জাতীয় দল ও দলের রাডারে থাকা প্রায় সবাইকে নিয়েই আজ থেকে ফিটনেস ক্যাম্প শুরু করবে বাংলাদেশ দল। যেখানে ক্রমান্বয়ে ৩২ জন ক্রিকেটারের ফিটনেস পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে ২০ থেকে ২২ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করবে বিসিবি। যেখান থেকে মূলত বেছে নেওয়া হবে এশিয়া কাপের চূড়ান্ত দল।
এমনিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে বেশিরভাগ জায়গা নিশ্চিত। নিয়মিত খেলার খোঁজখবর রাখেন এমন যেকেউ দলের ১১-১২ জনের নাম লিখে ফেলতে পারেন। সংশয় আছে কেবল দুই-তিনটি জায়গা নিয়ে। যা নিয়ে জটিলতায় ভুগছে টিম ম্যানেজম্যান্টও। এরই মধ্যে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে জাতীয় দল নির্বাচন নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। দড়ির একদিকে টিম ম্যানেজমেন্ট ও জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেল, অন্যদিকে কতিপয় পরিচালক।
প্রভাবশালী এ পরিচালকরা চান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দলের সাত নম্বর পজিশনের জন্য নেওয়া হোক। রিয়াদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। যদিও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাওয়া ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কিল ক্যাম্পের জন্য কোচের দেওয়া ২০ জনের তালিকায় রিয়াদের নাম নেই। জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের ভোটও পড়েনি মিডলঅর্ডার এ ব্যাটারের ব্যালটে। ফলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য ২০ জনের একটি পুল তৈরি করা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আনফিট ও দুর্বল ফিল্ডারের জায়গা নেই হাথুরুসিংহের দলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে কোচ সাফ জানিয়ে দেন, এবার ফিল্ডিংয়ের ওপর জোর দেবেন তিনি। অর্থাৎ ফিল্ডিংয়ে তুখোড় ক্রিকেটারকে দলে চাওয়া তাঁর। যে কারণে ইংলিশদের বিপক্ষে কাঙ্ক্ষিত মানের ফিল্ডিং না পাওয়ায় রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়।
টানা তিনটি সিরিজে না খেলা ৩৭ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ হজ পালন শেষে দেশে ফিরে ক্রিকেটে মনোযোগী হন। বিসিবি একাডেমি মাঠে কয়েক দিন ধরে এককভাবে অনুশীলন করছেন তিনি। এরপর থেকে রিয়াদকে দলে চাই এ রকম একটি ‘স্লোগান’ ওঠে। বিসিবির কয়েকজন পরিচালক তাতে প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বর পজিশনে রিয়াদকে কেন পছন্দ– এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিচালক বলেন, ‘রিয়াদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনেক। জাতীয় দলের অনেক জয়ের সঙ্গী সে। আমার মনে হয়, গত কয়েকটি সিরিজে ওই জায়গায় যারা খেলেছে, তাদের চেয়ে সে ভালো করবে।’ রিয়াদের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে পাল্টা যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘কিছু বোলারের ফিল্ডিংও ভালো নয়।’
রিয়াদ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন জিম্বাবুয়েতে। গত বছর টি২০ দল থেকে বাদ পড়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্যও বিবেচিত হচ্ছেন না এ বছর থেকে। যদিও মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার শেষ ১০ ইনিংসে খুব একটা খারাপ করেননি, পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস রয়েছে দুটি (৮০*, ৭৭)। ত্রিশছোঁয়া ইনিংস তিনটি। এরপরও কেন অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটারের প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের অনীহা, জানতে চাওয়া হলে জাতীয় দল-সংশ্লিষ্ট একজন স্ট্রাইকরেট তুলে ধরেন। আসলে সাত নম্বর পজিশনে রিয়াদের স্ট্রাইকরেটের গড় ৭৭.২৯। যেটা স্লগে ব্যাটিংয়ের দাবি মেটাতে ব্যর্থ বলে মনে করা হয়। জাতীয় দলের এক সাবেক ক্রিকেটারের মতে বর্তমান সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতি ওভারের গড় রান ৫.১৫। সেখানে সাত নম্বরে নামা রিয়াদ গড়ে ৪.৬৫ রান করতে পেরেছেন। এতে করে ব্যাটিং পজিশন অনুযায়ী দলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, ‘এ পজিশনের ব্যাটারদের কাছ থেকে ক্যামিও ইনিংস আশা করা হয়। কম বলে বেশি রান চাওয়া থাকে। কোচের সে চাওয়া পূরণ করতে পারছেন না অন্যরাও। তবে তুলনা করা হলে রিয়াদের চেয়ে তরুণরা কিছুটা এগিয়ে থাকবেন।’
ফিল্ডিং আর বোলিং বিবেচনায় সাত নম্বরে কোচের তালিকায় রয়েছেন আফিফ হোসেন, শেখ মেহেদী, শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও সৌম্য সরকার। সৌম্য সম্প্রতি ইমার্জিং এশিয়া কাপে অলরাউন্ডার ভূমিকায় খারাপ করেননি। তবে বেশি ভালো ছিল মেহেদীর পারফরম্যান্স। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে নির্বাচকদের মতামত জানতে চাওয়া হলে একজন বলেন, ‘এই পজিশনের জন্য হাথুরুসিংহকে বলা হবে খেলোয়াড় বেছে নিতে।’
কতটা পরিপার্শ্বিক চাপ থাকলে নির্বাচকরাও এভাবে চিন্তা করতে পারেন। প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে পরিচালকরাই বা কেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে এত আগ্রহ দেখাচ্ছেন? ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কাছে শেষ পর্যন্ত দেশের স্বার্থ বিসর্জন যাবে না তো?
একুশে সংবাদ/এপি
আপনার মতামত লিখুন :