দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দারুনভাবে লড়াইয়ে ফিরে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৩-২ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনল নিশ্চিত করেছে স্পেনের এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ।
এর আগে গত মাসে প্রথম লেগে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এস্তাদিও মেট্রোপলিটানোতে ফেডেরিকো ডিমারকোর গোলে ইন্টার যখন লিড নেয় তখন এ্যাথলেটিকোর বিদায় সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দ্রæতই আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের গোলে সমতায় ফিরে এ্যাথলেটিকো। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে বদলী খেলোয়াড় মেমফিস ডিপের গোলে দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ সমতায় ফিরে এ্যাথলেটিকো। অতিরিক্ত সময়ে আর কোন গোল না হওয়ায় ম্যাচটি ফলাফল নিষ্পত্তির জন্য পেনাল্টি শ্যুট আউটে প্রয়োজন হয়। টাইব্রেকারে ইন্টার তাদের পাঁচটি পেনাল্টির মধ্যে তিনটি মিস করেছে। তারকা স্ট্রাইকার লটারো মার্টিনেজের গোল মিসে এ্যাথেলেটিকোর শেষ আট নিশ্চিত হয়।
এ্যালেক্সিস সানচেজ ও ডেভি ক্লাসেনের শট রুখে দিয়ে এ্যাথলেটিকোর জয়ে সহযোগিতা করা গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক বলেছেন, ‘আমি মনে করি পেনাল্টি একটি লটারি। আজ আমি দুটি শট সেভ করেছি। পেনাল্টি সেভ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বাইরে থেকে কখনো কখনো এটা সহজ মনে হয়, আসলে তা নয়। দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি দারুন খুশী, কারন আমি বিশ্বাস করি আজ আমরা অসাধারণ খেলেছি। ম্যাচের শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছি। হয়তোবা প্রথম লেগে নিজেদের প্রমান করতে পারিনি। কিন্তু হতে পারে আমাদের সামনে ভাল কিছু অপেক্ষা করছিল।’
বুধবারের ম্যাচের আগে দুই দলের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে ইন্টার বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল। এ বছর ইন্টার যেখানে সব মিলিয়ে ১৩টি ম্যাচে জয়ী হয়েছে সেখানে এ্যাথলেটিকো তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে। তারপরও স্প্যানিশ রাজধানীতে ম্যাচটিতে উত্তেজনার পারদ ছিল উঁচুতে। এ্যাথলেটিকো যেকোন মূল্যে ম্যাচটিতে জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টারও ছেড়ে কথা বলেনি। এ্যাথলেটিকোর পক্ষে অবশ্য ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লেগেছে। এবারের মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে ২১ ম্যাচের ১৯টিতেই জয়ী হয়েছে এ্যাথলেটিকো। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে নক আউট পর্বে ১৭ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে দিয়েগো সিমিওনের দল। সিরি-এ টেবিলের শীর্ষে থাকা ইন্টারের বিপক্ষে অনেকটাই অসম্ভব ছিল এ্যাথলেটিকোর জয়ী হওয়া। বিশেষ করে প্রথম লেগের পর দ্বিতীয় লেগেও শুরুতে গোল হজম করে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।
ডিপের গোলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলতে হয়েছে দুই দলকে। এর আগে তার আরো একটি শট পোস্টে লেগে ফেরত আসে। অতিরিক্ত সময়ের ঠিক আগে রডরিগো রিকুয়েলমে ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি নষ্ট না করলেও এ্যাথলেটিকো হয়তো তখনই জয় নিশ্চিত করতে পারতো। অন্যদিকে বিরতির পরপরই মার্কোস থুরাম ও নিকোলো বারেলার বাজে ফিনিশিংয়ে ইন্টার দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে।
সিমোনে ইনজাগির ইন্টার এখন ২০তম সিরি-এ শিরোপা জয়ের দিকে মনোযোগী হবে। কাল ম্যাচ শেষে ইনজাগি বলেছেন, ‘একবার যখন আমরা লিড নিয়েছিলাম তখনই আরো ভাল খেলা উচিৎ ছিল। ডিমারকো আমাদের যে সুবিধা দিয়েছিল তা তিন থেকে চার মিনিটও ধরে রাখতে পারিনি। ঐ মুহূর্তে ম্যাচটি আমাদের হাতে ছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে এ্যাথলেটিকো ম্যাচে ফিরে আসে।’
প্রথম লেগে বেশ কিছু সহজ সুযোগ নষ্ট করে ইন্টার বড় ব্যবধানে জয়ের সুবিধা হাতছাড়া করেছে। দূর্ভাগ্য মূলত: তখন থেকেই পিছু নিয়েছিল। এই মুহূর্তে সিরি-এ লিগে এসি মিলানের থেকে ১৬ পয়েন্টের সুষ্পষ্ট ব্যবধানে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ইন্টার, মৌসুম শেষ হতে আর মাত্র ১০ ম্যাচ বাকি।
কাল শুরু থেকেই দুই দল বেশ আগ্রাসী হয়ে খেলেছে। ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাম দিক থেকে স্যামুয়েল লিনোর শট রুখে দেন ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। বিপরীতে ডেনজেল ডামফ্রাইসকে দুইবার হতাশ করেছেন ওবালাক। বিরতির ঠিক আগে অবশ্য ইন্টারই বেশী বিপদজনক হয়ে উঠেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বারেলার নিখুঁত কাট-ব্যাক থেকে আত্মবিশ্বাসী ডিমারকো প্রথম সুযোগে বল জালে জড়ান। ইন্টারের এই গোল উৎসব খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। দুই মিনিটের মধ্যে কোকের থ্রু বল থেকে গ্রীজম্যানের শট দুজন ডিফেন্ডারের ডিফ্লেকটেড হয়ে জালে জড়ায়। এ্যাথলেটিকোর হয়ে এটি গ্রীজম্যানের ১৭৬তম গোল।
বিরতির পরপরই গ্রীজম্যানের শট রুখে দেন সোমার। মার্টিনেজের পাস থেকে থুরামের শট অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। বারেলার দূর্বল শট ওবলাক সহজেই রুখে দেন। ৮৭ মিনিটে ডিপে আর কোন ভুল করেননি। দারুন লো ফিনিশিংয়ে এ্যাথলেটিকোকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :