রাজধানীর কর্মজীবীদের অধিকাংশের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। এ উপলক্ষে দু-এক দিন আগ থেকেই ঢাকায় ফিরছেন চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। রীতিমতো কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ।
মাহমুদ দিনাজপুর থেকে আসেন ঢাকায়। তিনি জানান, অনলাইনে বিক্রির কথা বলা হলেও দিনাজপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো বাসের টিকিট ঘরে বসে কিনতে পারছেন না যাত্রীরা। মিলছে না কাউন্টারেও। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দিলে ঠিকই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময় দ্বিগুণ দামও দিতে হচ্ছে। যাত্রীদের গলা কাটতে পরিবহন কর্তৃপক্ষের এটা পুরোনো ফন্দি! ভাড়া নির্দিষ্ট করে তালিকা টানিয়ে দায় সেরেছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। কালোবাজারে টিকিট ছেড়ে যাত্রীদের গলা কাটছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
শনিবার শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে (নন-এসি) স্ত্রী-সন্তানসহ ভ্রমণ করেন আসিফ আলম। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, রংপুর থেকে ঢাকার ভাড়া ৮৬০ টাকা হলেও কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজারে। আগমনী এক্সপ্রেসে (এসি) ভ্রমণ করা যাত্রী হেদায়েতুল করিম জানান, ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা হলেও তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার টাকা।
বগুড়া থেকে ঢাকায় ফেরা তাসলিমা বেগম নামের এক যাত্রী গণমাধ্যমকে জানান, এবারের ঈদযাত্রায় তাদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা। এবার দিতে হয়েছে ১১০০ টাকা। গত সপ্তাহে তিনি বগুড়া গিয়েছিলেন। সেসময়ও ১১০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রা শেষে ফিরতি মানুষেরা ফিরছেন। কিন্তু ট্রেনভর্তি থাকলে ট্রেনের ছাদে কিংবা দাঁড়িয়ে আসার যে যাত্রী চাপ, থাকে সেটা নেই। ঈদের দিন একটি মাত্র ট্রেন চললেও বুধবার থেকে সব ট্রেন চলাচল করছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ যারা ফিরছেন, তাঁরা ১২ জুন টিকিট কেটেছেন। অন্যদিকে ঈদের আগে যাঁরা বাড়ি যেতে পারেননি, তাঁরা অনেকে ঢাকা ত্যাগ করছেন, তাঁদের উপস্থিতিও অনেক স্টেশনে।
সায়েদাবাদের কাউন্টার কর্মীরা বলছেন, শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকায় ফেরার চাপ বেড়েছে। এটি আজ আরও বাড়বে। কোনো কোম্পানির গাড়ি ফাঁকা আসছে না। ঢাকা থেকে গাড়ি ফাঁকা যাওয়াতে কিছু টাকা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। এটাও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই রয়েছে। অন্য সময় ভাড়া কম রাখা হয়। তাই এখন এটা বেশি মনে হয়।
সাতক্ষীরা থেকে আসা একটি বাসের সুপারভাইজারকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, ঈদের সময় কিছুটা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। অন্যান্য সময় স্বাভাবিক ভাড়াই থাকে।
বিআরটিএ রংপুরের মোটরযান পরিদর্শক মাহবুবার রহমান জানান, শুধু সাধারণ পরিবহন (নন-এসি) গাড়ির টিকিটের মূল্য (রংপুর-ঢাকা) ৮৬১ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর চেয়ে বেশি আদায় ও যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে, পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিলাসবহুল গাড়ির টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করে মালিক সমিতি। এখানে সরকারের দায় নেই।
একুশে সংবাদ/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :