চলতি মৌসুমে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে নরসিংদীতে। লটকনের বাজারদর ভাল থাকায় এই এলাকার চাষীদের মনে হাসি ফুটে উঠেছে।
- নরসিংদীর লটকন সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় লটকন
- এবারে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার মেট্রিক টন
- নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা ফলন সব চেয়ে বেশি
- চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ
দেশে সবচেয়ে বেশি এবং সুস্বাদু লটকন হয় নরসিংদীতে। জেলার প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায় এ ফল। এ ফলের পুষ্টিগুণ কম বেশি সবার জানা। তাই বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই লটকন। নরসিংদী জেলার শিবপুর, পলাশ, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল রংয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান থাকায় এখানে লটকনের ফলন ভালো হয়।
জানা যায়, শরীরে ভিটামিন ‘সি’এর চাহিদা মেটাতে লটকন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছোট এ ফলটি ভিটামিন ‘বি-টু’, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানে ভরপুর। বাংলাদেশের লটকন চাষের বৃহত্তর এলাকা নরসিংদী জেলা। কারণ এ অঞ্চলের লটকন অন্য যে কোনো জেলা থেকে মিষ্টি এবং রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে লটকনের ফলন ভালো হয়। ফলে এ জেলার মানুষজন লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। লটকন চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে অনেক কৃষকের।
কৃষি ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমি বেশি। অন্যান্য এলাকার তুলনায় মাটির গুণ ও আবহাওয়ার জন্য জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় লটকন চাষ বেশি হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ১৭ টন লটকন উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টন লটকন উৎপাদন হবে বলে আশা নরসিংদী কৃষি ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। এছাড়াও জেলার পলাশ ও মনোহরদী উপজেলার কিছু এলাকায় লটকনের আবাদ হয়ে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বিশাল এলাকায় টিলা ও ঢালাসমৃদ্ধ লালমাটির এলাকা। গ্রামের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পরে ছায়াঘেরা লটকন বাগান। বাগানের অধিকাংশ গাছের গোড়া থেকে মগডালের শাখা-প্রশাখায় লটকন জড়িয়ে আছে। দেখতে মনে হয় যেন পুরো গাছে লটকনের ফুল ফুটছে। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে গাছে পাকা লটকন দেখে জিব্বায় জল এসে গেল। বাগানের গাছ থেতে লটকন ছিড়ে মুখে দিতেই চোঁখ বুজে গেল স্বাদে।
এ বিষয়ে মাছিমপুর ধানুয়া বাজারের লটকন ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান,
‘রসিংদী থেকে লটকন কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিক্রি করি। এখানে পাইকারিভাবে বাজারে মণ প্রতি দাম ৩ হাজার ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশে বিভিন্ন এলাকায় বেচা-বিক্রি করে মোটামুটি ভালোই লাভ হয়। পাঁচ সদস্যের পরিবার আমার, লটকনের ব্যবসা করে ভালোই আছি।’
সাধারচর ইউনিয়নের খালপাড় এলাকার রটকন চাষী রমজান আলী বলেন,
‘ লটকন কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ ও সময় বেশি লাগলেও পরবর্তী সময়ে বিঘা প্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। তবে সে তুলনায় লাভ বেশি হয়। কখনও কখনও এত বেশি ফল আসে যে গাছের কান্ড ও ডাল পর্যন্ত দেখা যায় না। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৬ থেকে ৯ মণ ফলন পাওয়া যায়।
রায়পুরা উপজেলার হাইমারা এলাকার শিহাব উদ্দিন বলেন,
‘এবছর মোট ৫ বিঘা জমিতে লটকন চাষ করেছি। স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকন জমিতেই পাইকারি বিক্রি করে দিয়েছি। পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন সংগ্রহ করে দেশে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। এবার দাম ভালোই পেয়েছি। লটকন চাষ করে আমরা খুশি।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি অফিসার মোহাম্মদ কাউছার আলম বলেন, লটকন চাষ বাড়াতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়াতে কৃষকরা লটকনের ন্যায্যদামও পাচ্ছেন। এই এলাকার মানুষ লটকন চাষের দিকে আরো ঝুঁকছেন। আমাদের জানামতে নরসিংদী জেলায় প্রায় ১৯শত হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে শিবপুরে। এবারে চলতি মৌসুমে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি।
একুশেসংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :