ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সোমবার প্যালেসের কাছে ৪-০ গোলে পরাজিত হয়ে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের অষ্টম স্থানে নেমে গেছে রেড ডেভিলসরা। এর ফলে আগামী মৌসুমে ইউরোপা মৌসুমে ইউনাইটেডের খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। লন্ডনের সেলহার্স্ট পার্কে মাইকেল ওলিস জোড়া গোল করেছেন। এছাড়া স্কোরশিটে আরো নাম লিখিয়েছেন ইন-ফর্ম জিন-ফিলিপ মাতেতা ও টিরিক মিচেল। ফেব্রুয়ারিতে অলিভার গ্লাসনারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেবার পর উড়তে থাকা ঈগলসরা এর মাধ্যমে নিজেদের আরো এগিয় নিয়ে গেল।
একইসাথে বড় এই পরাজয়ে ইউনাইটেড বস এরিক টেন হাগ আরো একবার চাপে পড়লেন। ইউনাইটেডে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে ইতোমধ্যেই ক্লাবটির সবচেয়ে বাজে কোচের তকমা তার গায়ে লেগে গেছে। কাল ম্যাচ শেষে হতাশ টেন হাগ বলেছেন, ‘আমি লড়াই চালিয়ে যাবো। দলকে সেরা পর্যায়ে প্রস্তুত করে তুলতে যা করার প্রয়োজন ছিল আমি করেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা যথেষ্ঠ ছিলনা। অন্তত এতদুর এসে তাই মনে হচ্ছে। সে কারনে এই ব্যর্থতার সব দায়ভার আমি নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছি।’
১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর মাত্র একবার ইউরোপীয়ান প্রতিযোগিতায় অনুপস্থিত ছিল ইউনাইটেড। ১০ বছর আগে ডেভিড ময়েসের অধীনে ঐ আসরে ইউনাইটেড টেবিলের সপ্তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছিল। যে কারনে মাত্র চার ম্যাচ পরেই স্কটিশ ময়েসকে ইউনাইটেড ছাড়তে হয়েছিল। প্রিমিয়ার লিগের আধুনিক যুগে ইউনাইটেড কখনই সাত নম্বরের নীচে থেকে লিগ শেষ করেনি। রোববার আর্সেনালের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচের আগে ইউনাইটেডের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তাতে ঐ রেকর্ড হয়তো আর ধরে রাখা সম্ভব নয়।
ইউনাইটেডের এই ব্যর্থতার অন্যতম মূল কারন ইনজুরি সমস্যা। মূল দলের খেলোয়াড়দের ইনজুরি প্রায় সময়ই টেন হাগকে দল নির্বাচনে সমস্যা ফেলেছে। কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। ডাচম্যান টেন হাগকে বাধ্য হয়েই কাসেমিরোকে সেন্টার-ব্যাক পজিশনে খেলাতে হয়েছে। কাসমিরোর সাথে আরো ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী জনি ইভান্স।
অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেসও ইনজুরির কারনে কাল অনুপস্থিত ছিলেন। ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারনে কখনো ক্লাবের কোন ম্যাচে অনুপস্থিত থাকার রেকর্ড ফার্নান্দেসের এটাই প্রথম। টেন হাগ বলেন, ‘পুরো মৌসুমে আমাদের ইনজুরি সমস্যা দারুন ভুগিয়েছে। ২০২৪ সালে এটা আমাদের চতুর্থ পরাজয়। যা খুব একটা বেশী নয়। প্রতিবারই আমরা বেশ কিছু সমস্যায় ভুগেছি। সবসময়ই সমস্যাগুলো কাটিয় উঠতে পেরেছি, কিন্তু আজ আর সেটা সম্ভব হয়নি।’
যদিও কাল ইউনাইটেডের মধ্যে কোন ধরনের লড়াইয়ের মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। গত সাত ম্যাচে রেলিগেটেড হওয়া শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে রেড ডেভিলসরা একমাত্র জয় তুলে নিয়েছে। অন্যদিকে প্যালেস সাবেক এইনট্র্যাখট ফ্রাংকফুর্ট বস গ্লাসনারের অধীনে শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। গ্লাসনার বলেছেন, ‘প্রথমার্ধে আমরা খুব একটা ভাল খেলতে পারিনি। কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে রেখেছিলাম। পরের অর্ধে আমরা দারুনভাবে মানিয়ে নেই। দ্বিতীয়ার্ধটা অনেক ভাল ছিল। অনেক বেশী সুযোগ আমরা তৈরী করেছি এবং দারুন কিছু গোল দিয়েছি।’
ইতোমধ্যেই আগামী মৌসুমে ওলিসকে দলে নিতে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাল আরো একবার ওলিস প্রমান করেছেন কেন শীর্ষ দলগুলো তাকে পেতে এতটা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ১২ মিনিটে প্রথম গোল করে ওলিস প্যালেসকে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধে ইউনাইটেড টার্গেটে একটি শটও করতে পারেনি। উল্টো আরো এক গোল হজম করে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সফরকারীরা। গ্লাসসনারের অধীনে একেবারেই বদলে যাওয়া মাতেতা ৪০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেছেন। লিগে ১১ ম্যাচে এটি তার নবম গোল।
বিরতির পরও ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে তেমন কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ৫৮ মিনিটে সেট পিস থেকে মিচেল দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন। ৬৬ মিনিটে শক্তিশালী শটে আন্দ্রে ওনানাকে পরাস্ত করেন ওলিস। আগামী ২৫ মে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে এফএ কাপের ফাইনাল টেন হাগের জন্য সর্বশেষ একটি সুযোগ হতে পারে। অন্তত সেই পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেডে টিকে থাকছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :