স্বাধিনতার ৫২ বছরে পা রেখে একের পর এক চমক দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ, নৌপরিবহন, অর্থনৈতিক জোন, আন্তর্জাতিক রেলযোগাযোগ, সাবমেরিন, স্যাটেলাই, পদ্মা সেতু এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর এবারে নদীর তলদেশে ‘দক্ষিণ এশিয়ার’ প্রথম টানেল উদ্বোধন হতে হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের কর্ণফূলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণ সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ৫.৩৫ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক।
সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।
নদী সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। ২০২২ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল। টানেলের প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। এছাড়া, দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৪ অক্টোবর ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংকে সাথে নিয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারের অর্থ সহায়তা দেয় ৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা ও চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে সহায়তা নেওয়া হয় ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণকে ঘিরে চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বা ‘এক নগর দুই শহর’ এর মডেলে গড়ে তোলা হবে।
দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে এ পথে। নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ সড়কটি অবস্থান করবে মাটি থেকে ১৫০ ফুট গভীরে। এর নির্মাণকাজ শেষ করে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। এই সুড়ঙ্গটি কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম টানেল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
অপেক্ষা পালা শেষ। কর্ণফূলীর উভয় তীরে উৎসবের আমেজ। উদ্বোধনী আয়োজন ঘিরে চট্টগ্রাম সেজে ওঠেছে নব সাজে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যোগাযোগে ও আন্তর্জাতিক বাইণজ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করবে টানেলটি।
চট্টগ্রাম মূল শহরের সঙ্গে সাগর ও বিমানবন্দরের দূরত্ব কমে আসবে। সময় সাশ্রয়ী চলাচল অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই টানেল । শনিবার (২৮ অক্টোবর) দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল উদ্বোধন করতে চট্টগ্রাম সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ অক্টোবর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই সুড়ঙ্গ নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে। কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে। সর্বশেষ সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ও ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :