এক যুগ আগে দেখা অনেক কিছুই বদলে গেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনের জিমনসিয়ামে লেগেছে উন্নতির ছোঁয়া। মাটিতে বিছানো ম্যাটের বদলে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন সেখানে বসিয়েছে আধুনিক সেফটি পিট। আরও স্পষ্ট করে বললে এ যেন ফোমের পুকুর! আর এসব দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন সাইক সিজার।
আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশকে প্রথম সোনার পদক এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই জিমন্যাস্ট। প্রায় বারো বছর পর আবারও শেকড়ের টানে বাংলাদেশে এসেছেন সাইক সিজার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে এসে আজ ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার নিজের উত্তরসূরীদের সঙ্গে কাটালেন আনন্দ বিকেল।
গত ২৯ মে-১১ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৬তম জুনিয়র আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে অংশ নেন মেনটন টনি ম্রো, রাফিল আহমেদ, প্যান থুই ম্রো,, রাজীব চাকমা, মং চিং প্রো ত্রিপুরা ও ওয়াই মং মারমা। যদিও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ কোনো পদক জিততে পারেনি। কিন্তু হাত ছোঁয়া দূরত্ব থেকে পদক না জেতার আফসোসে পুড়েছেন বিকেএসপির জিমন্যাস্ট রাফিল। ভল্টিং টেবিলে টাইব্রেকিং পদ্ধতিতে হয়েছেন চতুর্থ। গুরুপ পর্বে শক্তিশালী চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জিমন্যাস্টদের টপকে সেরা আটে কোয়ালিফাই করেন রাফিল।
বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো অ্যাথলেট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন কীর্তি গড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এমন অর্জনের জন্য আজ জিমন্যাস্টদের হাতে আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাফিল পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি পাঁচ জিমন্যাস্টদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার করে টাকা। এছাড়া জাতীয় দলের কোরিয়ান কোচ চো সাং ডং পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। সহকারী কোচদের প্রত্যেকে পেয়েছেন ২৫ হাজার করে।
পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) হাবিবুর রহমান হাকিম, জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান, বিওএর কোষাধক্ষ্য ও বাস্কেটবল সাধারণ সম্পাদক একে সরকার, বক্সিং ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী বক্সার জিনাত ফেরদৌস।
বাংলাদেশের হয়ে সাইক সিজার খেলেছেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। এছাড়া সাউথ সেন্ট্রাল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ গেমস ও এশিয়ান গেমসে অংশ নেন তিনি। অলিম্পিকে বাংলাদেশ প্রথম পদকের স্বপ্ন দেখেছিল তাকে ঘিরেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। চোটের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনি ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কোচিং পেশায় যুক্ত হয়েছেন সাইক। ২০১৫ সালে শুরু করেন কোচিং পেশা। নিজের মাতৃভূমিতে আবার আসতে পেরে রোমাঞ্চিত সাইক সিজার, ‘এই ফ্লোরে, এখানকার জিমনেসিয়ামে কত অনুশীলন করেছি! এখানে এসে সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ছে। আমি সত্যি রোমাঞ্চিত। আমি শৈশবে অনেকবার এখানে এসেছি। কখনোই আমি নিজের শেকড়কে ভুলিনি।’
আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে জিমন্যাস্টরা ভল্টিং টেবিল, পমেলহর্সসহ বিভিন্ন ইভেন্টের ডেমোনেস্ট্রেশন করে দেখান। সাইক সিজার খুব কাছে গিয়ে সেগুলো দেখেছেন। এরপর কথা বলেন কোচের সঙ্গে। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিভাবে জিমন্যাস্টিকসে এসেছেন সেই সব কথা বলেন। লন্ডন অলিম্পিকে নিজে প্রত্যাশা মতো ফল করতে পারেননি কেন , সেই রহস্য ভেঙে বলেন, ‘২০১২ সালে জানুয়ারিতে আমার বাইসেপ ছিড়ে যায়। কিন্তু সেটা কাউকে বলিনি। কথাটা গোপন করেছিলাম। আজ বলছি সেটা। লন্ডনে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে সেটা ঘটে। এরপরও আমি লন্ডনে অলিম্পিকে খেলেছিলাম।’ চোট নিয়েই খেলেন ফ্লোর, প্যারালাল বারস ও হরাইজন্টাল বারে।
আজ বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের নানা রকম টিপস দেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলাদেশে এসে দুয়েক মাসের জন্য কোচিং করাতে চান সাইক সিজার।
ফেডারেশনের সভাপতি বশির আল মামুন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের মাঝে দেখছেন অনেক সম্ভাবনা, ‘আমি এই ছেলেদের মাঝে অনেক সম্ভাবনা
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :