আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ২৩৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩০.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩২ রান তুলে ম্যাচে ভালো অবস্থায় ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ২৪ বলে ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৯২ রানে লজ্জার হার বরণ করে নেয় টাইগাররা।
আফগানিস্তানের স্পিনার আল্লাহ গজানফর ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। দুর্দান্ত জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান।শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন ও মুস্তাফিজের তোপের মুখে পড়ে আফগানিস্তান।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে তাসকিনের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন ৫ রান করা আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ।অষ্টম ওভারে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। মুশফিকের ক্যাচে ২ রানে বিদায় নেন রহমত শাহ।
দশম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলে আফগানিস্তানের অভিষিক্ত ব্যাটার সেদিকুল্লাহ আতালকে ২১ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফিজ। ২ বল পর আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান মুস্তাফিজ। প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রানে ৪ উইকেট হারিে চাপে পড়ে আফগানিস্তান।
উইকেট পতন ঠেকাতে পঞ্চম উইকেটে সাবধানে খেলতে শুরু করেন অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি ও গুলবাদিন নাইব। ১০ ওভার খেলে ৩৬ রানও যোগ করে ফেলেন তারা। ২০তম ওভারে নাইবকে শিকার করে জুটি ভাঙেন তাসকিন। মিড উইকেটে তানজিদ হাসানকে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ২২ রান করা নাইব।
দলীয় ৭১ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন শাহিদি ও অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। ২৬তম ওভারে দলের রান ১শতে নেন তারা।৩৪তম ওভারে শাহিদি ও নবীর জুটি ভাঙার সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। স্পিনার রিশাদ হোসেনের বলে নবীর বিপক্ষে লেগ বিফোর আউটের আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ার। তাতে রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বাংলাদেশের আবেদনটি সঠিক ছিল।
৩৬তম ওভারে দেড়শ পার করে আফগানিস্তান। পরের ওভারে ওয়ানডেতে ১৭তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি করেন নবী। ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন শাহিদিও।অর্ধশতকের পর মুস্তাফিজের বলে বোল্ড হন আফগান দলনেতা। ২টি চারে ৯২ বলে ৫২ রান করেন তিনি। নবীর সাথে ১২২ বলে ১০৪ রান যোগ করেন শাহিদি।
অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে এসে ১টি চারে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি রশিদ খান। পেসার শরিফুল ইসলামের বলে মিড উইকেটে মুস্তাফিজকে ক্যাচ দেন রশিদ।অষ্টম উইকেটে নাঙ্গোলিয়া খারোতের সাথে ২৯ বলে ৩০ রান যোগ করে ৪৬তম ওভারে আফগানিস্তান রান ২শতে নেন নবী।
৪৮তম ওভারে শেষবারের মত আক্রমনে এসে নবিকে থামান তাসকিন। ওভারের তৃতীয় বলে পুল করার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদকে ক্যাচ দেন নবী। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৯ বলে ৮৪ রান করে এই ডান-হাতি ব্যাটার। পরের ডেলিভারিতে আল্লাহ গজানফরকে বোল্ড করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেট নেন তাসকিন।
দলীয় ২১৯ রানে নবম উইকেট পতনের পর আফগানিস্তানকে ২৩৫ রানে রানের পুঁিজ এনে দেন নাঙ্গোলিয়া খারোতে। শেষ ব্যাটার হিসেবে ফজলহক ফারুকি রান আউট হলে ২ বল থাকতে গুটিয়ে যায় আফগানরা। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন খারোতে।
১০ ওভার করে বল করে তাসকিন ৫৩ রানে এবং মুস্তাফিজ ৫৮ রানে ৪টি করে উইকেট নেন। ৩২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল।২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে চতুর্থ ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩ রান করে স্পিনার গজানফরের বলে আউট হন ওপেনার তানজিদ।
এরপর ৫৪ বলে ৫৩ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। উইকেটে সেট হয়ে ওমারজাইর শিকার হন ৬টি চারে ৪৫ বলে ৩৩ রান করা সৌম্য।
সৌম্যর পর মেহেদি হাসান মিরাজের সাথেও হাফ-সেঞ্চুরির জুটি গড়েন শান্ত। এতে ১শ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২২ রানে জীবন পেয়ে ৪৭ রানে বিদায় নেন শান্ত। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
শান্ত ফেরার পরও ৩ উইকেটে ১৩২ রান তুলে ম্যাচে দারুণভাবে টিকে ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু গজানফর ও রশিদের ঘূর্ণিতে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে টাইগারদের ইনিংস। ২৪ বলে ১১ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফলে ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
তাওহিদ হৃদয় ১১, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ২ রানে শিকার করেন রশিদ। মিরাজকে ২৮, মুশফিকুর রহিমকে ও রিশাদকে ১, তাসকিনকে শূন্য, শরিফুলকে ১ রানে আউট করেন গজানফর।
৬.৩ ওভার বল করে ২৬ রানে ৬ উইকেট নেন গজানফর। ৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের এই প্রথমবারের মত ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিলেন তিনি। রশিদ ২৮ রানে ২ ও নবী-ওমারাজাই ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন গজানফর।
আগামী ৯ নভেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :