মুস্তাফিজুর রহমান, দীপক চাহার, মাথিশা পাথিরানা সিএসকে-র তিন তারকা পেসারই জাতীয় দলের ডিউটি পালন এবং চোটের জন্য আইপিএল থেকে ইতিমধ্যে ছিটকে গিয়েছেন। বোলিং বিভাগ ভেঙেচুরে চুরমার। তাতেও অবশ্য ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাব চেন্নাই সুপার কিংসের। রবিবার ডাবল হেডারের প্রথম ম্যাচে ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ১৬৮ রান করার পরেও, ২৮ রানে জয় ছিনিয়ে নিল চেন্নাই। রবীন্দ্র জাদেজা, তুষার দেশপাণ্ডে, সিমরজিৎ সিং-দের দাপটে ৯ উইকেটে ১৩৯ রানে গুটিয়ে গেল পাঞ্জাবের ইনিংস।
এদিন ব্যাট এবং বল হাতে অনবদ্য পারফরম্যান্স জাড্ডুর। তার ইনিংসে ভর করে প্রথমে ১৬০ রানের গণ্ডি টপকায় সিএসকে, তার পর পাঞ্জাবের কোমর ভাঙতে তিন উইকেট তুলে নেন জাদেজা। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের হাত ধরে, নিজেদের ছয় নম্বর জয় তুলে নিয়ে, প্লে-অফের জন্য অক্সিজেন পেয়ে গেল চেন্নাই। উঠে এল পয়েন্ট টেবলের তিনে।
চলতি আইপিএলে প্রথম বার কোনও ম্যাচ হচ্ছে ধর্মশালায়। এদিন টস হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমেছিল সিএসকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অজিঙ্কা রাহানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। ৭ বলে মাত্র ৯ রান করে আর্শদীপ সিং-এর বলে কাগিসো রাবাডার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে দ্বিতীয় উইকেটে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের সঙ্গে কিছুটা দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু এই জুটিও দীর্ঘক্ষণ উইকেটে স্থায়ী হতে পারেননি। জুটিতে ৫৭ রান করার পর আউট হন রুতুরাজ। চারটি চার, একটি ছক্কার হাত ধরে ২১ বলে ৩২ করে রাহুল চাহারের বলে আউট হন সিএসকে অধিনায়ক। পরের বলেই শিবম দুবেকে ফেরান রাহুল চাহার। গোল্ডেন ডাক করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন শিবম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর এই নিয়ে দু`টি ম্যাচেই প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হলেন শিবম দুবে।
চেন্নাইয়ের ৭৫ রানের মাথায় আউট হয়ে যান ড্যারিল মিচেলও। ১৯ বলে ৩০ করে হর্ষাল প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। এক পর মইন আলি এবং রবীন্দ্র জাদেজার মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও, রানের গতি খুব একটা বেশি ছিল না। মইন ২০ বলে ১৭ করে স্যাম কারানের বলে আউট হন। শুরু থেকেই নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট পড়তে থাকায় কোনও জুটিই স্থায়ী হয়নি। হতাশ করেন মিচেল স্যান্টনার (১১ বলে ১১ রান), শার্দুল ঠাকুররাও (১১ বলে ১৭ রান)। এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া স্যান্টনারকে ফেরান রাহুল চাহার। শার্দুলকে বোল্ড করেন হর্ষাল। শার্দুলকে সাজঘরে ফেরানোর পরেই বলেই, মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও গোল্ডেন ডাকে বোল্ড করেন হর্ষাল। এ বারের আইপিএলে এই প্রথম বার শূন্য রানে আউট হলেন ধোনি।
তবে এদিন ৬ উইকেট পড়ার পরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজে না নেমে শার্দুল ঠাকুরকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। শার্দুল এসেই প্রথম দু`বলে একটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। ছক্কার ক্ষেত্রে অবশ্য ফিল্ডার শশাঙ্ক সিংয়ের দোষ। হাতের ক্যাচ ছেড়ে দেন তিনি। শার্দুল ক্রিজে এসে শুরুটা ভালো করলেও, বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। চেন্নাইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান (২৬ বলে) করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাঁর এই ইনিংসে রয়েছে তিনটি চার এবং দু`টি ছক্কা। ১৯.৪ ওভারে আর্শদীপের বলে জাদেজা আউট হয়ে গেলেও, তার জন্য সিএসকে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে। পাঞ্জাবের হয়ে রাহুল চাহার এবং হর্ষাল প্যাটেল তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। ২টি উইকেট নিয়েছেন আর্শদীপ সিং। একটি উইকেট নিয়েছেন স্যাম কারান।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাবের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই জনি বেয়ারস্টো (৬ বলে ৭) এবং রিলি রসৌকে (৩ বলে ০) বোল্ড করে সিএসকে-কে শুরুতেই অক্সিজেন দেন তুষার দেশপাণ্ডে। তবে তৃতীয় উইকেটে প্রভসিমরন সিং এবং শশাঙ্ক সিং মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেই জুটি ৫৩ রানের পার্টশিপেই ভেঙে যায়। ৪টি চারের হাত ধরে ২০ বলে ২৭ করে শশাঙ্ক সিং স্যান্টনারের বলে ক্যাচ আউট হন। শশাঙ্কের পিছন পিছন প্রভসিমরনও সাজঘরে ফেরেন। ২টি চার এবং ২টি ছয়ের হাত ধরে প্রভসিমরন ২৩ বলে ৩০ করে জাদেজার শিকার হন। প্রভসিমরনই পাঞ্জাবের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন। এর পর জিতেশ শর্মা, স্যাম কারান, আশুতোষ শর্মারা কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে পারেননি। স্যাম এবং আশুতোষকে ফেরান জাদেজা। জিতেশকে ফেরান সিমরজিৎ সিং।
৭৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়েই ম্যাচ হারের গন্ধ পাচ্ছিল পাঞ্জাব। এখান থেকে পিবিকেএস-এর কাউকে অঘটন ঘটাতে হত। কিন্তু সেই দায়িত্ব কেউ কাঁধে তুলে নিতে পারেননি। সিমরজিতের ডেলিভারিতে ১৩ বলে ১২ করে হর্ষাল প্যাটেল সাজঘরে ফেরেন। ১০ বলে ১৬ করে শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হন রাহুল চাহার। হরপ্রীত ব্রার (১৩ বলে ১৭) এবং কাগিসো রাবাডা (১০ বলে ১১) অপরাজিত থাকলেও, দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান করে পাঞ্জাব।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :