টাইগারদের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নিজের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। দেশের ক্রিকেট সেভাবে এগিয়ে না গেলেও আগের প্রজন্মের খেলোয়াড়দেরকে তরুণ ক্রিকেটাররা ছাড়িয়ে যেতে পারলেই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলেই তার বিশ্বাস।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিসিবির অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত একটি ভিডিওতে কথা বলেন সালাউদ্দিন। আগামী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের নিয়ে তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
‘আমরা যারা বলি সাকিব, তামিম, মুশফিকেরা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে, ওটা যদি না ভাঙতে পারি, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশের ক্রিকেট এগোয়নি। পরবর্তী প্রজন্ম যেন তাদের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় হতে পারে, বড় হতে পারে। সেটা অসম্ভবও নয়। এখন খেলোয়াড়েরা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে অনেক স্বাবলম্বী। যেটা হয়তো আগে ছিল না। এখন ভালো করার সুযোগ বেশি।’
তরুণ ক্রিকেটারদের স্বপ্নটা যেন জাতীয় দলে এসেই থেমে না যায়, সেদিকেও সবাইকে লক্ষ্য রাখতে বললেন সালাউদ্দিন। আগের প্রজন্মকে ছাড়িয়ে যেতে এখনকার খেলোয়াড়দের চিন্তায় ও মানসিকতায় উন্নতি ঘটাতে জোর দেন।
‘এইচপি বা অনূর্ধ্ব-১৯-এর খেলোয়াড়দের লক্ষ্য জিজ্ঞেস করলে বলবে জাতীয় দলে খেলতে চাই। স্বপ্নটা কিন্তু ওখানেই থেমে গেল। জাতীয় দলে খেললে এরপর কীভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে সেটা তারা জানে না।’
‘যারা এতদিন খেলছি, তাদের আসলে কী ধরনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, মানসিকতা হওয়া উচিৎ, কীভাবে আরো বড় খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নিজেকে মোটিভেট করা উচিৎ, এই ছোট ছোট কাজগুলো করে। বড় কাজ তা নয়। এই ছোট কাজগুলো যদি করা যায়, বিশেষ করে ড্রেসিংরুমে এবং ড্রেসিংরুমের বাইরে কীভাবে চিন্তা করবে, সেই চিন্তার জায়গাটা যদি আরও পরিষ্কার করে ধারণা দেওয়া যায়, তাদের আরও ভালো ভবিষ্যৎ সামনে আছে।’
এক সময় বিকেএসপির খণ্ডকালীন ক্রিকেট কোচ ছিলেন সালাহউদ্দিন। ২০০৫ সালে জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি সহকারী কোচের দায়িত্বও পালন করেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সঙ্গেই ছিলেন। ১৪ বছর পর জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার পেছনে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের অবদানকে তিনি স্মরণ করেন।
‘বেশ কিছুদিন ধরেই আসলে কথা হচ্ছিল। আমার এই কাজটা করার পেছনে ফারুক ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি। তিনি আমাকে অনেকবার ডেকেছেন, কথা বলেছেন, বুঝিয়েছেন যেন, কেন আমাদের স্থানীয় কোচদের দরকার বাংলাদেশ দলে।’
‘আমারও যে ইচ্ছে ছিল না, তা নয়। তবে অনেক কারণেই আসতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়েছে, এখনই হয়তো সেরা সময়, যেটা দিয়ে বাংলাদেশকে আবারও হয়তো সার্ভিস দিতে পারবো। আমার ইচ্ছে আছে, এত বছরের যে কোচিং অভিজ্ঞতা, এটা যেন আরও বড় পরিসরে কাজে লাগাতে পারি। দেশের যদি কিছুটা উপকারও হয়, কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে দিকে আমার নিজেরও হয়তো তা ভালো লাগবে।’
দীর্ঘ ২৫ বছরের লম্বা কোচিং ক্যারিয়ারে সালাহউদ্দিন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ ও বিপিএলে একজন সফল কোচ হিসেবে সুপরিচিত। তার অধীনেই বিপিএলে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবার টাইগারদের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে তার নতুন অ্যাসাইনমেন্ট আরম্ভ হবে।
এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘অনেক দিন ধরেই শুনছি বোর্ড দেশি কোচদের একটা প্ল্যাটফর্ম করে দেবে। সেই জায়গায় আমি যদি পথটা দেখাতে পারি, সেটা যত দিনের জন্যই হোক, আমার দেশি কোচরাও হয়তো ভালো করবে। পরবর্তী সময়ে যে সব দেশি কোচ আসবে বোর্ডের বিশ্বাস বাড়বে, মানুষের বিশ্বাস বাড়বে, জনগণের বিশ্বাস বাড়বে। সেই সঙ্গে কোচের নিজেরও বিশ্বাস বাড়বে যে আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করতে পারি।
‘আমার মনে হয় এই বিশ্বাসটা কারোর না কারোর নেয়া উচিৎ ছিল। সেই বিশ্বাসটা যদি আমি রাখতে পারি, পরের কোচদের জন্য বড় পথ খোলা হয়ে যাবে। একজন কোচ হিসেবে কোচ-সমাজে পথ দেখানোর একটা বড় দায়িত্ব আমার পড়ে গেছে। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।’
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :