- ঝড়-বৃষ্টির দিনে অনেক সময় তার ছিড়ে যায়, শর্ট সার্কিট হয়ে যায়, সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। মাটির নিচে ক্যাবল থাকলে এই সমস্যা আর হবে না- আবদুল্লাহ নোমান, নির্বাহী পরিচালক, ডিপিডিসি
- আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্মার্টভাবে মনিটরিংসহ সব ধরনের কর্মকান্ড স্মার্ট করছি- বিকাশ দেওয়ান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিপিডিসি
- আমাদের লক্ষ্য পুরো ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে নিয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে তার প্ল্যান করা হয়ে গেছে- নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
বিকাশ দেওয়ানের সৎ, আন্তরিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় সাফল্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে কাজ করছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির(ডিপিডিসি) এমডি। তার টার্গেট জঞ্জালমুক্ত স্মার্ট বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় শূন্যের কোটায় নামবে বিদ্যুৎবিভ্রাট। বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দরুণ বদলে গেছে ঢাকা মহানগরীর চিত্র। মাথার ওপর থেকে দীর্ঘদিনের বৈদ্যুতিক তারের জটলা মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ায় বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে বেশ কিছু এলাকা। ক্রমান্বয়ে পুরো ঢাকা শহর হবে তারের জটলামুক্ত। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির(ডিপিডিসি) স্মার্ট উদ্যোগের কারণে দুই সিটি করপোরেশন এখন ‘স্মার্ট’ সিটি’র খেতাব পেয়েছে। একইভাবে বদলে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাও। আর এমনটি হলে নারায়ণগঞ্জও স্মার্ট শহরের তালিকায় নাম লেখাবে। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ রাজধানীজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা তারের জঞ্জাল সরিয়ে মাটির নিচে বৈদ্যুতিক তার প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বেশ জোরেসোরে। করোনার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ কিছুটা গতি হারালেও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আশা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জালগুলো মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের মধ্যেই উন্নত দেশের আদলে বিদ্যুতের সাব-স্টেশনগুলো মাটির নিচে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জায়গার যথাযথ ব্যবহারে এসব স্টেশনের ওপর নির্মিত হবে সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ঝুলন্ত বিদ্যুতের তার মাটির নিচে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং সামগ্রিক অগ্রগতিও বেশ সন্তোষজনক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটির চিত্র। থাকবে না কোনো তারের জঞ্জাল। কমবে দুর্ঘটনা। সম্ভব হবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা দেয়া। পুরো রাজধানী জুড়ে ডিশ, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে ভয়ঙ্কর এক জঞ্জাল অবস্থা। পুরান ঢাকায় এ পরিস্থিতি আরও খারাপ। এভাবে সারাদেশে খুঁটি ও তারের কারণে প্রতিবছর গড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। দুর্ঘটনা রোধে ঢাকার সড়কগুলোকে খুঁটি ও তারমুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, পাইলটিং কাজের অংশ হিসেবে ধানমন্ডির বেশ কয়েকটি সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন মাটির নিচে স্থাপন করা হচ্ছে। অভিজাত এ আবাসিক এলাকাকে চারটি ভাগে ভাগ করে কাজ করছে ডিপিডিসি। ২০২০ সালে বিদ্যুতের তার ভূগর্ভস্থ করা বিষয়ক ডিপিডিসির কাজ অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। করোনা মহামারীসহ নানা কারণে প্রকল্প গতি হারায়। পরে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ১৯০ কিলোমিটার সড়কে এ কাজ করা হবে। ১ লাখ ১৫ হাজার গ্রাহক সেবা পাবেন। চীন সরকারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাইলটিংয়ে সফলতা মিললে বড় পরিসরে কাজ করবে সরকার।
ডিপিডিসির প্রকল্প ও নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ নোমান বলেন, মাটির নিচে বিদ্যুতের তার নেয়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। করোনার কারণে কাজের গতিটা কম ছিলো এখন তা পুরোদমে চলছে। ভুগর্ভস্থ তারের ফলে দুর্ঘটনা ঘটবে না।
ভুগর্ভস্থ তারের ফলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবেরাহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঝড়-বৃষ্টির দিনে অনেক সময় তার ছিড়ে যায়, শর্ট সার্কিট হয়ে যায়, সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। মাটির নিচে ক্যাবল থাকলে এই সমস্যা আর হবে না। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না। ধানমন্ডিতে এটা আমরা করেছি। হয়তো ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে মাটির নিচে আরো অগ্রগতি হবে। নোমান বলেন, যে সব সড়কে আমাদের এই কাজ হয়েছে, সেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর ও উন্নত দেশের মতো। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ৩৬টির মধ্যে ১২ টি রাস্তায় করা হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন, সেজন্য স্মার্ট শহর দরকার। ডিপিডিসি সেভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো সাবস্টেশনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকতো যেগুলোর মাধ্যমে নিরবিচ্ছন্ন গ্রাহক সেবা দেয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু এই প্রকল্প নেয়ার পর ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে মডার্ন স্কেডা প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে ডিপিডিসি। সুপারভাইজার কন্ট্রোল এন্ড ডেটা ইকুজিশন এখানে স্টাবলিশ হবে। এটা হলে পুরো আধুনিকভাবে অপরারেশন টেকনোলজি প্রয়োগ করতে পারবে ডিপিডিসি। একই সঙ্গে স্কেডার মাধ্যমে পুরো ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত হবে।
ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসির শুরুতে গ্রাহক ছিল ৬ থেকে ৭ লাখ। এখন ১৭ লাখ গ্রাহক। ফলে আমাদের নেটওয়ার্ক বড় হয়ে গেছে। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ২০০৮ সালের পর থেকে ডেসা’র যে লাইনগুলো ছিলো উপরে টানা তা অনেক পুরোনো জীর্ণ-শীর্ণ। এই লাইনগুলো দিয়ে আমাদের আসলে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ঠিকমতো করা যাচ্ছিল না। একটুবৃষ্টি হলে ঝড়ঝঞ্জা বা দুর্যোগ হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতো। এই পরিস্থিতিতে ডিপিডিসির গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি করতে ওভারডেডেট লাইনকে কিভাবে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে নিতে পারি সে চিন্তা করি। এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎবিভ্রাট শূন্যের কোটায় নামবে।
ভুগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে কিন্তু বিদ্যুৎ লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে করেছে। আর আমাদের ঢাকা হলো রাজধানীর প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে যদি আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে না পারি, তাহলে ব্যবসা বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুতে ব্যাঘাত ঘটবে। এজন্য আমরা মাটির নিচে তার নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে জিটুজি প্রকল্পের মাধ্যমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধানমন্ডিতে এই কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেটা দেরি হচ্ছে বলে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেয় ডিপিডিসি। যেখানে পুরোনো তার আছে এবং ভিআইপি সড়ক সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন করতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অত্যন্ত ভিআইপি যেমন বঙ্গভবন থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত, আরেকটা হলো আজিমপুর থেকে গাবতলীয়। ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত বাংলামটর পর্যন্ত আর ওদিক দিয়ে গাবতলী থেকে রেসিডেনসিয়াল হয়ে ধানমন্ডির অনেকদুর এগিয়েছি কাজ। তবে সেবাখাতের প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ওয়াসা, তিতাস, বিটিআরসি, সুয়ারেজ-এর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয় বলে অনেক ক্ষেত্রে কাজ একটু ধীরে হয়ে যায়। তবে সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক।
অন্যদিকে জিটুজি ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে ধানমন্ডিতে। সেই কাজ ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটা নির্ভর করবে সিটি কর্পোরেশনের ওপর। কারণ সিটি কর্পোরেশনেরও অনেক কাজ হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে ডিপিডিসিকে।
ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ৪৫টি সাবস্টেশন হচ্ছে। প্রতিটি উপকেন্দ্রে কমপক্ষে দুটি সোর্স করছি। যাতে একটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে আরেকটি থাকে। মাটিরে নিচে লাইন যেহেতু, সেহেতু ফল্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও হয় কিছুদুর পরপর অপারেশন করতে বা মেইনটেইন করতে যাতে সুবিধা জয়, সে স্কোপ রাখছি। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্মার্টভাবে মনিটরিংসহ সব ধরনের কর্মকান্ড স্মার্ট করছি।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের বৈদ্যুতিক তার আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ধানমন্ডিতে এই প্রকল্পের কাজ অনেকটা শেষ হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্র, তা এর মাধ্যমে শুরু করা হলো। আন্ডারগ্রাউন্ড করার ফলে লোড নিয়ে কাজ করা যায়, লোড কন্ট্রোল করা যায়। গ্রাহক সেবার মান উন্নত হয়। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য পুরো ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলে নিয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যে তার প্ল্যান করা হয়ে গেছে। কোভিডের কারণে আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম, তাই এখন দ্রুতগতিতে সব সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচকে/এসআর/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :