পদ্মা সেতু রেলসংযোগ বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাস।
ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে।
ট্রেনগুলোকে অভ্যর্থনা জানাতে উন্মুখ পদ্মা পাড়ের মানুষ।
উন্মুক্ত হচ্ছে অর্থনীতির দক্ষিণ দুয়ার। সকল আয়োজন চূড়ান্ত। ১ নভেম্বর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে সুন্দরবন, বেনাপোল ও মধুমতি ট্রেন ছুটে যাবে গন্তব্যে। সেই সঙ্গে পদ্মাসেতু রেলসংযোগ দিয়ে বাণিজ্যিক ট্রেনযাত্রায় যুক্ত হবে আরও একটি মাইল ফলক। ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণিজ্যিক রেলযাত্রার উদ্বোধন করেন। সেদিন নিজে টিকিট কেটে ট্রেন ভ্রমণ করেছিলেন।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাস। উন্মত্ত পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ নিয়ে বহু ধরণের কেলেঙ্কারী হয়েছে। শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ বন্ধে নানা অপতৎপরতা চালানো হয়েছে। কিন্তু সব কিছুকে ব্যর্থ করে দিয়ে পদ্মা নদীতে উড়ছে উন্নয়নের শঙ্কচিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়ত ব্যবস্থা এখন হাতের মুঠোয়। এমন দিন ছিলো বরিশাল যেতে সময় লাগতো ১২ ঘন্টা। এখন সেখানে সময় লাগছে মাত্র ৩ ঘন্টা।
ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ ব্যবহার করে সুন্দরবন, বেনাপোল ও মধুমতি ট্রেনও প্রস্তুত। ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস রুট পরিবর্তন করে ১ নভেম্বর থেকে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ দিয়ে চলাচল করবে। ২ নভেম্বর ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে। এতে দূরত্ব কমবে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ফরিদপুরে চলাচলকারী মধুমতি ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসা হবে। পর্যায়ক্রমে নতুন রুটে সিডিউলে অন্য ট্রেন অন্তর্ভুক্ত করার কাজ জোর কদমে চলছে। রেলভবন সূত্রের খবর ট্রেন ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
পদ্মা সেতু দিয়ে সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস চলাচলের সময় সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পয়লা নভেম্বর থেকেই ছুটবে বাণিজ্যিক ট্রেনগুলো। এ কারণে চলছে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ ও স্টেশনগুলোর শেষ মুহূর্তের কাজ। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত ভাড়া নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। ট্রেনগুলোকে অভ্যর্থনা জানাতে উন্মুখ পদ্মা পাড়ের মানুষ।
এদিকে বাণিজ্যিক রেলে ভ্রমণ করতে উন্মুখ হয়ে আছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই। ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তে খুশি তারা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ভাড়া কমিয়ে আনার প্রক্রিয়াসহ পয়লা নভেম্বর নতুন এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারে ট্রেন চলবে ২৪’শের জুনে। ভাঙ্গা-যশোর অংশের স্টেশন ১০টি। রেলভবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার নতুন রেল পথের ১০টি স্টেশনের মধ্যে পয়লা নভেম্বর চালু হবে ৬টি স্টেশন। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধন করার পরই কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা রেল স্টেশন পর্যন্ত ৮২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার পথ প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন রুটের সিডিউল অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে বাণিজ্যিক রেল চলাচলের কথা জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
সেতুর দুই পাড়ের রেলপথ এবং রেল স্টেশনগুলো যাত্রী ও মালবাহী দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলে পুরো রেল পথের সিগনালিং সিস্টেম, মার্কিং, স্টেশনগুলোর টিকিটিং, মানসম্মত যাত্রী সেবার অবকাঠামো, ফার্নিচার, লোকবল পদায়ন, সিডিউল তৈরিসহ রেল চালুর সব আয়োজন চূড়ান্তের পথে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথম পর্যায়ে সুন্দরবন, বেনাপোল ও মধুমতি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মধুমতি পদ্মা উত্তর অতিক্রম করে ভাঙ্গা হয়ে যাবে রাজশাহী। আর সুন্দরবন যাবে পদ্মা সেতু হয়ে খুলনা। বেনাপোল এক্সপ্রেস যাবে পদ্মা সেতু হয়ে যশোরের বেনাপোল। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১০টি স্টেশনের সাতটিই নতুন। বাকি তিনটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তবে গেন্ডারিয়া-কেরাণীগঞ্জ উড়াল পথে পাঁচ গুণ এবং পদ্মা সেতুতে ভাড়া ২৫ গুণ করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি তাদের। স্বপ্ন জয়ের পদ্মা সেতু দিয়ে দ্রুত গতির রেল চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে নয়নাভিরাম ও অত্যাধুনিক রেলপথের নাম এখন ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ। মঙ্গলবার দুপুরে মাওয়া স্টেশন থেকে ঢাকা-ভাঙ্গা ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নিজে টিকিট কেটে নতুন রেলপথে ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশনে পৌঁছান। এতে পদ্মা সেতুতে যাত্রী চলাচল পূর্ণতা পেল
একুশে সংবাদ/আ.ভ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :