রিয়াল মাদ্রিদ স্বীকার করুক আর নাই করুক শনিবার বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তারাই যে ফেবারিট তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইউরোপীয়ান ক্লাব আসরে রেকর্ড ১৫তম শিরোপা জয়ের মাধ্যমে তারা সাফল্যের মুকুটে আরো একটি পালক যোগ করতে মুখিয়ে আছে।
জার্মান দল বরুশিয়া বিস্ময়করভাবেই বড় দলগুলোকে পিছনে ফেলে ফাইনালে খেলছে। আর এ কারনেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে অপেক্ষাকৃত ছোট নাম ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ইউরোপীয়ান রাজাদের দাপট কতটা ভয়ঙ্কর হয় তা দেখতে অপেক্ষায় পুরো ফুটবল বিশ্ব। আরো একটি শিরোপা নি:সন্দেহে ইউরোপে রিয়াল মাদ্রিদকে আরো একধাপ এগিয়ে দিবে। বিশেষ করে পিএসজি থেকে এবারের গ্রীষ্মে দলে যোগ দেবার ক্ষন গুণতে থাকা ফরাসি সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপ্পের জন্যও এটি একটি মর্যাদার লড়াই।
জয়ী হবে এমন বিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে মাদ্রিদ । কিন্তু এই শিরোপা জয়ে কতটা নমনীয়তা প্রয়োজন তা হয়তো মাঠেই প্রমান হবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তারা খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে পরাজিত করতে তাদের কষ্ট করতে হয়েছে। কার্লো আনচেলত্তির দলের হয়ে বদলী খেলোয়াড় জোসেলুর শেষ মুহূর্তের জোড়া গোলে মাদ্রিদের জয় নিশ্চিত হয়। পিছিয়ে পড়েও মাদ্রিদের এই ফিরে আসা নতুন ঘটনা নয়। প্রতিপক্ষ ঠিক যখন বিশ্বাস করা শুরু করে যে আজ তারা চেপে বসেছে ঠিক তখনই মাদ্রিদ আঘাত হানে, আর এতেই প্রতিপক্ষের বিদায় নিশ্চিত হয়।
মাদ্রিদ কোচ আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করছি না আমরাই ফেবারিট। এমন একটি দলের বিপক্ষে আমরা ফাইনাল খেলবো যাদের এই শিরোপা জয়ের যোগ্যতা আছে। আমরা জানি কষ্ট করেই আমাদের জিততে হবে। লড়াইটা ফাইনালের মতই হবে।’
গত এক দশকে পাঁচটি শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে মাদ্রিদ। সব মিলিয়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের শিরোপার কাছাকাছি আছে সাতটি শিরোপা জয়ী এসি মিলান। সর্বশেষ ১৭ বছর আগে মিলান এই শিরোপা জয় করেছিল।মাদ্রিদের এই আধিপত্যের মূল নায়ক হিসেবে আনচেলত্তি ক্লাব সভাপতিকে চিহ্নিত করেছেন, ‘এখানে একজনই ক্যাপ্টেন আছেন যার নাম ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। দলের বাকি সবাই তার নাবিক।’
মাদ্রিদের সাম্প্রতিক এই সাফল্যের যুগে পেরেজের অবদান থাকলেও ইউরোপীয়ান কাপে গ্যালাকটিকোদের সাফল্যের ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯৫০’র দশকে যখন এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় তখন ক্লাব প্রধান ছিলেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। তখনো মনে হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা যেন মাদ্রিদের জন্যই তৈরী করা হয়েছে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে পাঁচবার মাদ্রিদ ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জণ করে। ১৯৬৬ সালে ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের পর মাদ্রিদকে সাত নম্বরটি অর্জনে ৩০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। জুভেন্টাসকে হারিয়ে ১৯৯৮ সালে ঐ শিরোপা শেষ পর্যন্ত ঘরে আসে। ২০০০ সালে ভ্যালেন্সিয়াকে সহজেই পরাজিত করে অষ্টম শিরোপা ঘরে তুলে মাদ্রিদ। এর কিছুদিন আগেই মাদ্রিদের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন পেরেজ।
এরপরের ইতিহাস পুরোটাই গ্যালাকটিকোময়। এই যুগে প্রবেশের সাথে সাথে মাদ্রিদের তারকা খেলোয়াড়রাও ভিন্ন এক খ্যাতি পেতে শুরু করে। ২০০২ সালে জিনেজিন জিদানকে নিয়ে নবম শিরোপা ঘরে আসে। এর মাধ্যমে মাদ্রিদ বিশে^র সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ক্লাবের তকমা পায়। একে একে বড় তারকাদের আকর্ষনে পরিণত হয় বার্নাব্যু।
২০০০’র দশকে শিরোপার দিক থেকে মাদ্রিদ কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও ভবিষ্যতে সাফল্যের আশায় চলে গ্রাউন্ডওয়ার্ক। ২০০৯ সালে পেরেজ পুনরায় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হবার পর আনচেলত্তি ও জিদান মিলে মাদ্রিদকে আরো সাফল্য উপহার দিয়েছে। তারকা ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, করিম বেনজেমা ও গ্যারেথ বেল প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেন। ২০১৪ সালে নগর প্রতিদ্ব›দ্বী এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে পরাজিত করে ১০ম শিরোপা জয় করে। মাদ্রিদের হয়ে রোনাল্ডো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি অর্জণ করেন।
মাদ্রিদের নতুন তারতকা এখন জুড বেলিংহাম ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তরুণ এই খেলোয়াড়রা ক্লাবের ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে মুখিয়ে আছে, একের পর এক সাফল্যে তারা সেই অবদানও রেখে চলেছে।২০২২ সালের ফাইনালে প্যারিসে লিভারপুলের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে ভিনিসিয়াস জয়সূচক গোলটি করেন।
পেরেজ সবসময়ই চেয়েছেন কিভাবে মাদ্রিদ তাদের ঐতিহ্যকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে যেতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম সংষ্কার করে ক্লাবের রাজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরী করা হয়েছে। মাদ্রিদও তাদের স্কোয়াডকে নতুন করে শক্তিশালী করেছে।
ক্লাবের পরবর্তী তারকা হিসেবে দলে আসছেন এমবাপ্পে, এই মুহূর্তে নি:সন্দেহে যিনি বিশে^র অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড। তার আসার আগে লন্ডনে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জয় স্বাভাবিক ভাবেই দলকে আরো উজ্জীবিত করবে। এটা নিশ্চিত যে ইতোমধ্যেই বিশে^র সেরা ক্লাব পরিচিত মাদ্রিদকে এমবাপ্পের নতুন করে পরিচিত করে দেবার কিছু নেই। এখন সমর্থকদের মধ্যে একটাই শঙ্কা তারকা সমৃদ্ধ দলে সতীর্থদের সাথে কিভাবে এমবাপ্পে নিজেকে মানিয়ে নিবেন।
গত সাত বছরে প্যারিসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা হাতে তুলতে পারেননি এমবাপ্পে। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যই হয়তো তাকে মাদ্রিদে ডেকে এনেছে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :