২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগান সন্নিবেশিত করা হয়। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এই দেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। এই পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য ছিল, একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিসহ সর্বোপরি একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠন করা। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ২০০৯ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর, ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট নামক বিষয়ে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়। আর এর পর থেকেই এ ব্যাপারে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আরও একধাপ এগিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্লোগানকে ধারণ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগানে ইশতেহার প্রস্তুত করছে আওয়ামী লীগ। একারণে চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে শাসক দল। যার মধ্যে রয়েছে, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের জনগণ সবচেয়ে বেশি সেবা দিতে এবং নিজেরাও আধুনিকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। অতীতে আমরা কী কী করেছি, আমাদের কী কী অর্জন রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করা হয়। তার আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করি আমরা।
মি. রাজ্জাক আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা পূর্বের বাস্তবায়িত ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পিত রূপান্তর। যা হচ্ছে বিশ্বয়ানের যুগের সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি আর সুবিধাদির সমন্বয়ে তৈরি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০০৯ সালে বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার জন্য নতুন নীতি ঘোষণা করেছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক সার্ভিসকে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে এবং দ্রুততার সাথে প্রতিটি মানুষের জীবনকে ডিজিটাল টুল দিয়ে চালনার একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, যদিও গ্রামীণ এলাকায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো কঠিন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ ১৪ বছরের ব্যবধানে জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক পরিবর্তনে অবদান রেখেছে।
ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ভাষায়, অনেকের কাছে ‘ডিজিটালাইজেশন’ নীতির সুবিধা ভোগ করে তা অস্বীকার করা বর্তমানে কঠিন হয়ে গিয়েছে। টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল পরিষেবা, ডিজিটাল ফাইন্যান্স এবং ই-কমার্সের মতো বেশ কয়েকটি সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের প্রথম ধাপের সাফল্যের ওপর ভর করে, শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশিদের স্মার্টনেসের নতুন যাত্রা শুরু করতে অনুপ্রাণিত করছেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতি এজেন্ডার বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। সরকার বেশিরভাগ সেবা ডিজিটালাইজড করেছে।
১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটির একটি স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ১৯ কোটিরও বেশি গ্রাহক রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন, ডিজিটালাইজেশন-সফলতা স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাণিজ্য, এবং সামাজিক সুরক্ষা নেট পেমেন্টে পরিষেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন স্মার্ট-এজেন্ডা একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জ্ঞান-প্রযুক্তি-চালিত সমাজ তৈরির আরও বেশি সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়। স্মার্ট বাংলাদেশে লক্ষ্য হলো- মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ ডলার; ৩%-এরও কম মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে; চরম দারিদ্র্য শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। আর স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি মূল উপাদান রয়েছে- ১. স্মার্ট নাগরিক, ২. স্মার্ট সরকার, ৩. স্মার্ট সোসাইটি, এবং স্মার্ট ইকোনমি। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফোকাস করবে। সেগুলো হলো, সংযোগ, ই-গভর্নেন্স, উদ্ভাবন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন। স্মার্ট বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত অগ্রগতি ঘটাবে যেখানে প্রযুক্তি মূল সক্ষমতার ভূমিকা পালন করবে। ইন্টারনেট অফ থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমকে রূপান্তরিত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ একটি টেকসই পরিবেশ তৈরির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ পরিবহনের ওপরও জোর দেয়। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য, গ্রাহককেন্দ্রিক, কাগজবিহীন এবং নগদবিহীন জনসেবা প্রদান করা।
সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভাজন এর সেতু করে বৈষম্য দূর করতে চায় সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সরকার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। এটি একটি প্রযুক্তি-সক্ষম স্মার্ট অর্থনীতি এবং সমাজের সুবিধা প্রদানের জন্য একটি নতুন পথরেখার সুচনা। দেশের গ্রামগুলোকে শহরের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলার নীতিমালা ইতিমধ্যেই চলছে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে একটি স্মার্ট জাতির জন্য স্মার্ট নাগরিক তৈরি করা এই নীতির উদ্দেশ্য। প্রযুক্তির পাশাপাশি মানবিক দক্ষতা নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করবে। নাগরিকরা সমস্যা সমাধানকারী হিসাবে বড় হবে যারা সমাধানের জন্য কোন উচ্চতর কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করবে না। এটি একটি প্রগতিশীল সমাজের কল্পনা করে যেখানে সমস্ত সদস্য অন্তর্ভুক্তির সুবিধা ভোগ করবে। সোসাইটি তার সদস্যদের উদ্ভাবক হতে উৎসাহিত করবে। ‘কেউ পিছিয়ে নেই’ মন্ত্র নীতিনির্ধারণকে গাইড করবে।
বাংলাদেশে তারুণ্যের স্ফীতি আছে। আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে আজকের তরুণরা স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। স্মার্ট বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের চালিকাশক্তি হওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। চতুর্থ শিল্প বিল্পব ইতিমধ্যেই চলছে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যান্ডস্কেপ পুনর্র্নিমাণ শুরু করেছে। তরুণদের উন্নত দক্ষতা ও উদ্যোক্তা মানসিকতা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বাংলাদেশের স্মার্ট-এজেন্ডা তৈরি হচ্ছে তার তরুণদের গতিশীলতার দ্বারা।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :