ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আমদানি করা জ্বালানি তেলের মূল্য কিস্তিতে শোধ করছে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ বাকি আছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার।
সোমবার (২২ মে) এ কথা জানান বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) মনি লাল দাস।
তিনি বলেন, `ডলার সংকটের কারণে আমরা সরবরাহকারীদের পেমেন্ট কিস্তিতে কিস্তিতে দিচ্ছি।`
গতকাল সোমবার পর্যন্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ বাকি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, `বর্তমান পরিস্থিতিতে সরবরাহকারীরাও বিলম্বিত পেমেন্ট নিচ্ছে।`
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ডলার সংকটে আমদানি করা জ্বালানির মূল্য শোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানিটি। কয়েকটি চিঠিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, বিভিন্ন জ্বালানি সরবরাহকারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানির কাছে ৩০০ মিলিয়ন পায়। পাশাপাশি সংস্থাটির জ্বালানির মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ও বাজারতজাতকরণের পুরো নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) হাতে। স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভারত থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেলের দাম রুপিতে নিষ্পত্তির অনুমতি দিতে সরকারকে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।
সূত্র আরও জানায়, `গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের ডলারের মজুত কমেছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি। ১৭ মে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০.১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা গত সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
`জ্বালানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর। জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎবিভ্রাটে ভুগছে দেশ। এর নেতিবাচক পড়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে।`
গত ৯ মে-র একটি চিঠিতে দেখা গেছে, বিপিসি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে লিখেছে, `স্থানীয় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা/ডলার সংকটের কারণে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী মার্কিন ডলার না দেওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সময়মতো আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না।`
এর আগে গত এপ্রিলের এক চিঠিতে বলা হয়েছিল, `মে-র জন্য প্রস্তুতকৃত আমদানি শিডিউল অনুসারে জ্বালানি আমদানি করা সম্ভব না হলে সারা দেশে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি জ্বালানির মজুত আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।`
বিপিসি প্রতি মাসে ৫ লাখ টন পরিশোধিত তেল এবং ১ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বলে জানায় সূত্রটি।
এপ্রিলের চিঠিতে বলা হয়, কয়েকটি জ্বালানি সরবরাহকারী নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কমসংখ্যক কার্গো পাঠিয়েছে কিংবা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
যেসব সরবরাহকারী টাকা পায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিনোপেক-এর আওতাধীন ইউনিপেক, ভিটল, ইনক, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লি. (আইওসি), পেট্রোচায়না এবং ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি।
বিপিসির একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, `কয়েকটি কোম্পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, অন্যরা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম কার্গো পাঠাচ্ছে।`
মে মাসের ওই চিঠি থেকে জানা গেছে, এ বছর ডিজেল আমদানির জন্য ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডকে ৪১.১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে বিপিসিকে। আর ডিজেল ও জেট ফুয়েলের জন্য বিপিসির কাছে আইওসির পাওনা ১৪৭.২ মিলিয়ন ডলার।
বিপিসি সরকারকে অনুরোধ করেছে জাতীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যেন ভারতীয় কোম্পানিগুলোর পাওনা রুপিতে নিষ্পত্তি করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বেশ অনেক বছর ধরে ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি বিল ও চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে গেছে।
এ বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে।
একুশে সংবাদ/আ.ও.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :