পৃথিবীতে মহাজাগতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে
দুর্বল হয়ে পড়েছে সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তি
লক ডাউনে যেতে পারে সূর্য
বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। মানব সভ্যতা আজ হুমকির মুখে। আধুনিক যোগাযোগ, শিল্প উন্নয়ন, যুদ্ধ, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগীতা, ব্যাপকহারে প্রকৃতি ধ্বংস বর্তমান মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে। একের পর এক বিপদ পৃথিবীর ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলছে। বিধাতা মানবকুল সৃষ্টি করে মানবতার দূত বানিয়ে পৃথিবী নামক ভূ-খন্ডে পাঠিয়েছে প্রকৃতির কোলে, প্রকৃতির সন্তান করে। মানুষ আর মানব সভ্যতা প্রকৃতির কোলে হেসে খেলে বেড়ে উঠেছে আপন মহিমায়। কিন্তু মানুষ লোভ, হিংস্বা, ক্ষমতার মোহ, অশুভ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। যেই প্রকৃতি মায়ের কোলে পরম আদর স্নেহে বেড়ে উঠেছে তাকেই অবলীলায় ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। পরম নির্ভরাতার আশ্রয় প্রকৃতিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মানুষ এবং মানব সভ্যতার বিপরীতে। তাই একের পর এক বিপদের আশঙ্কা ভূপৃষ্টের কাঁধের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে।
`গ্রিন হাউজ ইফেক্ট ` সূর্যের লক ডাউন ` অর্থাৎ সূর্য শীতল হয়ে আসা, অদৃশ্য মানব ভাইরাস `কোভিড-১৯, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে ফাটল সৃষ্টি, একের পর এক গ্রহাণু`র ছুটে আসা। তারপর মহামারী, টর্নেডো, ঝড়, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, সুনামি, দাবানল এমনি হাজারো প্রাকৃতিক বিপদ মানব সভ্যতার হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষই প্রকৃতি ধ্বংস করে প্রকৃতির রুদ্রু-রোষে পতিত হচ্ছে। বিধাতার অভিশাপে একের পর এক প্রকৃতির প্রতিহিংসার সম্মুখিন হচ্ছে মানব সভ্যতা। প্রকৃতি ও মহাকাশ নিয়ে যারা গবেষণা করে থাকেন তাদের ভাষায় বিভিন্ন আলামত দেখে স্পষ্ট হয়ে উঠছে পৃথিবীতে মহাজাগতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। তার অর্থ দাড়ায় পরবর্তী ঘটনায় মানুষ অসহায় হয়ে উঠবে। এর অর্থ বিশাল ও ব্যাপক।
২১ আগস্ট ২০২০ খৃস্টাব্দ `নাসা` জানায় এক ভয়াবহ বিপদের কথা। তারা জানিয়েছে পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল আরো আগেই। এই ফাটল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। `নাসা`র ভাষ্য মতে পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের একটি ফাটল ভেঙ্গে দু’টুকরো হয়ে গেছে। এর ফলে ব্যাহত হতে পারে টেলিযোগাযোগ, বিদুৎ সংযোগ ও নেভিগেশন ব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা `ন্যাশনাল এরোলটিক্স অ্যান্ড স্পেস এন্ড মিনিস্ট্রেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীকে ঘিরে আছে এই চুম্বকীয় স্তর সেটাই এখন বিপদের মুখে। ভূপৃষ্টকে ঘিরে থাকা এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডই সৌর রশ্মির দাবদাহ থেকে পৃথিবীর প্রণীকুলকে রক্ষা করে। এছাড়াও এর উপর পৃথিবীর বায়ুস্তরের পরিবর্তন ও অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাউথ আতলান্তিকে অ্যানোমলি বা "এস এস এ" নামের ভৌগলিক এই স্তরে বিশাল ফাটলের কারণে সময়ের সাথে সাথে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ফাটল আরও বড় হয়ে গিয়েছে। একটা ফাটল ভেঙ্গে দু`টুকরো হয়ে গেছে, ফলে এই পার্থিব সভ্যতাকে ভয়ঙ্কর সৌরকণা, সৌর বিকিরণ ও মহা-জাগতিক রশ্মির ছোবল সামলাতে হবে। ভয়াবহ বিপদের খবরটি হলো, বিভিন্ন সময় নানা নামে উল্কা খন্ড পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখা গেছে। মহাকাশ গবেষকগণ তার বিপদ কিংবা আশঙ্কার কথা আগে ভাগেই পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে সতর্ক করেন। কিন্তু ২০২০ খৃস্টাব্দের ১৬ আগস্ট "কিউজি` নামের একটি উল্কা খন্ড পৃথিবীর একেবারে পাশ ঘেসে চলে গেলেও চলে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তেও দেখতে পায়নি গবেষণারত পর্যবেক্ষকগণ।
এরি মধ্যে বেশ বড় সড় আরো একটি দুঃসংবাদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা `নাসা`র গবেষকেরা। তাদের মতে, এবার লক ডাউনে চলে গেছে সূর্য। আর এর কারণে শীতল হয়ে আসছে সূর্য। সূর্যের লকডাউনের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা কমে যাবে, শীতল হয়ে উঠবে পৃথিবী। যে কারণে, বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
সূর্য বর্তমানে `সোলার মিনিমাম` পরিস্থিতিতে রয়েছে `, ফলে পৃথিবীতে সূর্যের স্বাভাবিক পর্যায়ে সরবরাহ করা তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। পৃথিবীর প্রতি সূর্যের কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড.টনি ফিলিপস বলেন, আমরা গভীরতম সময়ের ভিতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, যে সময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে। সূর্যের `সোলার মিনিমাম` চলছে, এটি অত্যন্ত গভীর। সান স্পট গণনা থেকে দেখা যাচ্ছে, এটি বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে গভীরতম অবস্থানে রয়েছে। সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মানে হলো সৌর জগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক শক্তির প্রবেশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। `টনি ফিলিপস` আরো বলেন,
সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক রশ্মি প্রবেশ করলে নভোচারী ও মেরু অঞ্চলের জন্য তা হবে বিপজ্জনক। এ ছাড়া এটি পৃথিবীর ওপরের বায়ুমন্ডলের বৈদ্যুতিক রসায়নকে প্রভাবিত করে তাহলে ভূ-পৃষ্টে বজ্রপাত বাড়াবে।
সূর্যের এই লকডাউনে যাওয়ার ঘটনায় `ডাল্টন মিনিমাম` এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন `নাসা`র` গবেষকরা। ১৭৯০ এবং ১৮৩০ খৃস্টাব্দের মধ্যে সূর্যের `মিনিমাম সুলারে`র` কারণে তীব্র শীতের মুখে পড়েছিল পৃথিবী। ১৮১৫ খৃস্টাব্দের ১০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার তাম বোরো পর্বত শৃঙ্গে দুই হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছিল। সেই অগ্নুৎপাতে মুহুর্তেই ৭১ হাজার মানুষ মারা যান। পরের বছর ১৮১৬ খৃস্টাব্দে পৃথিবীর অনেক দেশে গ্রীষ্মকালই দেখা যায়নি। এমনকি জুলাইয়ের গরমের দিনও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তুষারপাত হয়।
সবুজ ঘর প্রতিক্রিয়া " গ্রীন হাউজ ইফেক্ট" যা নিয়ে বিগত কয়েক দশক ধরে চিন্তিত এই পৃথিবীর মানুষেরা। সহজভাবে বলতে গেলে সবুজ, শ্যমলে ঘেরা পাহাড় -নদী সাগর বেষ্টিত আমার ঘরটি রক্ষা পাবে তো? আসলে যা নিয়ে শঙ্কিত মানব সভ্যতা কি সেই গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া? পৃথিবীকে যদি একটা সবুজ ঘরের সাথে তুলনা করা যায়, তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে হতে ১০-১৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত কতগুলো গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে স্বচ্ছ কাঁচের মতো স্তরে স্তরে ঘিরে অবস্থান করছে। যা গ্রীন হাউজ বা সবুজ ঘর।
সূর্য থেকে ভূ-পৃষ্ঠে আসা উচ্চ শক্তির (Sort and Low Freguency`s u v and Visible) আলোক রশ্মি বায়ু মন্ডল ভেদ করে কয়কটি পক্রিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায়। আলোক রশ্মি বায়ু মন্ডলে প্রবেশ করলে তাতে অবস্থান করা মেঘ ও বিদ্যমান ধুলিকণা দ্বারা ২৫ ভাগ প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ ভাগ মেঘ ও গ্যাস দ্বারা (ওজন জাতীয়) শোষিত হয়, ২০ ভাগ মেঘ ও গ্যাস দ্বারা এবং ৬ ভাগ বায়ু মন্ডল দ্বারা মহাশূন্যে প্রতিফলিত হয়। ফলে কিছু শক্তি ক্ষয় হয়ে ৫৫ ভাগ ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায়। ভূ-পৃষ্ঠে আসা আলোক রশ্মির ৪৯ ভাগ ভূ-পৃষ্ঠ দ্বারা শোষিত হয়, এবং ৬ ভাগ বায়ু মন্ডলে কম শক্তিতে ( Infrared Ray -Long Wave and high Frequency`s Invisible Ray) প্রতিফলিত হয়।
ভূ-পৃষ্ঠ দ্বারা শোষিত আলোক রশ্মি পরবর্তীতে বায়ু মন্ডলে প্রতিফলিত হয়, অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠে আসা উচ্চ শক্তির ( Sort Wave) ৫৫ ভাগই বায়ুমন্ডলের Infrared zone এ কমে শক্তির বিকিরণ (Long Wave) রূপে প্রতিফলিত হয়।
প্রতিফলিত এ কম শক্তির বিকিরণ উক্ত গ্যাস সমূহ দ্বারা সৌরমন্ডলে বাঁধা প্রাপ্ত হয় এবং খুব সামান্যই মহাশূন্যে ফেরত যায়, অবশিষ্ট সবই উক্ত গ্যাস সমূহ দ্বারা শোষিত হয়। শোষিত বিকিরণ তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। বায়ু মন্ডলে প্রতিফলিত কমে শক্তির বিকিরণ পুনঃ পুনঃ ভূ-পৃষ্ঠে প্রতিফলিত ও শোষিত হয়ে বায়ু মন্ডলের তাপ মানা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া তরাম্বিত করে।
বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের যত বৃদ্ধি ঘটছে ভূ-পৃষ্ঠ দ্বারা প্রতিফলিত কম শক্তির বিকিরণ ততই পুনঃ পুনঃ প্রতিফলিত ও শোষিত হয়ে বায়ুমন্ডলের তথা ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা যুগপৎ বৃদ্ধি করে চলছে। এই গ্যাস গুলোকে বলা হয় গ্রীন হাউজ গ্যাস এবং ভূ-পৃষ্ট থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৃথিবীর চারিদিকে স্বচ্ছ কাঁচের দেওয়ালের ন্যায় সৃষ্ট গ্যাসের স্তর যা গ্রীন হাউজের মত ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তুলছে তাই হলো গ্রীন হাউজ ইফেক্ট। যে কারনে, গ্রীন হাউজ ইফেক্ট ও মানব সভ্যতার প্রতি হুমকি তৈরি করছে।
এবিষয় নিয়ে `নাসা`র (Nasa) মহাশূন্য গবেষণাগারে নিযুক্ত গডগার্ড ইনস্টিটিউট এর লব্দ প্রতিষ্ট আবহাওয়া বিজ্ঞানী জিম জেনসন ওয়াশিংটন ডিসিতে শক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদ কমিটিতে সাক্ষাৎ দিতে গিয়ে বলেন,
গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই যে ক্রিয়াশীল সেটা প্রমাণ করার যথেষ্ট লক্ষণ এখন দৃষ্টি গ্রাহ্য, এমন এক সময়ে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন যখন আমেরিকার কৃষি বিভাগ ওহাইও থেকে ডাকোটা অব্দি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে খরাপীড়িত বলে ঘোষণা করেছে এবং মোট কৃষি উৎপাদনের অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। সেই থেকে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পক্ষে বিপক্ষে গবেষকেরা তাদের বক্তব্য ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণে সচেষ্ট আছেন। বাকী বিশ্ব যার একটি সুদুর প্রসারী প্রভাব বিস্তারের বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে।
প্রকৃতি ধ্বংস, মানবতার পরাজয়, নৈতিকতার অবক্ষয় অসত্যের জয়জয়কার, পৃথিবীজুড়ে এখন মিথ্যের আস্ফালন। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে ছুটছে মানুষ। মানুষ প্রভুত্ব কায়েম করছে মানুষের উপর। অস্ত্র আর ক্ষমতার জোরে সত্য মিথ্যার মানদণ্ড নির্ধারণ হয়। শক্তি এবং ক্ষমতা যার হাতে সবাই আছে তার সাথে। এমনি অধঃপতিত এক জাতিতে পরিণত হচ্ছে সারা দুনিয়া। আইন -আদালত, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের এসবই এখন শুভংকরের ফাঁকি।
ধরণী এবার ঢাকা পরেছে অশুভ দানবের অপতৎপরতায়। যেখানে মানব শিশুর অসহায় আর্তনাদে বিধাতার আসন কাঁপে। তাই হয়ত স্রষ্টার অভিশাপ নেমে আসছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবী সৃষ্টির পর মানব জাতিকে আলোর পথ দেখাতে যুগে যুগে এসেছে স্রষ্টার প্রতিনিধি মানব কিংবা মহামানব। তারা দেখিয়েছে সত্য, ন্যায়, আদর্শের পথ। পৃথিবী ভরেছে ফুলে -ফলে, বিকশিত হয়েছে মানব সভ্যতা। আবার মানুষ যখন মানবতা হারিয়ে ক্ষমতা ও শক্তির মোহে অন্ধ পৃথিবীকে কলুষিত করেছে। বিধাতা তখনি ধ্বংস করে জনপথ, দেশ ও জাতিকে। তবে মানুষকে সাবধান করেছে নানা আলামত প্রকাশ করে। এবিষয়ে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ আল কোরআনের ১৩৪ নং আয়াতে স্রষ্টা বলেন, শেষ পর্যন্ত আমি তাদের উপর পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত ধারার শাস্তি পাঠিয়ে কষ্ট দেই, এগুলো ছিল আমার স্পষ্ট নিদর্শন। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত দাম্ভিকতা ও অহংকারেই মেতে রইল, তারা ছিল একটি অপরাধী জাতি।
আমরা বর্তমান ভূ-পৃষ্ঠের মানুষেরা কি সেই অপরাধী জাতিতে পরিণত হয়েছি? তাহলে বিধাতার অভিশাপে ধ্বংস অনিবার্য। কারণ এমনি করে অনেক জাতি, দেশ, মহাদেশ, জনপথ, মানব শূন্য হয়েছে। এসেছে প্লাবন, বন্যা, মহামারী কিংবা মহাজাগতিক শক্তির ধ্বংসের প্রলয়। আমরা শুনেছি নুহের প্লাবন, হযরত নুহ আলাইহি অসাল্লাম স্রষ্টার প্রেরিত পুরুষ ছিলেন। তার দেখানো সত্য পথ প্রত্যাখ্যান করে যারা ক্ষমতার আস্ফালন করেছিল তারা ধ্বংস হয়েছিল বিধাতার অভিশাপে। পুরো পৃথিবী মহাপ্লাবনে ডুবে গিয়েছিল প্রাণের অস্তিত্ব বিলিয়ন হয়েছিল।
বর্তমান সভ্যতায় তেমনি নানান আভাস প্রকাশ হতে শুরু করেছে। মহামারির কথা যদি বলি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস এই শতাব্দীর প্রথম বৈশ্বিক মহামারি। করোনা ভাইরাসে স্তব্ধ হয়েছিল ধরণী। বৈশ্বিক দুর্যোগ কিংবা মহামারিকে, বিধাতার অভিশাপ কিংবা মানব সভ্যতায় মনুষ্য জাতীর ব্যাপকহারে প্রকৃতি ধ্বংসের কারণে প্রকৃতির প্রতিশোধ যাই বলি না কেন পৃথিবী জোড়া এই সকল দুর্যোগ তাদের গতি প্রকৃতি পাল্টাচ্ছে। ১৭২০ খৃস্টাব্দ হতে এসব দুর্যোগ প্রতি শতাব্দীতে একবার অর্থাৎ একশ বছরে একবার মহামারির তান্ডব ছড়িয়েছে। বিগত শতাব্দীতে তার হিসেব পাল্টে গেছে। ১৯০০ শতাব্দীতে দুর্যোগ কিংবা মহামারি ঘুরে ফিরে বিশ্বকে ৪ বার লন্ডন ভন্ড করেছে।
১৭২০, ১৮২০, ১৯২০, ২০২০ এই চার শতাব্দীতে বৈশ্বিক মহামারি ২০ সংখ্যাটি অপরিবর্তিত রাখলেও ১৯২০ খৃস্টাব্দ স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বজুড়ে ৫ কোটি মানুষ মৃত্যু বরণ করে। ১৯৫৭ খৃস্টাব্দে এশিয়ায় ফ্লুতে মারা যায় ২০ লাখ মানুষ। ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে এশিয়া মাইনর অঞ্চলে প্লেগে মারা যায় ৫০ লাখ মানুষ। ১৯৬৮ খৃস্টাব্দে হংকং-এ ফ্লুতে মারা যায় ১০ লাখ মানুষ। চলতি ২০২০ খৃস্টাব্দে কোবিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার ভয়াবহতা ছড়িয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মানুষের সকল ক্ষমতাকে শূন্যের কোঠায় ঠেলে দিয়ে এই ভাইরাস মানব সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ ছু্ঁড়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক দুর্যোগের কিংবা মহামারির ৫৪১ খৃস্টাব্দ হতে একটা চিত্র এমন, ৫৪১ খৃস্টাব্দে জাস্টিনিয়ান প্লেগে মারা যায় ২.৫ কোটি মানুষ। ১৩৪৬ খৃস্টাব্দে ব্ল্যাক ডেথ প্লেগে ২০ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৭২০ খৃস্টাব্দে প্লেগে মারা যায় আরো ২০ কোটি মানুষ। চলতি শতাব্দীতে কি ঘটতে যাচ্ছে?
এসব দুর্যোগ মহামারির শেষ পরিণতি কিংবা ভয়াবহতা অনিশ্চয়তার মাঝে। পাশাপাশি গত শতাব্দীর মতো আগামী দুর্যোগের ধরণ ও ভয়াবহতা নিয়ে শঙ্কিত মানুষ। গবেষণা কাজে নিয়োজিত আর প্রাকৃতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বে পারমানবিক প্রতিযোগিতায় পৃথিবী জুড়ে মানবিক অবক্ষয়, লুটিয়ে পড়া মানবতা, সভ্যতার বিকাশে ব্যাপকহারে প্রকৃতি ধ্বংসের কারণেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে ধরণী।
মনে পড়ে সিরিয়ায় সেই অবোধ শিশুর কান্না ঝড়ানো সেই কথাটি, " আমি বিধাতার কাছে বলে দিব" হ্যাঁ সে বলেছে মানুষের অমানুষ হয়ে উঠার গল্প। এসব মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে, মানুষের রাজ্যে, পৃথিবী জুড়ে মানবতা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, ধর্মীয় অনুশাসন, মানবতার জয় গানে আধুনিক সভ্যতাকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরী প্রকৃতির রোষানল হতে বাঁচতে হলে, ব্যাপকহার প্রকৃতি ধ্বংস না করে, সর্বশক্তি দিয়ে প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে। যখন প্রকৃতিই রক্ষা করবে মানব সভ্যতাকে। পাশাপাশি বিধাতার অভিশাপ মুক্ত হতে মানুষ হত্যার মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযগিতা বন্ধ করে মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর না হয় এই শতাব্দী হয়ে উঠবে মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ আর ধ্বংসের প্রলয় ভূমি।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :