বাছাইপর্ব থেকে উঠে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে শক্তিশালী পাকিস্তান। আগামীকাল হায়দারাবাদের রাজিব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। চার বছর আগে বাজে ভাবে বিশ্বকাপ শুরুর দু:সহ স্মৃতি ভুলে যেতে চায় উজ্জীবিত বাবর আজমের দল।
২০১৯ সর্বশেষ বিশ্বকাপে নটিংহ্যামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরাজয় দিয়ে আসর শুরু করেছিল পাকিস্তান। ক্যারিবীয়দের বোলিং তোপে ২১.৪ ওভারে মাত্র ১০৫ রানেই গুটিয়ে গিয়েছির পাকিস্তান। এরপর ৭ উইকেটের বড় পরাজয় দিয়ে আসর শুরু করা পাকিস্তান নেট রান রেটে পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা হারায়। চার বছর আগের দলটি থেকে অনেকটাই বদলে যাওয়া পাকিস্তান এবারের বিশ্বকাপে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বর দল হিসেবে খেলতে এসেছে। অধিনায়ক বাবর আজম ওয়ানডে ব্যাটার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। এসবই ভারতের মাটিতে পাকিস্তানকে বাড়তি উদ্দীপনা যোগাচ্ছে।
ভারতের কাছে গত মাসে এশিয়া কাপে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তান। এরপর সুপার ফোরে শ্রীলংকার কাছে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় পাকিস্তান। বিশ্বকাপ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও পরাজিত হয়েছে বাবর আজমের দল।
সাম্প্রতিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও বাবর আজম জানিয়েছেন তার দল বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যদিও বর্তমান দলের মাত্র দুজনের ভারতের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে টি-টোয়িন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান।
বাবর বলেন, ‘গত সপ্তাহে ভারতে আসার পর আমাদের অনুশীলণ বেশ ভাল হয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে ভাল ফল না হলেও কিছু কিছু জায়গায় আমরা নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছি।’
দুই প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানী অধিনায়ক যথাক্রমে ৮০ ও ৯০ রান করে নিজের যোগ্যতার প্রমান ঠিকই দিয়েছেন। যদিও এশিয়া কাপে ভাল খেলতে পারেননি। কালকের ম্যাচ সম্পর্কে বাবর বলেছেন, ‘যেকোন টুর্ণামেন্টের প্রথম ম্যাচ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারনে অবশ্যই জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে মুখিয়ে আছি।’
তবে ১৯৯২ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান কোনভাবেই নেদারল্যান্ডসকে খাটো করে দেখছে না জানালেন বাবর। এর আগে ছয়বারের মোকাবেলায় প্রতিবারই পাকিস্তান জয়ী হয়েছে। বিশ্ব র্যাংঙ্কিংয়ে ১৪তম স্থানে থাকা নেদারল্যান্ড এ বছরের শুরুতে জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্ব খেলে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাছাইপর্ব থেকে উন্নীত হয়ে মূল আসরে ভারতে খেলতে আসা অপর দল শ্রীলংকা।
বাবর বলেন, ‘এবারের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় আমি নেদারল্যান্ডসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বাছাইপর্বে তারা দারুন ক্রিকেট খেলেছে এবং এ কারনেই তারা এখানে। এখানে আত্মতুষ্টির কোন জায়গা নেই। প্রথম ম্যাচ থেকেই আমরা লড়াইয়ে নেমে পড়বো।’
ভারতের ধীর গতির উইকেটে পাকিস্তান তাদের স্পিন ট্রায়ো শাদাব খান, উসমান মির ও মোহাম্মদ নাওয়াজের সাথে দুই পার্ট-টাইমার ইফতিখার আহমেদ ও আগা সালমানকে কাজে লাগাতে চায়। যদিও কাঁধের অস্ত্রোপচারের কারনে পেসার নাসিম শাহ কাল খেলতে পারছেন না। তবে নতুন বলে দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদী ও হারিস রউফ প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার বিশ্বমঞ্চে খেলতে আসা নেদারল্যান্ডস এ পর্যন্ত বিশ্বকাপে মাত্র দুটি জয় পেয়েছে। বাছাইপর্বে খেলতে না পারা দুই স্পিনার কলিন আকারম্যান ও রোয়েলফ ফন ডার মারু ও পেসার পল ফন মিকেরেন দলে ফিরেছেন। উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ^কাপে খেলা একমাত্র সদস্য হিসেবে বর্তমান দলে টিকে আছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ওয়েসলি বারেসি। তার অভিজ্ঞতার সাথে দলে আছেন ম্যাক্স ও’দাউদ, বিক্রমজিত সিং, তেজা নিদামানুরু ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের মত ব্যাটাররা, যাদের উপর দলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে। তবে বাছাইপর্বে দারুন ছন্দে থাকা দুই অল রাউন্ডার বাস ডি লিডস ও লোগান ফন বিককে নিয়ে এবারের বিশ^কাপে বেশী আশাবাদী ডাচরা।
জিম্বাবুয়েতে ডি লিডস ২৮৫ রান করা ছাড়াও ১৫ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে ফন বিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুপার ওভারের জয়ে করেছেন ৩০ রান, সাথে নিয়েছেন দুই উইকেট। অধিনায়ক এডওয়ার্ডস বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই বিশেষ কিছু। অনেকেই এই টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্ন দেখেছে।’
র্যাংকিংয়ের শীর্ষ সারিতে না থাকা সত্ত্বেও ডাচ দলে আত্মবিশ্বাসের মোটেই অভাব নেই। কোচ রায়ান কুক বলেছেন, ‘এই বিশ্বকাপে খেলতে আসার পথে আমার যে ধরনের পারফরমেন্স করেছি তাতে আমরা সকলেই ভাল কিছু করার ব্যপারে আশাবাদী। এমনকি সেমিফাইনালে খেলতে হলে পাঁচ থেকে ছয়টি ম্যাচে জিততে হবে, সেটা অর্জনেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :