশি সময় থাকা উত্তম।

২️.দোয়া ও ইস্তিগফার
লাইলাতুল কদরে সবচেয়ে উত্তম দোয়া হলো—اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ:
"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।"
অর্থ:
"হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।"(তিরমিজি: ৩৫১৩)
এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া উচিত, কারণ এটি রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া।

৩️. কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআন পাঠ করা লাইলাতুল কদরের অন্যতম সেরা আমল।
সূরা কদর, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।

৪️. দরুদ শরিফ পাঠ করা
রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
উত্তম দরুদ:
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد

৫️. তওবা করা ও গুনাহ থেকে মুক্তির আবেদন
এই রাতে অতীতের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—"তোমরা গুনাহ থেকে তওবা করো, কেননা আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন।"

৬️. দান-সদকা করা
এই রাতে দান করলে হাজার মাসের দানের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়।
দরিদ্রদের সহায়তা করা, মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা উত্তম আমল।

লাইলাতুল কদরের আলামত (নিশ্চিত হওয়ার লক্ষণ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

১️. শান্ত ও নির্মল রাত:
সে রাতে কোনো অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম অনুভূত হয় না।

২️. প্রশান্তিদায়ক আকাশ:
আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার থাকবে, চাঁদের আলো হবে কোমল ও মিষ্টি।

৩. বাতাস হবে প্রশান্তিদায়ক:
বাতাস থাকবে মৃদু ও মনোরম।

৪️. পরের দিনের সূর্য:
লাইলাতুল কদরের পরের দিন সকালে সূর্য উজ্জ্বলতা ছাড়াই কোমল ও শান্তভাবে উদিত হবে।

(মুসলিম: ৭৬২, তিরমিজি: ৩৩৫৮)

উপসংহার
লাইলাতুল কদর আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। এই রাতে আল্লাহ আমাদের জন্য অসংখ্য রহমত, বরকত এবং গুনাহ মাফের সুযোগ দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত—
রাতটি যথাযথভাবে ইবাদতে কাটানো,বেশি বেশি তওবা ও ইস্তিগফার করা,নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও দান-সদকা করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

একুশে সংবাদ// এ.জে

Link copied!