“১৮ দিন কেটে গেলেও আমদানি ডিমের দেখা নেই বাংলাদেশের বাজারে”
“১০ কোটি ডিম আমদানি করতে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দিলেও এলসি খুলে মাত্র একটি”
পৃথিবীতে যে কয়টি খাদ্যকে সুপার-ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ডিম। বাংলাদেশে গত ২০২২ সালে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে ৩০৭ শতাংশেরও বেশি। অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে ডিমের বাৎসরিক প্রাপ্যতা মাথাপিছু ১৩৬টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার সংখ্যা ছিল ১২১ জনের বেশি। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ১৩৬ জনে। একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য বছরে অন্তত ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে কাঙ্খিত পুরো ডিম ওঠছে না অনেকের পাতে।
কিন্তু বাংলাদেশে পর্যাপ্ত ডিম উৎপাদনের পরও ডিমের বাজারে অস্থিরতা কেন? একজন মানুষের আদর্শ খাবার এখন কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কবলে! তাদের ইচ্ছে মাফিক ডিমের বাজার পরিচালিত হচ্ছে। বিগত আগস্ট মাসে প্রতি পিস ডিমের দাম ওঠে ১৪ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ১৬ টাকা ৬৬ পয়সা পর্যন্ত। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের বাজেটে টান পড়ে। যে পরিবারে জনপ্রতি একটি ডিম খেতো, তারা অর্ধেক ডিম খেয়ে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকা ১৬ পয়সা। অচথ পরশি দেশ ভারতে প্রতিটি ডিমের দাম ৬ টাকা। পাইকারী বাজারে আরও কম।
বাংলাদেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় ৪ এবং পরবর্তীতে আরও ৬টি মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ কোটি ডিম আমদানির ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু এতদিনেও কোন ডিম আমদানি করা হয়নি। ডিম আমদানির বিষয়ে একাধিক ব্যবসায়ী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কাস্টমসে ৪ রুপিতে যে আসেসমেন্ট করা হয়েছে, আজ পর্যন্ত সেই চিঠি কোনও বর্ডারে যায়নি। ভোক্তাদের কম দামে ডিম খাওয়তে চাই। কিন্তু এ নিয়ে ব্যাংক কোনও নির্দেশনা দেয়নি। আরেক আমদানিকারক বলেন, প্রচুর পণ্যদ্রব্যের ব্যবসা তারা করেন। সেক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা।
অপর দিকে বাংলাদেশে ডিম আমদানির গোরবিরোধীতা করে বাংলাদেশে পোলট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি সরাসরি ‘কর্পোরেট সিন্ডিকেট’কে দায়িক করে বলেন, বাংলাদেশে ডিমের সংকট হতে পারে না। বাংলাদেশে চার কোটির কিছু বেশি ডিমের চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে। সেখানে ডিমের সংকট কেন হবে? ডিমের বাজারের এই অস্থিরতার জন্য কর্পোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ি করেন সুমন হাওলাদার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একুশে সংবাদ.কমকে সুমন হাওয়াদার বলেন, ডিম আমদানি না করে পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করা হলে ডিমের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। আর ডিম আমদানির করা হলে হাজারো প্রান্তিক খামারীরা পথে বসবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ডিমের বর্তমান দাম পাশের দেশ ভারত, চীন, মিয়ানমার কিংবা পাকিস্তান থেকেও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিম আমদানি অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এক সপ্তাহের কথা বলে ১৮ দিনে একটি ডিমও আনতে পারেননি কোনও আমদানিকারক। আমদানিকারকদের দাবি, ঋণপত্র খুলতে না পারায় স্থবির হয়ে আছে আমদানি প্রক্রিয়া। ফলে বাজারে চড়া দামেই ডিম বিক্রি হচ্ছে।
তবে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমদানির অনুমতির ঘোষণার পর তারা বাজারে অভিযান চালিয়েছেন। তাতে বাজারে প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও পাশের দেশের চেয়ে ডিমের দাম বেশি। সেটা কমাতে আমরা কাজ করছি। এমন অবস্থায় দেশে আদৌ বিদেশি ডিম আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মুরগির লাল ডিম ১৫০ টাকা এবং সাদা ডিম প্রতি ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেগুন বাগিচা বাজারের একজন ডিম বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোকাম থেকে ডিম এনে স্বল্প লাভে খুচরা বিক্রি করে থাকেন। এই বিক্রিতাও কর্পোরেট উৎপাদকের দিকে অভিযোগে আঙ্গুল তোলেন। বলেন, কিছু আগে দাম কিছুটা কমেছিল। দুই তিনদিন ধরে ফের দাম বেড়ে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায় পৌছেছে। অথচ সরকার প্রতিটি ডিম ১২ টাকা বিক্রির মূল্য নির্ধারণ কর দেয়। কিন্তু এই দামে বাংলাদেশে কোথাও ডিম পাওয়া যায় না।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ডিম আমদানি করতে ৮ আমদানিকারক অনুমতি নিলেও ঋণপত্র খুলেছে মাত্র ১টি। তা-ও আবার ৬২ হাজার ডিমের বিপরীতে। অথচ অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১০ কোটির! যা নিয়ে সঠিক ব্যাখ্যাও নেই তাদের কাছে।
এর পেছনে নানা যুক্তি দেখানো হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বলছে, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে প্রাইম এনার্জি, অর্ণব ট্রেডিং, বিডিএস করপোরেশনসহ ৮টি প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটি এজন্য আবেদনই করেনি। বিডিএস করপোরেশন নামের প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ৬২ হাজার ডিমের বিপরীতে ঋণপত্র খুলেছে। অথচ ১০টি প্রতিষ্ঠানকে আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে ১০ কোটি পিস ডিম।
সূত্র- কালের সমাজ
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :