আগামীকাল থেকে মেলবোর্ন পার্কে শুরু হচ্ছে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। সার্বিয়ান তারকা নোভাক জকোভিচ ক্যারিয়ারের ১১তম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও রেকর্ড ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কোর্টে নামবেন। যদিও বিশ্বের এক নম্বর তারকা ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইয়ানিক সিনার ও স্প্যানিশ তরুন সেনসেশন কার্লোস আলকারাজের বিপক্ষে লড়াই খুব একটা সহজ হবে না।
বছরের প্রথম এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে যে পাঁচজন খেলোয়াড়ের দিকে নজর থাকবে :
নোভাক জকোভিচ: ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল গ্র্যান্ড স্ল্যাম রেকর্ড এই মেলবোর্নেই অর্জন করেছেন জকোভিচ। ৩৭ বছর বয়সে এসেও মেলবোর্নের নীল হার্ডকোর্টে কখনোই নতী স্বীকার করেননি।
এই মুহূর্তে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম স্থানে আছেন জকো। ২০২৪ সালে অলিম্পিকের স্বর্ণ জিতেছেন। মার্গারেট কোর্টের সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪ শিরোপার রেকর্ড এখনো স্পর্শ করতে পারেননি। গত বছর মেলবোর্নের সেমিফাইনালে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন। সেমিফাইনালে জকোভিচকে হারানো সিনারই শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করেছিল।
এবার শিরোপা জিততে পারলেও জকোভিচ ক্যারিয়ারে শততম শিরোপার মালিক হবেন। জিমি কর্নস (১০৯) ও রজার ফেদেরারের (১০৩) পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে জকোভিচ এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন।
ইয়ানিক সিনার: গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মত গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ইতালিয়ান সিনার। ফাইনালে তিনি ডানিল মেদভেদেভকে পরাজিত করেছিলন। তারপর থেকে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বছর শেষ করেছেন র্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান স্থানে থেকে।
২০২৪ সালে শিরোপা জয় করেছেন আটটি। রোলা গ্যাঁরো ও উইম্বলডনের সেমিফাইনালে খেললেও বছর শেষ করেছেন ইউএস ওপেনের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে। এছাড়া ডেভিস কাপে ইতালির শিরোপা ধরে রাখার পিছনে সিনারের মূল অবদান ছিল। ২০০৫ সালে ফেদেরারের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোন ম্যাচে সরাসরি সেটে পরাজিত না হয়ে বছর শেষ করেছেন।
ডোপিং কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে তার নাম আসায় কিছুটা হলেও বিচলিত হয়ে পড়েছেন সিনার। যদিও ২৩ বছর বয়সী সিনার বারবারই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত বছর তার বিপক্ষে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়ার্ল্ড এন্টি-ডোপিং এজেন্সি আগামী এপ্রিলে তাকে শুনানিতে ডেকেছে।
কার্লোস আলাকারাজ : মাত্র ২১ বছর বয়সে ইতোমধ্যে ক্যারিয়রে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গত বছরের ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডন। ২০২২ সালে ইউএস ওপেন জয়ের মধ্য দিয়ে সকলের নজরে আসের এই তরুণ স্প্যানিয়ার্ড।তবে মেলবোর্নে তিনবারের মোকাবেলায় এখনো কোয়ার্টার ফাইনাল পার করতে পারেননি। গত বছর শেষ আটে আলেক্সান্দার জেভরেভের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন।
তিন ধরনের সার্ফেস ক্লে, হার্ড ও ঘাসের কোর্টে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড করে ফেলেছেন আলকারাজ। অস্ট্রেলিয়ায় জিততে পারলে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে স্বদেশী রাফায়েল নাদালের সবকটি স্ল্যাম জয়ের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবেন।কোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে এখনো পর্যন্ত পরাজিত হননি আলকারাজ। চারটি শিরোপা জিতে বিশ্বের তিন নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে ইনজুরি আক্রান্ত ২০২৪ সাল শেষ করেছেন।
আলেক্সান্দার জেভরেভ : প্রায় এক দশকের টেনিস ক্যারিয়ারে কোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেননি এই জার্মান তারকা। ২০২৪ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনে ও ২০২০ সালে ইউএস ওপেনে রানার্স-আপ হলেও শেষ হাসি হাসা হয়নি।
২০২২ ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে গোঁড়ালির ইনজুরিতে পড়ার পর তার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানগুলোতে ফিরে আসাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল । ঐ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে সিনার ও আলকারাজ গ্র্যান্ড স্ল্যামের নতুন রাজা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন।
তবে ২৭ বছর বয়সী জেভরেভ ২০২৪ সালে নতুনভাবে ফিরে এসে বিশ্বের দুই নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে বছর শেষ করেন। সিনারের থেকে গত বছর তিনি বেশী ম্যাচ জয়লাভ করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় দুইবারের সেমিফাইনালিস্ট জেভরেভ জানেন তার এখন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়টা জরুরি হয়ে পড়েছে।গত বছর শেষ চারে তিনি ডানিল মেদভেদেভের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন।
ডানিল মেদভেদেভ : গত বছর এই তারকা রাশিয়ান কোন শিরোপা জিততে পারেননি। বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার পরিসংখ্যান অবশ্য অনেকের থেকেই ভাল। গত চারটি ফাইনালের তিনটিতেই খেলেছেন।
২০২১ সালে জকোভিচের কাছে, পরের বছর তুমুল লড়াইয়ের পর রাফায়েল নাদালের কাছে ও ২০২৪ সালে সিনারের কাছে ফাইনালে পরাজিত হয়ে হতাশ হতে হয় মেদভেদেভকে।
সিনার ও আলকারাজের উত্থানের পর ২৮ বছর বয়সী মেদভেদেভ নিজেকে অফ-সিজনে আরো বেশী পরিনত করার চেষ্টা করেছেন, আরো বেশী আগ্রাসী খেলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০২১ ইউএস চ্যাম্পিয়ন মেদভেদেভ বর্তমানে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে রয়েছেন।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :