রাফায়েল নাদাল তার ১৯ বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেন ক্যারিয়ারের পর্দা টানতে যাচ্ছেন। নিজের প্রিয় এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে রেকর্ড ১৫তম শিরোপা যোগ করার সম্ভাবনা হয়তো অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু বিদায়ের আগে যে রেকর্ড এবং খ্যাতি তিনি রেখে যাচ্ছেন তা হয়তো কখনো কারো সাথেই মিলবে না।
২২ বারের স্ল্যাম বিজয়ী এই তারকা স্প্যানিয়ার্ড টিন এজার হিসেবে ২০০৫ সালে রোলা গাঁরোতে প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন। এবারের টুর্নামেন্ট চলাকালীন নাদাল ৩৮ বছরে পা রাখবেন।
সাবেক এই নাম্বার ওয়ান খেলোয়াড় বর্তমানে বিশ^ র্যাঙ্কিংয়ের ২৭৬ নম্বরে অবস্থান করছেন। গত বছর জানুয়ারির পর থেকে কোমর ও পেশীর ইনজুরির কারনে মাত্র ১৫টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ক্যারিয়ারের প্রায় সময়ই ইনজুরির কারনে কোর্টে নামতে পারেননি, মিস করেছেন ১২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম।
গত সপ্তাহে রোম ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেবার পর নাদাল বলেছেন, ‘আমি ফ্রেঞ্চ ওপেনে শতভাগ দেবার পরিকল্পনা নিয়েই খেলতে নামবো। আর যদি এই মুহূর্তে শতভাগ দিয়েও তা ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ঠ না হয় তবে আমাকে সেটা মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমার কোন সুযোগ নেই, এই মানসিকতা নিয়ে আমি কোর্টে যাবো না। সেখানে যদি ০.০১ শতাংশ সুযোগও থাকে তবেও আমি সেটা এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য লড়াই করবো। ’
প্যারিসে এ পর্যন্ত জিতেছেন রেকর্ড ১৪টি শিরোপা, এ যাত্রায় ১১২টি ম্যাচে জয়ী হয়ে হেরেছেন মাত্র তিনটিতে। যার মধ্যে দুটি দীর্ঘ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নোভাক জকোভিচের কাছে।
ফ্রেঞ্চ ওপেনকে সামনে রেখে গত সোমবার রোলা গাঁরোর কোর্ট ফিলিপ চাট্রিয়ারে যখন প্রথম ট্রেনিং সেশনে অংশ নেন নাদাল তখন সেখানে প্রায় ৬ হাজার সমর্থক উপস্থিত থেকে তাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত মাদ্রিদ ওপেনের সময় তার কোচ কার্লোস ময়া বলেছেন, ‘সে কোর্টে নামলে আমরা পুরো সময়টা দারুন উপভোগ করি। আগের মত সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে যাবে এটা আমরা কেউই আশা করিনা। ব্যক্তিগত ভাবে নাদাল যখন কোর্টে প্রবেশ করে বা কোর্ট ত্যাগ করে তখন আমি কখনই কোর্টে থাকিনা। কিন্তু এবার আমি থাকবো। কারন মানুষের যে ভালবাসা তার জন্য রয়েছে সেটা আমি মাঠে থেকে উপভোগ করতে চাই। টেনিসে নাদাল অন্যতম সেরা একজন তারকা। তার এখন অবসরের সময় হয়েছে। আর সকলের সামনে থেকে তার বিদায়ের ক্ষণটা আমি মিস করতে চাইনা।’
এবারের টুর্নামেন্টে বড় তারকা হিসেবে শুধুমাত্র নাদালই নন, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও ২৪ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী জকোভিচকে নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। গুস্তাভো কুয়ের্তেন, ম্যাটস উইলিন্ডার ও ইভান লেন্ডলের সাথে প্যারিসে তিনটি শিরোপা জয়ী জকোভিচও ২০১৮ সালের পর শিরোপা খরায় ভুগছেন। এ বছর জকোভিচ তার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা হারিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত কোন ট্যুরের ফাইনালে খেলতে পারেননি। ইনজুরির পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে তাকে অপমানিত হতে হয়েছে। রোমে তার মাথায় বোতল ছুঁড়ে মারা হয়। সমর্থকরা তার খারাপ পারফরমেন্সে উত্তেজিত হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলতে নামার আগে ক্লে কোর্টে কিছুটা আত্মবিশ^াস যোগাতেই রোমে খেলেছেন জকোভিচ। ৩৭ বছর বয়সী জকোভিচ চলমান জেনেভা টুর্ণামেন্টে শেষ মুহূর্তে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছেন।
২০০৯ সালে একমাত্র ফাইনালে নাদাল ও জকোভিচের কেউই খেলেননি। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি আসরের ফাইনালেই এই দুজনের কেউ না কেউ ছিলেন।
জকোভিচের কাছ থেকে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ছিনিয়ে নেয়া বিশে^র দুই নম্বর খেলোয়াড় ইয়ানিক সিনার কোমরের ইনজুরির কারনে রোম ওপেনে খেলতে পারেননি। ২২ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান ২০২০ সালে নিজের অভিষেক ফ্রেঞ্চ ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছেন। শেষ আটে নাদালের কাছে সরাসরি সেটে হেরে বিদায় নিয়েছিলেন সিনার। প্যারিসে খেলার জন্য ফিট হয়ে ওঠার জন্য সিনার বাড়তি যত নিচ্ছেন। এই টুর্ণামেন্টে তার সামনে সুযোগ রয়েছে জকোভিচকে ছাড়িয়ে র্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান পজিশন দখল করে নেবার।
কনুইয়ের ইনজুরির কারনে বর্তমান উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন কার্লোস আলকারাজ রোমে খেলতে পারেননি। গত বছর সেমিফাইনালে জকোভিচের কাছ থেকে প্রথম সেট জিতলেও পরে আর তা ধরে রাখতে পারেননি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :