AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

যে গল্প সেতুর চেয়েও বড়


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৭:৪৮ পিএম, ৮ জুলাই, ২০২৪
যে গল্প সেতুর চেয়েও বড়

 পদ্মা বহুমুখি সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন ছিল এক স্বপ্ন যাত্রা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির মহাসড়কে আর একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২৩ জেলার সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরের দিন ২৬ জুন থেকে যানবাহন পারাপারের জন্য সেতু খুলে দেওয়া হয়।

বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নানা জটিলতার পর দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল দুই ঠিকাদার চীনের। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। ব্যবহৃত মালামালের ৯০ শতাংশই কেনা হয়েছে বিদেশ থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয় যে টাকা বিনিয়োগ করেছে, এর বেশির ভাগই ঠিকাদার ও পরামর্শকদের বিল বাবদ ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে ।

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক ঝড়-ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে সেই শেষ হওয়ার অনুষ্ঠান হয় না। কখনো করা হয় না, শেষ হয়ে যায়। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা জমি দিয়েছে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এটি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর অনুষ্ঠান।৫ জুলাই  শুক্রবার বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সেতুর টোল হতে হওয়া আয় থেকে ছয় কিস্তিতে এখন পর্যন্ত ৯৪৮ কোটি টাকা সরকারের অর্থ বিভাগকে পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার সপ্তম কিস্তির ৩১৪ কোটি টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অর্থ বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে।

দেশের বৃহত্তম এই সেতু চালুর পর হতে দুই বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। এই সময়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। গত ২৬ জুন ২০২৩ থেকে ২৬ জুন ২০২৪ পর্যন্ত টোলা আদায় হয়েছে ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা। ওই সময়ে পদ্মা সেতুতে ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯ যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর আগে, ২৬ জুন ২০২২ হতে ২৫ জুন ২০২৩ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোট টোলা আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। ওই সময় পদ্মা সেতু দিয়ে মোট ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি পরিবহন পারাপার হয়েছে।

অভিজ্ঞজনেরা মনে করেন,পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বাধা দূর হবে এবং একটি সমন্বিত ও একীভূত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ উন্মোচিত হবে, যা বাংলাদেশের শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নেরও অন্যতম পূর্বশর্ত।পদ্মা সেতু করিডরের উভয় পাশে ব্যক্তি খাতের উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের যে সুযোগ সৃষ্টি হবে, তার সুবাদে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে বহুমাত্রিক প্রভাব। ইতিমধ্যে সেতু ঘিরে অ্যাপ্রোচ রোডের দুধারে বিভিন্ন শিল্প ও সেবা স্থাপনার সাইনবোর্ড দৃশ্যমান হচ্ছে। সেতু কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় ১৭টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার ও একাধিক শিল্পপার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। শুধু স্থানীয় বাজারমুখী নয়, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রাথমিক পদক্ষেপও অনেক উদ্যোক্তা ইতিমধ্যে গ্রহণ করছেন। এতে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে, বিশেষ করে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পণ্য ও সেবার সহজ চলাচলের কারণে ভোক্তা, উৎপাদক, রপ্তানিকারক, সেবা খাতকেন্দ্রিক কর্মকান্ড সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আহরণের নতুন নতুন সুযোগ ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,আন্তঃআঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটরযান চুক্তির বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে এই সেতুর ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, সেতুর দুই ধারে রেল সংযোগ, ট্রান্সএশিয়ান হাইওয়ে ও রেল সংযোগ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে পদ্মা সেতু। তারা  মনে করেন যোগাযোগ সংযোগ, বিনিয়োগ সংযোগ ও বাণিজ্য সংযোগ এই ত্রিমুখী সংযোগের সার্থক সমন্বয় করতে সক্ষম হলে পদ্মা সেতু হবে অর্থনৈতিক করিডরের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২২-২৩ সালের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল ও টোল আদায় উভয় বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত‌ সহজ করে দিয়েছে। এখন ঢাকা হতে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালে যাওয়া যাচ্ছে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায়। খুলনায় মাত্র চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে মানুষ।

ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে ঈদের আগে ও পরে ১৩ দিনে পদ্মা সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে ৪২ কোটি ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত দিয়ে মোট টোল আদায় হয়েছে ২১ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ৩৫০ টাকা। আর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে মোট টোল আদায় হয়েছে ২০ কোটি ৮২লাখ ৯৭ হাজার ৪০০ টাকা। গত ১০ জুন থেকে ২২ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এ টোল আদায় হয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। গত ১০ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্ত দিয়ে এই টোল আদায় হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন,পদ্মা সেতু আমাদের অর্থনেতিক মুক্তির এক অনন্য প্রতীকে পরিণত হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এ অঞ্চলের একুশটি জেলার অর্থনীতি ও সমাজে আসবে অকল্পনীয় পরিবর্তন। এই সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। দিনের পর দিন আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় বসে থাকবে না। আর ঝড়বৃষ্টিতে ফেরি বন্ধ থাকার কারণে মানুষের যাতায়াতও থমকে থাকবে না।

 একটি গবেষণা জরিপের তথ্যে প্রকাশ , পদ্মা সেতুর কারণে বছরে প্রায় বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ১.০৪ শতাংশের কর্মসংস্থান হবে। আরও সহজ করে বলা যায়, আগামী পাঁচ বছরে দশ লাখ অর্থাৎ বছরে দুই লাখ মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে। দশ বছর পর এই সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যাবে। দক্ষিণ বাংলায় বাংলাদেশের সাতাশ শতাংশ মানুষের বাস। বিচ্ছিন্ন থাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার সারাদেশের গড় হার থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি। সেতুর কারণে যোগাযোগ ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হলে এই অঞ্চলের দারিদ্র্যের হার প্রতিবছর ১.০১ শতাংশ হারে কমবে। এর প্রভাবে সারাদেশের দারিদ্র্য কমবে ০.৮৪ শতাংশ হারে।  আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি উন্নত হওয়ার কারণে প্রতিবছর দক্ষিণ বাংলার জিডিপি বাড়বে ২.৫ শতাংশ এবং জাতীয় পর্যায়ে জিডিপি বাড়বে ১.২৬ শতাংশ হারে। রেললাইন চালু হলে জিডিপিতে আরও ১ শতাংশ যুক্ত হবে।

 

একুশে সংবাদ/হা.কা/হা.কা

 

Link copied!