নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোক-কারুশিল্প মেলা। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় হাতে তৈরি বিভিন্ন রকমের আকর্ষণীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চারু কারু শিল্পীগণ। এ বছর মেলায় দুই লক্ষাধিক পর্যটক ও দর্শনার্থী সমাগম ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকবৃন্দ।
সরেজমিনে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) মেলা ঘুরে দেখা যায়,
বিশাল মাঠ জুড়ে চারু-কারু শিল্পীদের হাতে তৈরি নানা পণ্যের প্রদর্শনীর স্টল। যেমন বাঁশ, বেত, কাঠ, শোলা, মাটি, তামা, কাঁসা ও পিতলের তৈরি পণ্যসহ পাটজাত দ্রব্য, নকশি কাঁথা, জামদানি কাপড়, শীতলপাটি ও শতরঞ্জির পসরা সাজিয়ে বসেছেন চারু-কারু শিল্পীরা। শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ, নাগরদোলা ও চরকিসহ নানা আয়োজন।
এই মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কেনাকাটার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যেমন তাৎপত্র জামদানি শাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার জিনিসপত্রের দোকানের সমরহ দেখা গেছে বেচারী নাও হচ্ছে হরদম। চাহিদার মত জিনিসপত্র কিনতে পেরে মেলায় আগত দর্শনার্থীরাও বিজয় খুশি। তবে অভিযোগ রয়েছে কিছু বিশৃঙ্খলার।
ময়মনসিংহ থেকে মেলাতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মাহমুদুল হাসান মার্জিন বলেন,
‘মেলার আয়োজন খুবই চমৎকার। বিভিন্ন আইটেম কেনাকাটা করতে পেরে খুশি লাগছে। কিন্তু কিছু বিশৃঙ্খলাও আছে, যেমন- মেলায় ঘুরতে এসে বিনোদনের পাশাপাশি পড়তে হয়েছে বিরম্বনায়। আমার সাথে আসা আমার ফুফুর মোবাইল চুরি হয়েছে। যেটা দুঃখজনক। এখানে বোরকাপড়া মোবাইল ছিনতাইকারীর সংখ্যা মনে হয় বেশি। শুধু আমাদের নয়, শোনাগেল আরো অনেকের এমনটা হয়েছে। এটা দুঃখজনক, মেলা কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তী সময়ে এর এফেক্ট পড়বে।’
ঢাকা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা তাসফিয়া আলম নীতি জানান,
‘মেলার আয়োজন অনেক সুন্দর। সকাল দশটার সময় জাদুঘরের পাশেই পানাম নগরীতে ঘোরাঘুরি করলাম। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে জাদুঘরের মেলাতে প্রবেশ করেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে প্রাচীনকালের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন প্রদর্শনী চোখে পড়েছে। খুব আনন্দ পেলাম, প্রাচীনকালের অনেক জিনিসপত্রই দেখতে পেয়েছি। তবে শুক্রবার হওয়াতে দর্শনার্থীর পরিমাণটা একটু বেশি ছিল বিধায় কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে। তারপরেও ভালোই লেগেছে।’
লোক-কারুশিল্প মেলাকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁয়ের একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ব্যাপক লোকের সমাগম সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগে মেলাতে প্রবেশের আগে রাস্তায় যেসব খাবারের দোকানগুলি আছে, অভিযোগ রয়েছে তারা ইচ্ছামত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে খাবারের মূল্য বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এসবের কারণে দর্শনার্থীরা কিছুটা হতাশায় ভুগছেন। তবে মেলা কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে নজর দেওয়া। যাতে একটা শৃঙ্খলার ভিতরে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁর মালিকদের আনতে পারেন। তাহলে দর্শনার্থীরা বিড়ম্বনা ভুগবেন না।
এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শণার্থীদের অভিযোগ, যাতায়াতের জন্য সিএনজি, অটোরিকশা এবং বাংলা রিক্সাগুলো অন্যান্য সময়ের তুলনায় তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। যেমন, মোরগাপাড়া চৌরাস্তা থেকে জাদুঘর পর্যন্ত অন্যান্য সময় অটোরিক্সার ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা, যা মেলা উপলক্ষে নিচ্ছেন ২০ টাকা। এব্যাপারে একজন অটোরিক্সা চালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন- অন্যান্য সময়ে তুলনায় মেলার সময় রাস্তায় জ্যামের পরিমান বেশি তাই সময়মত আমরা নির্দিষ্ট স্থানে যাতায়াত করতে পারি না বিধায় এ সময় ভাড়াটা একটু বেশি নেই।
মেলার আয়োজকরা জানান, মেলায় প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে জারি, সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, লালন ও হাছন রাজার গানসহ পুঁথি পাঠের আসর। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক বড় সর্দার বাড়ি দেশি বিদেশি পর্যটক ও দর্শণার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। তাদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, আনসার বাহিনী, স্কাউট দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নিয়োজিত থাকবে। তবে মেলায় কারু শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সংস্কৃতি কর্মীরা।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কতৃপক্ষ জানান, ‘দেশে বিদেশে চারু কারু শিল্পীদের পরিচিতি আরও বাড়াতে ভবিষ্যতে তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যুক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এর মাধ্যমে চারু কারু শিল্পীদের পরিচিতি, প্রচার প্রসার এবং তাদের পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :