অলিম্পিকে অভাবনীয় পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি অনুপ্রেরণা, পদক জয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, নাটকীয়তা, কঠোর পরিশ্রম ও সর্বোপরী দেশের পতাকা বিশ্বের দরবারে সম্মানের সাথে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা। বিপরীতে তারা পেয়েছেন অলিম্পিকের স্বর্ণ পদকের মর্যাদা। এমনই কয়েকজন তারকার কথা এখানে তুলে ধরা হলো যাদেরকে প্যারিস গেমসের পর আর কোন অলিম্পিকে দেখা যাবে না, কিন্তু নিজেদের প্রচেষ্টা দিয়েই যারা সকলের মতে গেঁথে থাকবে।
এন্ডি মারে (টেনিস তারকা):
নাটকীয় ভাবে ফিরে এসে ব্রিটিশ টেনিস কিংবদন্তী এন্ডি মারে নিরবে অবসরে না গিয়ে প্যারিসে প্রতিদ্বন্দিতাার ঘোষনা দেন। তার আগেই অবশ্য জানান দিয়েছিলেন এটাই হতে যাচ্ছে তার সর্বশেষ কোর্টে নামা। ডাবলসে জাপানের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডেই বিদায়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ড্যান ইভান্সকে সাথে নিয় ফিরে আসেন মারে। পাঁচ ম্যাচ পয়েন্টের প্রতিটি একে একে যখন ব্রিটিশ জুটি রক্ষা করছিল তখন রোলা গাঁরোর সমর্থকদের চিৎকারই বলে দিচ্ছিল এখনো মারের জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি।
দ্বিতীয় রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের টেইলর ফ্রিটজ ও টেইলর পলের বিপক্ষে অবশ্য ৩৭ বছর বয়সী মারের ক্যারিয়ার থেমে যায়। ইনজুরির সাথে লড়াই করে ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মারে বলেছেন, ‘যেভাবে সবকিছু শেষ হলো তাতে আমি দারুন খুশী।’
৭৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্রিটেনকে উইম্বলডনের শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন মারে। ক্যারিয়ারে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ছাড়াও দুটি অলিম্পিক স্বর্ণ জয় করেছেন।
শেলি-এ্যান ফ্রেসার-প্রাইস(স্প্রিন্টার):
৩৭ বছর বয়সী জ্যামাইকান এই স্প্রিন্টার আগেই ঘোষনা দিয়েছিলেন প্যারিসই হতে যাচ্ছে তার শেষ প্রতিযোগিতা। অলিম্পিকের আটটি পদকের মধ্যে তিনটি স্বর্ণ জয় করার পর ফ্রেসার-প্রাইস চাইছিলেন প্যারিসে ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে।
২০০৮ বেইজিং ও ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ১০০ মিটারে পরপর দুইবার নিজেকে শীর্ষস্থানে আসীন করার পর টোকিওতে ৪ ী১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয় করেন।কিন্তু প্যারিসে অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল হয়নি। ১০০ মিটারের হিটে ১০.৯২ সেকেন্ড সময় নেবার পর ওয়ার্ম আপে ইনজুরিতে পড়ে সেমিফাইনালে আর অংশ নেননি।
ইনস্টাগ্রামে এ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘এই হতাশা ভাষায় প্রকাশ করার মত অবস্থায় আমি নেই। দেশের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে যে ভালবাসা আমি পেয়েছি তা সবসময়ই মনে থাকবে।’
এ্যাডাম পিটি (সাঁতার):
দুইবারের ব্রেস্টস্ট্রোক স্বর্ণ পদক বিজয়ী পিটি ২০১৪ সালের পর টিম জিবির (গ্রেট বৃটেন)এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। পিটি দলে থাকা মানেই ব্রিটিশ সাঁতার দল স্বস্তিতে থাকা। রিও ও টোকিওতে স্কর্ণ জয়ের পর সেই আশা উচ্চাশায় পরিণত হয়। বিশ^ রেকর্ড ধারী এই সাঁতারুকে নিয়ে গর্বের সাথেই প্রতিদ্বন্তীতায় নামে ব্রিটিশরা। ২০০ মিটারে সেই আশা পূরণ হলেও ১০০ মিটারে ইতালির নিকোলো মার্টিনেগির কাছে আর পেরে উঠেননি পিটি। এই ইভেন্টে তাকে রৌপ্য পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক ভাবে কিছুটা বিপর্যন্ত পিটি হতাশার সাথে লড়াই করেছেন। ১০০ মিটারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর প্যারিসে তার কোভিডও ধরা পড়ে। কিন্তু অসুস্থতা কাটিয়ে ৪ টি ১০০ মিটার মিডলে রিলেতেও অংশ নেন। যদিও অল্পের জন্য ব্রিটেন বিজয় মঞ্চে উঠতে পারেনি। চতুর্থ স্থানে থেকে প্রতিযোগিতা শেষ করে টিম জিবি।
সিমোনে বাইলস(জিমন্যাস্টিকস) :
১১ অলিম্পিক পদক ও ৩০টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পদক নিয়ে বাইলস এখন অলিম্পিক ইতিহাসের সফলতম নারী জিমন্যাস্ট। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে প্রথম অংশ নিয়ে ৪টি স্বর্ণ ও ১টি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন বাইলস, যা এখন পর্যন্ত বাইলসের সবচেয়ে সফলতম অলিম্পিক।
এবার অবশ্য চারটি পদক জিতেছেন বাইলস, যার মধ্যে তিনটি স্বর্ণ এবং একটি রৌপ্য। পদক বিবেচনায় বাইলসের জন্য সবচেয়ে বাজে অলিম্পিক ছিল ২০২১ সালের টোকিও অলিম্পিক। সেবার একটি রৌপ্য এবং একটি ব্রোঞ্জ জিতে অলিম্পিকের মাঝপথেই মানসিক ‘ট্যুইস্টিস’কে কারণ দেখিয়ে বিদায় নেন তিনি। ট্যুইস্টিস এমন একধরনের মানসিক অবস্থা, যা জিমন্যাস্টদের বাতাসে ভেসে থাকার সময় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। যে কারণে এবারের অলিম্পিককে বাইলসের জন্য প্রত্যাবর্তন হিসেবেই দেখা হচ্ছিল, যা তিনি দারুণভাবেই রাঙিয়েছেন।
লিব্রন জেমস :
এনবিএ’র সর্বকালের সর্বোচ্চ পয়েন্ট স্কোরার লিব্রন এবারের গেমসে স্বর্ণ জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। গতকাল ফ্রান্সকে ৯৮-৮৭ পয়েন্টে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন লড়াইয়ের পর প্যারিস গেমসের স্বর্ণ জয় করে।
লস এ্যাঞ্জেলস লেকার্সের হয়ে খেলা লিব্রন ঘরের মাঠের পরবর্তী অলিম্পিকে ৪৩ বছরে পা রাখবেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এল’এতে আর খেলা হবে না। এবারের গেমসেও খেলার কথা ছিলনা। কিন্তু চার বছর পর কোনভাবেই আর খেলা সম্ভব নয়।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :