- বর্ষাকালে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করে
- রাজধানীতে প্রায় ১২ শতাংশ ম্যানহোল ঢাকনাবিহীন
- ঢাকায় প্রায় ৭৫ হাজার ম্যানহোল রয়েছে
ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল যেন রাজধানীর এক মরণফাঁদ। অসতর্কতা কিংবা অজ্ঞতায় থামিয়ে দিতে পারে জীবনের গতি। শুধু যে ঢাকনা ছাড়া ম্যানহোল তাও নয়, ভারী যানের চাপে রাস্তার মাঝখানে ম্যানহোল ভেঙে বড় বড় আকৃতির গর্তগুলো যে কোনো সময়, বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাড়ায়। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টিতে সড়ক, রাস্তা, গলিপথ পানিতে ডুবে গেলে ঢাকনাবিহীন এসব ম্যানহোল ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করে। ম্যানহোলে পড়ে শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ও একজন বিদেশী রাষ্ট্রদূতের পা ভাঙ্গার ঘটনা একসময় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের মরণফাঁদের খবরে।
ঢাকনা না থাকায় বৃষ্টির সঙ্গে মাটি ও ময়লা জমে ভরাট হয়ে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে মশার উপদ্রব। ঘনঘন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হলেও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রাজধানীর বাসিন্দারা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, চলাচল করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। রাতের বেলায় কিংবা বৃষ্টির পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেলে এই ঝুঁকির মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মাদকাসক্ত এবং পেশাদার চোরেরা রাতের আঁধারে ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মহানগরের বাসিন্দারা। রাস্তার মাঝে ও ফুটপাতে ঢাকনা না থাকায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে ঢাকনাবিহীন এই ম্যানহোলগুলো। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
রাজধানীজুড়ে ম্যানহোলের প্রায় ১২ শতাংশই ঢাকনাবিহীন। চলার পথে অসর্তকতার কারণে প্রায় দুর্ঘটনায় পড়তে হয় পথচারীকে। পরিসংখ্যান বলছে, ওয়াসা, দুই সিটি কর্পোরেশন এবং সিটি কর্পোরেশনের বাইরে কয়েকটি ইউনিয়ন (যেগুলো রাজধানীর অন্তর্ভুক্ত) টিএনটি ,বিদ্যুৎ, তিতাস মিলে প্রায় ৭৫ হাজার ম্যানহোল রয়েছে। এসবের মধ্যে ১০ থেকে ১২ ভাগ ম্যানহোল মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোনটার ঢাকনা নেই আবার কোনটার ঢাকনা অর্ধেক ভাঙ্গা। এসব দেখার কেউ নেই। ঢাকনাহীন এসব ম্যানহোলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয় অনেক পথচারী। এতে পড়ে হাত-পা ভাংছেন অনেকেই, এমন কি মৃত্যুর দৃষ্টান্তও রয়েছে। শিশু নীরবের মৃত্যু এর সর্বশেষ উদাহরণ। স্থানীয়রা বাঁশের খুঁটি, কাপড় টানিয়ে সতর্ক সংকেত দিলেও মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
এছাড়া সড়কের মাঝখানে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলের কারণে মোটরবাইক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারও দুর্ঘটনায় পড়ছে। প্রতি বছর এসব ম্যানহোল ব্যবস্থাপনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হলেও ম্যানহোলগুলো ঢাকনাবিহীনই থেকে যাচ্ছে।
সংশিষ্ট সূত্রের সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে,
রাজধানীতে ম্যানহোল বসানোর বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশন একই নিয়ম মেনে থাকে। এই নিয়মে প্রতি ৩০ মিটার নালার ওপর একটি ম্যানহোল থাকে। সে হিসাবে ঢাকা ওয়াসা, দুই সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদফতর ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার ম্যানহোল রয়েছে।
ভুক্তভোগী মহলের অভিযোগ, ম্যানহোল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু রাজধানীর বৃহৎ এ সেবা সংস্থা দুটি বরাবরই দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে তাদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
রাজধানীর নামা শ্যামপুর, জুরাইন, মাদবর বাজার, মোহাম্মদবাগ, মিরপুর, ফকিরাপুল, মতিঝিল, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, বাসাবো, গোড়ান, তালতলা, শান্তিনগর, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, রাজারবাগ, মুগদা, জুরাইন, গোপীবাগ, শহীদবাগ, কদমতলা, সবুজবাগ, ইসলামবাগ, চকবাজার, নয়াবাজার, সূত্রাপুর, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল রয়েছে। এছাড়া কামরাঙ্গীরচর, লালবাগের ইসলামবাগ, কেল্লার মোড়, শহীদনগর, হাজারীবাগের কোম্পানী ঘাটসংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকা, জুরাইন, সায়েদাবাদ, ধলপুর, দক্ষিণ মৈশুন্ডি, পোস্তাগোলা, শ্যামপুর, মিরপুর, বনশ্রীসহ মহানগরীর অভিজাত উত্তরা, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারার বিভিন্ন সড়কে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল দেখা গেছে।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :