পিছিয়ে পড়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে লিভারপুল। গতকাল লিগ কাপের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে পিছিয়ে পড়ে ফুলহ্যামকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা লিভারপুল। এবারের মৌসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচে এভাবেই লিভারপুল প্রথমে গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত নিজেদের রক্ষা করেছে।
এ্যানফিল্ডে প্রথমবারের মত লিগ কাপের সেমিফাইনালে খেলতে নেমে উইলিয়ানের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ফুলহ্যাশ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কার্টিস জোনস ও কোডি গাকপোর তিন মিনিটের দুই গোলে লিভারপুলের জয় নিশ্চিত হয়। আগামী ২৪ জানুয়ারি ক্রাভেন কটেজে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগে নি:সন্দেহে লিভারপুল কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে।
এনিয়ে এবারের মৌসুমে ১৪টি ম্যাচে প্রথমে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়েছে জার্গেন ক্লপের দল। সেই ম্যাচগুলোর মধ্যে জয়ী হয়েছে সাতটিতে, পরাজিত হয়েছে তিনটিতে।
গাকপো বলেছেন, ‘এটা পুরো গ্রæপ, ক্লাব ও শহরের মানসিকতা। সবাই এই পরিকল্পনাকে পছন্দ করেছে। যাই হোকনা কেন সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আবারো এটি প্রমান করেছি। সবার মানসিকতা যদি মিলে যায় তবে অনেক সুন্দর মুহূর্ত আসবেই।’
আফ্রিকান নেশন্স কাপের কারনে কাল লিভারপুল দলে ছিলেন না মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ। ইনজুরির কারনে ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ডসহ আরো অনেকেই ছিলেন না। প্রথমার্ধে এই বিষয়গুলো লিভারপুলের ম্যাচে প্রভাব ফেলেছে।
১৯ মিনিটে উইলিয়ানের গোলে এগিয়ে যায় ফুলহ্যাম। এ্যানফিল্ডে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এর থেকে ভাল শুরু আর হতে পারেনা। ভার্জিল ফন ডিকের ভুলে আন্দ্রেস পেরেইরার পাসে উইলিয়ান লিভারপুল গোলরক্ষক কাওমিন কেলেহারকে পরাস্ত করেন। বিরতির পর ফুলহ্যাম নিজেদের ভাগ্য লিভারপুলের হাতে তুলে দেয়। নিজেদের লিড বাড়িয়ে নেবার কোন সুযোগই তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। ম্যাচে ফিরে আসার লক্ষ্যে ক্লপ মধ্যমাঠ থকে গাকপো ও ডারউইন নুনেজকে আক্রমনভাগে লুইস দিয়াজ ও দিয়োগো জোতার সাথে উঠিয়ে নেন। যে কারনে লিভারপুলের মধ্যমাঠ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই সুযোগে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ফুলহ্যাম বেশ কয়েকটি আক্রমনের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি। ববি ডি করডোভা-রেইড ফুলহ্যামের হয়ে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন। তার শটটি কেলেহার সহজেই রুখে দেন।
ফুলহ্যাম ম্যানেজার মার্কো সিলভা বলেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা সত্যিই দারুন মুহুর্ত কাটিয়েছি। আমাদের অন্তত আরো একটি গোল করা উচিৎ ছিল। আমরা ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছি, কিন্তু জয়ের সুযোগ ছিল। ঘরের মাঠে সমর্থকরা আমাদের সাথে থাকবে। ফুলহ্যামের জন্য ঐ ম্যাচটি একটি দারুন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে।’
৬৮ মিনিটে জোনসের দুরপাল্লার শট দূর্ভাগ্যবশত: ফুলহ্যাম ডিফেন্ডার টোসিন আডারাবিয়োর ডিফ্লেকটেড হয়ে বার্ণাড লেনোকে পরাস্ত করার আগ পর্যন্ত লিভারপুল আক্রমনভাগে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কয়েক মিনিটর পরে নয়বারের লিগ কাপ বিজয়ীরা প্রথমবারের মত ম্যাচে লিড পায়। বদলী খেলোয়াড় নুনেজের লো ক্রসে পোস্টের খুব কাছে থেকে গাকপো স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। শেষ তিন মিনিটে নুনেজের তিনটি প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে ফুলহ্যামকে রক্ষা করেছেন লেনো। উরুগুইয়ান এই স্ট্রাইকারের একটি হেড ও পরে কোনাকুনি এ্যাঙ্গেল থেকে একটি শট জার্মান গোলরক্ষক নিজের দক্ষতায় রুখে দেন। ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে লেনো ম্যাচের সবচেয়ে সেরা সেভটি করেন। সাবেক এই আর্সেনাল গোলরক্ষক নুনেজকে রুখে দিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি।
ক্লপ বলেছেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা যতগুলো ম্যাচ খেলেছি তার মধ্যে এটাই মোটেই সেরার তালিকায় পড়বে না। কিন্তু দিনের শেষে জয় নিশ্চিত হয়েছে, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়ে যায়নি। ফাইনালে খেলতে হলে আমাদের অবশ্যই ফুলহ্যামে ভাল করতে হবে। আমাদের ফলাফল প্রয়োজন।’
ওয়েম্বলির ফাইনালে মিডলসব্রো কিংবা চেলসির বিপক্ষে যেকোন দলের সাথে মুখোমুখি হোক না কেন ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে লিভারপুলই। যদিও দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠের পুরো সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফুলহ্যাম জয়ের ব্যপারে আশাবাদী।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :