১৯৮৭ সালের ২৪ জুন; হোর্হে মেসি ও সেলিয়া কুচেত্তিনির ঘর আলো করে জন্ম নেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচেত্তিনি (সংক্ষেপে লিওনেল মেসি)। রোজারিও শহরে জন্ম নেওয়া ফুটবলের এই জাদুকর আজ ৩৭ বছর বয়সে পা দিয়েছেন। শুভ জন্মদিন ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’ মেসি।
ছেলেবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন নীল-সাদা জার্সি গায়ে দিয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। ১৪ বছরেই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বেশ কয়েক ধাপ উপরে উঠে গিয়েছিলেন। বার্সেলোনার জুনিয়র টিমে থাকাকালীনই প্রমাণ করে দিয়েছেন নিজেকে। এরপর সুযোগ পান অনুরধ ১৬ দলের হয়ে খেলার। সেখানেও নিজেকে অনন্য কায়দায় প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ৩৩ বছর বয়সে বিশ্বজয় করে ফেলেছেন তিনি।
একদিকে নরম ঘাসে মোড়া মাঠের সেরা পারফর্মার হয়ে উঠেছেন। আরেকদিকে রেড কার্পেটেও তাঁর দর্শনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন ফ্যানেরা। ফুটবল ফ্যানদের মনের মণিকোঠায় তো রয়েছেনই। বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্খিত পুরুষের তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে শীর্ষে। পরপর ছ` বার গোল্ডেন বল পেয়েছেন। পাশাপাশি জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট।
জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচিত্তিনির তৃতীয় সন্তান মেসি পরিবারের থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা নেশা ছিল। বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস আর তার কাজিন ইমানুয়েন বিয়াঙ্কুকি, ম্যাক্সিমিলিয়ানো ছিলেন মেসির ফুটবল খেলার সঙ্গী।
৬ বছর বয়সে নিউওয়েলস অল্ড বয়েজ ক্লাবে যোগ দেন মেসি। সেখানে ৬ বছর খেলেন তিনি। এই ৬ বছরে তার পা থেকে গোল আসে প্রায় ৫০০। আর সেই সুবাদে তখন তার নাম হয় ‘৮৭ এর গোল মেশিন।’
১০ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি নামক এক রোগ বাসা বাধে তার দেহে। যে কারণে থমকে যায় তার দেহের বৃদ্ধি। প্রতিমাসে তার এই রোগের চিকিৎসার জন্য খরচ হতো ১ হাজার ডলার। প্রথমে তার ক্লাব নিউওয়েলস সেই খরচে অংশীদার হতে চাইলেও পরে হাত গুটিয়ে নেয় তারা। পরে রিভারপ্লেট ক্লাব তাকে দলে ভিড়িয়ে চিকিৎসা খরচ বহন করতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায় তারাও। যে কারণে শঙ্কা দেখা দেয় মেসির বেড়ে ওঠা নিয়ে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনা তার জুনিয়র দলের জন্য মেসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর শুরু হয় তার চিকিৎসা। ১৪ বছর বয়সে এসে শেষ হয় তার চিকিৎসা।
২০০৫ সালে নিজের ১৮তম জন্মদিনের দিন মেসি যোগ দেন বার্সেলোনার মূল দলে। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগেনি তারকা এই ফুটবলারকে। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার।২০০৮-০৯ মৌসুমে প্রথম ট্রেবলের স্বাদ পান মেসি। ২০০৯-১০ মৌসুমে জেতেন প্রথম ব্যালন ডি’অর।
২০১২ সালটা ছিল মেসির রেকর্ড গড়ার বছর। এ বছরই প্রথম এক ম্যাচে পাঁচ গোল দেওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। সে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। সে বছরেই মেসি বনে যান বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রেবল জয় করেন মেসি। ২০১৯-২০ মৌসুমে রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর নিজের ঝুলিতে পুরেন মেসি। ২০২১ সালে তিনি বার্সেলোনার সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে পাড়ি জমান ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে।
২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে স্বপ্নভঙ্গের পর সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মেসি। ফিনালিশিমা, ফিনালিশিয়া, কোপা আমেরিকা জয়ের পর ২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতাটা পূর্ণ হয় ক্ষুদে এই জাদুকরের। লুসাইল স্টেডিয়ামে সেই ফ্রান্সকেই হারিয়ে স্বাদ নেন বিশ্বকাপের।
এরপর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে পিএসজির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। মেজর লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে নতুন ঘর বাঁধেন তিনি।বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক ৩৬ বছর শেষ করে আজ পা রাখলেন ৩৭ বছরে। শুভ জন্মদিন তোমায় লিও।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :