- অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা কোনো ছাড় নয়।
-স্কোয়ড্রন লীডার তারেক, কোম্পানি কমান্ডার, কেরানীগঞ্জ ক্যাম্প, র্যাব-১০
- আবাসিক ভবনে গোডাউন করতে পারবে না।
-মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার করানীগঞ্জ
- আবাসিক ভবনে কেমিক্যালের গোডাউন পেলেই ব্যবস্থা।
-শাহীন আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, কেরানীগঞ্জ
কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই, সরকারী কোনো লাইসেন্স ছাড়াই কেরানীগঞ্জের আতাসুর মসজিদ আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে রাসায়নিক কেমিক্যালের গুদাম। পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম এখানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এ সব রাসায়নিক গুদামে ভয়ানক বিস্ফোরণ আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ। রবি’র সিন্ডিকেটের কব্জায় কেরানীগঞ্জে কেমিক্যালের গুদাম গুলো বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেই নেমে আসে নির্যাতন।
রবি বলেন, আপনি যা ইচ্ছে তাই লিখেন। স্থানীয় প্রশাসন আমার লোক। তাই যতই লিখেন কিছু হবে না। আমার ক্ষমতা আর টাকা দুই আছে। কিছু চিন্তা করছি না। কেরানীগঞ্জের কেমিক্যাল ব্যবসা আমার নিয়ন্ত্রনে।
স্থানীয়দের দাবি, এখনই যদি কেমিক্যালের গোডাউনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় তাহলে যেকোনো মুহূর্তে গুলিস্থানের মতো অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই লাগাম টানতে হবে এখনই।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্র বলছে, কেরানীগঞ্জের মাদ্রাসার সামনের ডানে গলির ভিতর আবাসিক ভবনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সরকারী লাইসেন্স ছাড়াই নাইট্রিক এসডি, ফসফরিক এসিড, হাইড্রোফ্লুরিক এসিড মজুদ ও বিক্রি করার ফলে যে কোন সময় ঢাকার নিমতলী ও আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র বলছে, কেরানীগঞ্জে অবৈধ কেমিক্যাল ব্যবসা করছে রবিউল ইসলাম রবি। এছাড়া আলমাস, ইমন, ইয়াসিন, জনি, আজাদ, আসামসহ বেশ কয়েকজন মিলে অবৈধভাবে সোডিয়াম সালফেট বা লবন মিশিয়ে এবং নকল নাইট্রিক এসিড, ফসফরিক এসিড, হাইড্রোফ্লরিক এসিড ডেজাগ করে কেমিক্যাল ব্যবসা করছে।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চক বাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় প্রায় ৮০ জন নিরীহ মানুষ মারা যায়। কয়েকটি সংস্থার প্রতিবেদনে জানা যায়, চুড়িহাট্টায় যে পাঁচটি ভবন আগুনে পুড়ে যায় তার প্রতিটিতেই কেমিক্যালের গোডাউন ছিল। গুদামগুলোর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন এত ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।
এ ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে অভিযানে নামে সিটি করপোরেশন। অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা বাঁচানোর লক্ষ্যে পুরান ঢাকার কাছাকাছি কেরানীগঞ্জে গোপনে কারখানা স্থানান্তর করেন।
কেরানীগঞ্জের অনেক ভবন মালিকরা মোটা অঙ্কের অর্থের লোভে ও অতিরিক্ত অগ্রিম ভাড়া পেয়ে কোন নিয়ম নীতি ও ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই আবাসিক এলাকায় কেমিক্যালের গোডাউন ভাড়া দিচ্ছে।
গুদামের আশপাশের লোকজন জানান, দিনের বেলা কখনোই এ গুদামগুলো খোলা হয় না। রাতের আঁধারেই মাল আনা নেয়া করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেমিক্যালের গোডাউন গুলোতে রাতের আঁধারেই কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে মাল আনা-নেয়া করা হয়, এ কারণেই এলাকাবাসী এ সমস্ত গোডাউন সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখে না।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই কম বেশি কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে। কতগুলো গোডাউন রয়েছে তা নিয়ে ধারণা নেই এলাকাবাসীর, তবে অধিকাংশ গোডাউন ২০১৯ সালের চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পরেই স্থানান্তর করা হয়েছে বলে অনেকের অভিমত।
আতাশুর এলাকার বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, এই এলাকায় যে কয়টি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে তা অধিকাংশ রবিউল ইসলাম রবি’র। প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। না হলে এই আতাশুরে ঘটবে ভহাবহ দুর্ঘটনা।
কালন্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নুর উদ্দিন জানান, আমাদের ইউনিয়নেও বেশ কয়েকটি কেমিক্যালের গোডাউন আছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ফয়সল বিন করিম বলেন, পরিষ্কার ভাবেই বলতে চাই আবাসিক এলাকায় কোন গুদামঘর রাখতে দেয়া হবে না। উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারটি নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, আবাসিক ভবনে কারো কেমিক্যালের গোডাউন করার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
র্যাব-১০ কেরানীগঞ্জ ক্যাম্প কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়ড্রন লিডার তারেক বলেন, ‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা, কোনো ছাড় নয়। আবাসিক এলাকায় কোনো কেমিক্যালের গোডাউন করা যাবে না।’
একুশে সংবাদ.কম/ন.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :