AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নানা অনিয়মে হুমকির মুখে সুন্দরবন


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
১০:০২ পিএম, ২৫ জুন, ২০২৪
নানা অনিয়মে হুমকির মুখে সুন্দরবন

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার এই বন নিজের বুক পেতে দিয়ে রক্ষা করছে দেশকে। অনিয়ম দুর্নীতিসহ নানাভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে সুন্দরবনকে। অভিযোগ রয়েছে এসব অনিয়মের সাথে জড়িয়ে আছে বন কর্মকর্তাদের নাম। এনিয়ে আদালতে মামলাসহ খবর এসেছে মিডিয়ায়  তবু প্রতিকারহীন সবকিছু।

অভিযোগ উঠেছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন শেষে মিথ্যা হরিণ শিকারের মামলা দেওয়া। এবিষয়ে জুয়েল নামে এক ব্যক্তি  বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ,বাগেরহাটে একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

বনের নদীতীরে বালু ভরাট করে গড়ে উঠছে রিসোর্ট। বানানো হচ্ছে কংক্রিটের রাস্তা। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় একের পর এক রিসোর্ট গড়ে উঠছে। বনের গাছ কেটে, খাল ভরাট করে খুলনা ও সাতক্ষীরায় ১৪টি রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। আরও আটটির নির্মাণকাজ চলছে। রিসোর্টগুলো চালানোর জন্য বিকট শব্দে চলছে জেনারেটর। বাজছে সাউন্ড সিস্টেম বা শব্দযন্ত্র। বেশির ভাগ রিসোর্টে স্থাপন করা হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, 

সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় সেখানকার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষতি করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ কিংবা কোনো কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা এসব রিসোর্ট বনের পরিবেশের ক্ষতি করছে। রিসোর্টগুলোর আশপাশে পানি, শব্দ ও মাটিদূষণ বাড়ছে। বনের প্রাণীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। জংগলবাড়ি ম্যানগ্রোভ রিসোর্ট নামে সুন্দরবনের পাশে তৈরি হচ্ছে নতুন এই রিসোর্ট। চলছে অবকাঠামো তৈরির কাজ। জংগলবাড়ি ম্যানগ্রোভ রিসোর্ট নামে সুন্দরবনের পাশে তৈরি হচ্ছে নতুন এই রিসোর্ট। ২০১৮ সালে খুলনার দাকোপ ও বাগেরহাটের মোংলা এলাকায় সুন্দরবন ঘিরে ইকো কটেজের সংখ্যা ছিল ৩টি। দুই বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে এসে রিসোর্টের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪টি। ২০২৪ এসে সেই সংখ্যা ২০ টি হয়ে গেছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এ পর্যন্ত দুটি রিসোর্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দোতলা ভবনসহ কয়েক একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে বরসা রিসোর্ট। বরসা নামে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা  ওই রিসোর্টটির মালিক ২০১১ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। সেখানে নিজস্ব মিলনায়তন, পার্কিং ব্যবস্থা, জেনারেটর, শীতাতাপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ, নিজস্ব জেটি, স্পিডবোটসহ নানা কিছু রয়েছে। শ্যামনগরের সুন্দরবনসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জে একই ধরনের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো নিয়ে গড়ে উঠেছে টাইগার পয়েন্ট নামের একটি রিসোর্ট। এটির মালিকানা সাতক্ষীরাকেন্দ্রিক এনজিও সুশীলনের। ২০০৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে সাতটি কটেজের কাজ চলছে। নদীর লোকালয়ের পাড় ঘেঁষে একটি বড় জায়গাজুড়ে গাছ ও কাঠ দিয়ে হাঁটার পথ তৈরির পাশাপাশি চলছে ঘর নির্মাণের কাজ। ‘জঙ্গলবাড়ি’ নামের একটি ইকো কটেজ নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। ‘গোলকানন’ নামের একটি রিসোর্টের পাশে অন্য একটি রিসোর্টের কাজও শেষের দিকে। এটি নির্মাণে বালু দিয়ে জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এসব রিসোর্ট তৈরিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। এমন কি অনুমতির আবেদনও করা হয়নি। কটেজগুলোকে ‘কমিউনিটি-বেজড ইকো কটেজ’ বলা হলেও স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততা বেশ কম। ইকো কটেজের যেসব ধারণা, সব কটেজে তা নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে,

গাছগাছালির মধ্যে এসব কটেজ তৈরির জন্য কিছু বড় গাছ কাটা পড়ছে। প্রাকৃতিক জলাভূমিও নষ্ট করা হয়েছে। একাধিক রিসোর্টে হাঁটার পথ, শৌচাগার, এমনকি ঘরেও কংক্রিটের ব্যবহার চোখে পড়েছে। রিসোর্ট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে পর্যটক আনা-নেওয়ার জন্য ট্রলারের সংখ্যাও বেড়েছে, যা বনের নীরবতা ভাঙছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কটেজগুলোয় শব্দযন্ত্রের ব্যবহার, তীব্র আলো, জেনারেটর ব্যবহার, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি কটেজের অভ্যন্তরীণ সজ্জা দেখে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপন থেকে জেনারেটর ও এসি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি বাদে সব কটি রিসোর্ট যৌথ মালিকানায় গড়ে উঠেছে। মালিকদের বেশির ভাগই পর্যটন-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সেন্ট মার্টিন, সাজেক, শ্রীমঙ্গলে রিসোর্ট ব্যবসা আছে। হাওরে হাউসবোটও আছে।    নির্মাণাধীন জঙ্গলবাড়ি ইকো রিসোর্টের মালিকানায় আছেন পাঁচটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল গ্রুপের মালিকেরা। কটেজগুলো বনের জমির মধ্যে না হলেও সেগুলোর প্রধান উপজীব্য বন। কটেজের দূষণ বনের ওপর প্রভাব ফেলবে। এর বাইরে মালিকেরা বন বিভাগের অনুমতি না নিয়ে পর্যটকদের বনের মধ্যে নিয়ে যান। ফলে পর্যটকেরা বনে গিয়ে কোনো ক্ষতি করছেন কি না, সেটা দেখার সুযোগ থাকছে না।

সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির বিষয় নিয়ে কথা হয় অভিযুক্ত এসিএফ মাহবুব হোসেনের সাথে , তিনি বলেন এসব তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত । বন ধ্বংসকারী একটি মহল ষড়যন্ত্র করে এসব তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছে। তিনি আরও বলেন, এর আগেও তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছিল শেষ পর্যন্ত তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।

মামলার বাদী জুয়েল মিয়া কালের সমাজকে বলেন, 

আমি ঢাকা থেকে সস্ত্রীক শশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বনে প্রবেশের ফি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। আমি সরকার নির্ধারিত ফি জানতে চাইলে আমাকে বাজারে চা স্টল থেকে তুলে নিয়ে যায় এসিএফ মাহবুব হোসেন। আমাকে আটকে রেখ অমানুষিক নির্যতন করা হয়। পরের দিন হরিণ শিকারের মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আমি জামিনে এসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ন্যায় বিচার পেতে আদালতে মামলা করি।

বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডিএফও কাজী মুহাম্মদ  নূরুল করিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান সেক্ষেত্রে আমার কোন বক্তব্য নাই।

যে চায়ের দোকান থেকে জুয়েলকে তুলে নেওয়া হয় দোকানের মালিক নাসির আকন বলনে, জুয়েল এই এলাকার জামাই সে বিকাল বেলা আরো জন সহ আমার দোকানে আসে । তারা চা পুরির অর্ডার দেওয়ার পর একটা ফোন আসে । কিছুক্ষণ পরে এসিএফ মাহবুব হোসেন একটি মাইক্রোবাসে ৭/৮ জনকে সাথে করে দোকানের সামনে আসে। জুয়েল তারেকে চা খেতে বললে তারা চা না খেয়ে জুয়েলকে নিয়ে চলে যায়। পরে খবর পেয়েছি তাকে মারধর করে হরিণ শিকারের মামলা দিয়ে  জেলে পাঠিয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

Link copied!