কাজী সালাউদ্দিনের বাফুফে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের দাবিতে কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস নামের সংগঠন। এরই অংশ হিসেবে রোববার মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবনের গেটের বাইরে সমর্থকদের সংগঠনটি অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
প্রতি নির্বাচনে একই ব্যক্তিকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা নিয়ে আলট্রাসের পক্ষ থেকে এসেছে গুরুতর অভিযোগ। কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা বলেন, ‘সর্বশেষ বাফুফে নির্বাচন যখন হয় আমরা সোনারগাঁও হোটেলে ডেলিগেটসদের সঙ্গে কথা বলি। জানতে চেয়েছিলাম দুর্নীতিবাজদের ভোট দেন কেন? তারা বলেছিলেন, উপর মহলের নির্দেশ।
যদি ভোট না দেই, তাহলে আমাদের পদ-পদবী থাকবে না। জেলা ক্রীড়া সংস্থাতে আমরা থাকতে পারবো না। আমরা তখন হেরে গেলাম। কারণ আমাদের সঙ্গে সরকার ছিল না। কোনো প্রশাসন ছিল না। আমাদের আবেগের মূল্যায়ন করা হয়নি। এখন ফুটবল মাঠে দর্শক টানার জন্য তাদের ভাড়া করা হয়। ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়, তারা দুই ঘণ্টা গিয়ে ফুটবল দেখে।’
দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নানা প্রতিষ্ঠানের বড় পদগুলোতে চলছে রদবদল। নানা মহল থেকে জোরালোভাবে উঠছে পদ না ছাড়া ব্যক্তিদের সরে যাওয়ার দাবি। কাজী সালাউদ্দিনের সরে যাওয়ার দাবিটিও তাই জোরালো হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, ‘আমাদের এক দফা দাবি, সালাউদ্দিন সাহেব স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। ফিফার কিছু নিয়ম-কানুন আছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবো না, তাকে এক দফা দাবি দিয়ে গেলাম। স্বেচ্ছায় যদি তিনি পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা তাকে রাস্তায় বাসে যেখানে পাই, সেখানে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবো।
একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ জিমনেশিয়াম এখনো তিনি করতে পারেননি। জেলা ফুটবল লিগ, স্কুল ফুটবল লিগ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের ভেতর ফুটবলের উন্মাদনা তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন না। ফিফার যে অনুদান আসে, তাতে উন্নয়ন হচ্ছে না। পদত্যাগ না করলে আমরা ঘেরাও করবো। অফিসে যাতে ঢুকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করবো।’
এর আগে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি জানায় বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস নামের ফুটবল সমর্থক গোষ্ঠী। সেই লক্ষ্যে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে রোববার লং মার্চ টু বাফুফে কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। পরে কূটকৌশলের আঁচ পেয়ে তারা ঘেরাও কর্মসূচি থেকে সরে আসে।
আলট্রাসের অভিযোগ, বাফুফের লোকজন নিজেরা ভেতরে একটা হট্টগোল তৈরি করে তাদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করবে। বক্তারা বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনে দলীয়করণ ও দুর্নীতি অনেক আছে। ২০১৮ সালে আমরা সালাউদ্দিন হটাও আন্দোলন শুরু করেছিলাম। তখন সরকারের বাধ্যবাধকতার কারণে, ভয়ভীতির কারণে আমরা মাঠে নামতে পারিনি। এতদিন শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। এখন কথা বলার ভাষা আমরা খুঁজে পেয়েছি, বাক স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছি।
আলট্রাসের অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।সহ-সভাপতি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর আবারো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। সাধারণ সম্পাদক গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা চাই সালাউদ্দিন সাহেব সসম্মানে বিদায় নিন।’
এদিকে বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাসের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান অভি বলেন, ‘কাজী সালাউদ্দিনকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের একজন ফুটবলার হিসেবে কিংবদন্তি ফুটবলার হিসেবে নিজের সম্মানের জায়গা ধরে রেখে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই সম্মানের জায়গা থাকবে না। আমাদের কর্মসূচি পিছিয়ে নিচ্ছি না। যতদিন নিশ্চিত না করছেন দেশের ফুটবল থেকে সরে না দাঁড়ানোর, আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের কথা দিতে হবে বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে আপনি আর কখনো জড়ানোর চেষ্টা করবেন না।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :