AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আগামীকাল পবিত্র আশুরা


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৮:৫২ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২৪
আগামীকাল পবিত্র আশুরা

 আজ ১০ মহরম পবিত্র আশুরার দিন।ঐতিহাসিক কারবালার ঘটনায় মহররম মাস আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। আরবি বর্ষের প্রথম মাস, অর্থাৎ মহরম মাসের ১০ তারিখ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি আশুরা হিসেবে পরিচিত। ইসলামি বর্ষপঞ্জিতে যে চারটি মাস মুসলিমদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে মহররম অন্যতম। ১০ই মহররম দিনটিকে ‍‍`বিশেষ মর্যাদার‍‍` দৃষ্টিতে দেখে মুসলিমরা। ইসলামের ভেতর দুটি মত - সুন্নি এবং শিয়া - উভয়ের কাছেই আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই নানা ঘটনা প্রবাহের ঐতিহ্য বহন করে আসছে পবিত্র মহররম মাস।

১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন হজরত হোসাইন (রা.)। হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম তাৎপর্যমণ্ডিত একটি মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। আসমান-জমিন সৃষ্টিসহ পৃথিবীতে অনেক স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা এ মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ পবিত্র আশুরার দিন সংঘটিত হয়েছিল।

 আকাশ জমিন পাহাড়-পর্বত সব কিছু সৃষ্টি। আদম (আ.)-এর সৃষ্টি ।  নূহ (আ.) মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ। হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ।  দীর্ঘ ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আ.)-এর দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ।  হজরত সুলাইমান (আ.)কে পৃথিবীর রাজত্ব দান। হজরত ইউনুস (আ.)কে ৪০ দিন পর দজলা নদীতে মাছের পেট থেকে উদ্ধার। হজরত মূসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা।  হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন। হজরত ইদ্রিস (আ.)কে আসমানে উত্তোলন।

 হজরত দাউদ (আ.)কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত।  খায়বার যুদ্ধের বিজয় অর্জন। মাদায়েন এবং কাদিসিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন। হজরত আদম (আ.)-এর জান্নাতে প্রবেশ। হজরত আদম (আ.)কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ এবং গুনাহ মার্জনার পর তার সঙ্গে হাওয়া (আ.)-এর পুনঃসাক্ষাৎ লাভ। হজরত নূহ (আ.)কে তুফান ও প্লাবন থেকে পরিত্রাণ প্রদান।  হজরত সোলায়মান (আ.)কে হারানো বাদশাহি ফিরিয়ে দেওয়া।  হজরত ইয়াকুব (আ.) কর্তৃক হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে মদিনা শরিফে আগমন। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার ৭৭ ঘনিষ্ঠজন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের সৈন্য কর্তৃক কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ।

ইসলামি চিন্তাবিদরা বলছেন নবী মোহাম্মদের সময় থেকে মুসলিমরা ১০ই মহররম পালন করতো। এর পেছনে নানা ধর্মীয় বিশ্বাস নিহিত ছিল। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে, যেটি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কেয়ামতের দিন। ৬৮০ সালে এই দিনে বর্তমান ইরাকের কারবালা নামক স্থানে ইসলামের নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র হোসাইন ইবনে আলীকে, যিনি ইমাম হোসাইন নামে পরিচিত, প্রতিপক্ষ হত্যা করে। এরপর থেকে এই ঘটনাটিও যুক্ত হয় আশুরা পালন করার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে শিয়া মতাবলম্বীরা এই ঘটনাটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সুন্নি মতাবলম্বীদের কাছেও এই ঘটনাটি গুরুত্ব বহন করে।

মুসলিমদের অনেকেই আশুরারা দিন রোজা রাখেন। অনেকে আশুরার আগের দিন এবং পরেরদিনও রোজা পালন করেন। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে রমজান মাস চালুর আগে আশুরার দিন রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক ছিল। সুন্নি মুসলিমদের অনেকেই ১০ই মহররম বাড়িতে ভালো খাবারের আয়োজন করেন। বাংলাদেশে অনেকের মাঝে এই প্রথা প্রচলিত আছে। কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, আশুরার দিনে ভালো খাবারের আয়োজন করতেই হবে - এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

 মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, এই দিনটিতে ইসলামের নবী মোহাম্মদ (স:) এর পরিবারের যেসব সদস্য মারা গেছেন তাদের জন্য দোয়া পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সুন্নি এবং শিয়া মতাবলম্বীদের অনেকেই বাড়তি নামাজ আদায় করেন। তবে সুন্নি মুসলিমদের চেয়ে শিয়া মুসলিমরা আশুরার দিনটিকে যেভাবে পালন করেন সেটি বেশ চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন জায়গায় তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিয়া মতাবলম্বীরা তাদের নিজেরে শরীরে ছুরি মেরে কষ্ট অনুভব করেন। তাদের বিশ্বাস নবী মোহাম্মদের দৌহিত্র হোসাইনকে হত্যার সময় যে তিনি যে কষ্ট পেয়েছিলেন, তারাও নিজেদের পিঠে ছুরি মেরে সে কষ্ট অনুভবের চেষ্টা করেন। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। বাংলাদেশে যেসব তাজিয়া মিছিল বের হয় সেখানে প্রচুর সুন্নি মতাবলম্বীরাও অংশ নেয়। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ১০ই মহররমকে সরকারিভাবে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। এদিন সরকারি ছুটিও থাকে সবসময়। নিজের বুকে সজোরে চাপর মারতে মারতে আর ‍‍`ইয়া হোসেন ইয়া হোসেন‍‍` শ্লোগান দিতে দিতে সড়ক ধরে এগিয়ে যায় হাজার হাজার তরুন,যুবক। তাদের খালি পা। পরনে কালো পোশাক।

পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে শুরু হয় মিছিল। এগিয়ে যায় মূল সড়কের দিকে। এটি মহররমের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল। মিছিলে অংশ নেয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু। বাংলাদেশের শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য এরা। অনেকের হাতে থাকে বিশাল দণ্ড, তাদের মাথায় ব্যানার কিংবা পতাকা। মিছিলে যারা অংশ নেন তাদের কাছে এটির নাম ‍‍`আলম‍‍`।পথের দু’ধারে দাড়ানো নারী পুরুষেরা বুকে চাপর দিয়ে ‍‍`ইয়া হোসেন‍‍` ‘ইয়া হেসেন শ্লোগানের সাথে সুর মেলায়। মিছিলের পেছনে ‍‍`দুলদুল‍‍` নামে সুসজ্জিত ঘোড়াটিকে টেনে নিয়ে আসা হয়। সেটির পায়ের উপর  ঝাঁপিয়ে পড়েন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই। কেউ কেউ ঘোড়াররপদচুম্বন করেন। কেউবা হাতের বোতল থেকে দুধ ঢেলে ধুইয়ে দেন ঘোড়াটির পা। দীর্ঘ মিছিলের সময় সড়কের দুপাশের বাড়িগুলোর ছাদও ভরে যায়।

একুশে সংবাদ/হা.কা/হা.কা

 

 

 

Link copied!