বেরসিক বৃষ্টি ও অ্যালিক আথানাজের ব্যাটিং নৈপুন্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ২৯৮ রানের টার্গেটে স্পর্শ করতে পঞ্চম ও শেষ দিন ৭২ ওভার পেয়েছিলো ক্যারিবীয়রা। কিন্তু বৃষ্টিতে প্রায় দুই ঘন্টা খেলা নষ্ট হওয়ায় ৫৬ দশমিক ২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের পক্ষে ৯২ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন আথানাজে। এই টেস্টে পাঁচ দিনে বৃষ্টির কারনে ১৪২ ওভার খেলা হয়নি।
এ বছর চারটি টেস্ট খেলে, ৩টিতে হারের পর প্রথম ড্র করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া গেল বছরের জুলাইয়ের পর ২৮ টেস্ট পর প্রথম ম্যাচ ড্র হলো। এরমধ্যে ২৮ টেস্টের সবগুলোই নিষ্পত্তি হয়েছে।পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ দিন শেষে ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫৪ রানে এগিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংস থেকে ১২৪ রানের লিডকে সাথে নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ৩০ রান করেছিলো প্রোটিয়ারা।
টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনের শুরু থেকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৭৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। ৪৫ রান করে ফিরেন ওপেনার টনি ডি জর্জি। দলের রান ১শ পার হবার পর ব্যক্তিগত ৩৮ রানে রানে আউট হন আরেক ওপেনার আইডেন মার্করাম। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারই শিকার হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানের।
১১৩ রানে ২ উইকেট পতনের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৪ বলে ৬০ রান যোগ করেন ট্রিস্টান স্টাবস ও অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। ২৯তম ওভারের শেষ বলে পেসার কেমার রোচের বলে স্টাবস আউট হলে ৩ উইকেটে ১৭৩ রানে ইনিংস ঘোষনা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫০ বলে ৬৮ রান করেন স্টাবস। ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন বাভুমা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ারিকান ২ উইকেট নেন।
২৯৮ রানের টার্গেটে ইনিংসের তৃতীয় বলেই উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে খালি হাতে বিদায় দেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ। ৩ দশমিক ৩ ওভার খেলা হবার পর বৃষ্টিতে প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকে খেলা। পরবর্তীতে খেলা শুরু হলে অষ্টম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ওপেনার মিকেল লুইসকে (৯) শিকার করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা।
১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ অবস্থায় ৪৬ রান যোগ করে দলকে চাপমুক্ত করেন কেসি কার্টি ও আথানাজে। কার্টিকে ৩১ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন মহারাজ।
এরপর কাভেম হজ ও জেসন হোল্ডারকে নিয়ে জোড়া হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন আথানাজে। চতুর্থ উইকেটে হজের সাথে ৬৩ এবং হোল্ডারকে নিয়ে ৬৫ রান তুলেন আথানাজে। এসময় টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে প্রথম সেঞ্চুরির পথে ছিলেন আথানাজে। কিন্তু আথানাজেকে নাভার্স নাইন্টিতে থামিয়ে দেন মহারাজ। ৯টি চারে ১১৬ বলে ৯২ রান করেন তিনি।
৫৩তম ওভারে আথানাজে ফেরার পর ৫৭তম ওভারে দু’দলের সম্মতিতে ম্যাচটি ড্র’তে শেষ হয়। কারন বৃষ্টিতে সময় নষ্ট হবার কারনে ৭২ ওভারের পরিবর্তে অন্তত ৬৩ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫৬ দশমিক ২ ওভারে ৫ উইকেটে ২০১ রান করে ক্যারিবীয়রা। হোল্ডার ৩১ ও সিলভা ২ রানে অপরাজিত থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মহারাজ ৮৮ রানে ৪ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ৭৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এতে ম্যাচ সেরা হন মহারাজ।
সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এই ড্র’তে ৫ ম্যাচে ১ জয়, ৩ হার ও ১ ড্র’তে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে নয় দলের টেবিলে সপ্তমস্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ ম্যাচে ১ জয় ও ৩ হারে ২৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টমস্থানে আছে বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে ১ জয়, ৫ হার ও ২ ড্র’তে ১৯ দশমিক ০৪ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে নেমে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শীর্ষ দু’টিস্থানে আছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
আগামী ১৫ আগস্ট গায়ানায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :