সাম্প্রতিককালে প্রতিভাবান কথাশিল্পীদের একজন সনোজ কুণ্ডু। বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ "সবুজ দ্বীপের নোঙর"। বইটি প্রকাশ করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রকাশন "বিদ্যাপ্রকাশ। স্টল নং ১৩০, প্রচ্ছদশিল্পী: ধ্রুব এষ, মূল্য: ২৮০/- টাকা।
প্রায় সবকটি গল্পই জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। যেসব পাঠক অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে জীবনকে উপলব্ধি করতে চায় বা জীবনের বহুরূপ উদঘাটন করার তৃষ্ণা রয়েছে, তাদের কাছে "সবুজ দ্বীপের নোঙর " গ্রন্থটি হতে পারে স্বপ্নপূরণের প্লাটফরম। সনোজ কুণ্ডুর গল্পের কাহিনিতে রয়েছে নান্দনিক বোধের শৈল্পিক প্রকাশ। প্রাণবন্ত ভাষাশৈলির সম্মিলন, জীবনদর্শন, প্রেম বিরহ, হৃদয়ভাঙ্গা ক্ষরণ উক্ত গ্রন্থের গল্পগুলির কাহিনি ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গল্পের ভেতর রয়েছে, মৈনাক পাহাড়ের কান্না, পাগলের হাট, কেবিন নম্বর ৪১০, গোলাপের কাঁটায় রক্তক্ষরণ এবং মতিলাল ডোমের ব্যানার্জী হয়ে ওঠার গল্প ইত্যাদি। তবে " মতিলাল ডোমের ব্যানার্জি হয়ে ওঠার গল্প" গল্পটি গ্রন্থের সেরা গল্প। টগর নামের পরিচয়হীন এক সুন্দরী যুবতী যখন বেওয়ারিশ কুকুরের মতো রাস্তাঘাটে ঘুরে বাড়াচ্ছিলো, মতিলাল তাকে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে হাসপাতালের চাকুরির ব্যবস্থা করে। মন দেওয়া-নেওয়ার সূত্রপাত তখন থেকেই। একদিন ওরা বিয়ের পিঁড়িতে বসে। আবেগের মোহটা ছিলো ক্ষণস্থায়ী। টগর বুঝতে পারে মতিলাল ডোমের মতো সমাজের একজন অস্পৃশ্য কিংবা যৌনশক্তি হারানো মানুষটি তার স্বামী হবার যোগ্য নয়। তাইতো মতিলালের জীবন থেকে সে মুক্তি চায়।
" আমি তো তোকে ধরে রাখিনি বউ!" মতিলাল বলে।
"ধরে রেখেছিস মনের রশি দিয়ে। আমি ছটফট করে মরছি কিন্তু সেই অদৃশ্য রশিটাকে ছিঁড়তে পারছি না" অশ্রুসজল চোখে টগর বলে।
"মনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখলেই কি মানুষটারে ধরে রাখা যায়রে বউ! তুই সুখের ঠিকানা খুঁজে পেলে চলে যা! আমি তোকে বেঁধে রাখবো না! "
বিচ্ছেদের সীমারেখা টেনে টগর চলে গেল। মতিলাল দৃঢ় বিশ্বাসকে সত্যি করে টগর সত্যিই একদিন তার কাছে ফিরে আসে। তবে হোগলায় মোড়ানো লাশ হয়ে। হাসপাতালের মর্গে তার ঠিকানা হয়। পোস্টমর্টেমের আগেই লাশটি চুরি হয়। লাশ চুরির অপরাধে পুলিশ মতিলালকে একদিন গ্রেফতার করে।
নিজের দোষ স্বীকার করে মতিলাল আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। " হুজুর আমার বউ টগরের লাশ আমিই চুরি করেছি। ঐ লাশ চৌবাচ্চার চুনজলে ভিজিয়ে শরীর থেকে পচা মাংস খসিয়ে গ্যামাক্সিন মাখিয়ে কঙ্কাল বানিয়ে নিজের চোখের সামনে রেখেছি। চিরকাল এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারব যে, আমার ভালবাসার টগর আমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যায়নি।"
গল্পগুলো পাঠকের মনে অন্যরকম শিহরণ জাগিয়ে তুলবে। মানুষের অন্তর জগতের স্বরূপ অন্বেষণের নেশায় মত্ত হয়ে ভিন্নধর্মী কাহিনি সৃষ্টিতে গল্পকার যেন সিদ্ধহস্ত।
গল্পের কাহিনির রহস্যের স্রোতে পাঠক ডুবে গিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন নতুন রূপে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :