AB Bank
ঢাকা সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নতুন রানী ম্যাডিসন


Ekushey Sangbad
স্পোর্টস ডেস্ক
১০:৫৩ এএম, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নতুন রানী ম্যাডিসন

২৯ বছর ৩৪৩ দিন। প্রায় ৩০ বছর সময় লেগে গেল তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে। বার বার কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে শেষ হয়েছে দৌড়ে। এক বার ফাইনালেও হেরেছেন। তার পরেও হাল ছাড়েননি ম্যাডিসন কিজ়। অবশেষে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন তিনি। সেরিনা উইলিয়ামসকে দেখে টেনিস শুরু করেছিলেন কিজ। সেরিনার পর আর এক আমেরিকান খেলোয়াড় হিসাবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলেন তিনি।

রড লেভার এরিনায় শনিবার স্থানীয় সময় তখন রাত ১০টা। সামনে এরিনা সাবালেঙ্কা। গত দু’বার এই কোর্ট শাসন করেছেন তিনি। বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস তারকার সামনে কিজের জয়ের আশা করেছিলেন কতিপয় সমর্থকই। তাঁরা কিজের দল। অর্থাৎ, তাঁর স্বামী তথা কোচ, ফিজ়িয়ো ও দলের বাকিরা। সঙ্গে আমেরিকা থেকে আসা কয়েক জন সমর্থক। বাকি গোটা গ্যালারি সাবালেঙ্কার দিকে। সেই গ্যালারিকেই প্রথম সেটে চুপ করিয়ে দিলেন কিজ়। তাঁর পাওয়ার টেনিসের কাছে হার মানতে হল সাবালেঙ্কাকেও। সেই সাবালেঙ্কা, যাঁকে আধুনিক টেনিসে অন্যতম পাওয়ার হিটার বলা হয়।  

দ্বিতীয় সেটে আবার চিৎকার ফিরল রড লেভার এরিনাতে। সেই সেটে কিজকে উড়িয়ে দেন সাবালেঙ্কা। দেখে মনে হচ্ছিল, ছন্দ ফিরে পেয়েছেন বেলারুসের খেলোয়াড়। এক বার তিনি ছন্দ পেয়ে গেলে তাঁকে হারানো কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই করলেন কিজ। তৃতীয় সেট ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল টাইব্রেকারের দিকে। কিন্তু ১২তম গেমে কিজের একের পর এক নিখুঁত রিটার্ন চাপে ফেলল সাবালেঙ্কাকে। চাপে ভুল করলেন তিনি। যেমনটা করেছিলেন প্রথম সেটে। সেই ভুল কাজে লাগিয়ে জিতলেন কিজ। তাঁর ফোরহ্যান্ড লাইনের ভিতর পড়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেই ছুটে গেলেন কিজ। ছুটলেন তার দলের দিকে। 

রড লেভার এরিনায় তখন দুটো আলাদা দৃশ্য। এক দিকে স্বামী বিয়র্ন ফ্র্যাটানগেলোকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন কিজ। তাদের জড়িয়ে দলের বাকিরা। অন্য দিকে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে বসে সাবালেঙ্কা। তোয়ালের ফাঁক দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সাবালেঙ্কাও কাঁদছেন। তিনি হয়তো সকলের সামনে তা দেখাতে চাইছেন না। কিছু ক্ষণ পরে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যান সাবালেঙ্কা। যখন ফেরেন, তখন তিনি স্বাভাবিক। কথা বলতে গিয়েও মজা করলেন। কিন্তু কিজ়ের আবেগ বার বার ধরা পড়ল। ধরা পড়বে না কেন, যে পরিস্থিতি থেকে তিনি ফিরে এসেছেন তা এক কথায় অভাবনীয়। এক সময় ভেবেছিলেন, কেরিয়ারে আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হবে না। কিন্তু তাঁর দল তাঁর উপর ভরসা রেখেছিল। সেই ভরসার দাম দিয়েছেন কিজ।

আমেরিকার রক আইল্যান্ডে জন্মানো কিজ়ের পরিবারের কারও টেনিসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তিনিও টেনিসের প্রেমে পড়েছিলেন অন্য কারণে। কিজ়ের যখন চার বছর বয়স তখন উইম্বলডনে সেরিনার খেলা দেখেছিলেন তিনি। সেরিনার পোশাক তাঁর খুব পছন্দ হয়েছিল। বাবাকে বলেছিলেন, ওই রকম একটা পোশাক তাঁর চাই। বাবা মজা করে বলেছিলেন, তিনি টেনিস খেললে ওই রকম পোশাক কিনে দেবেন। সে কথা শুনেই তাঁর টেনিস শুরু। তবে পরবর্তী কালে উইলিয়ামস বোনদের খেলা দেখে শিখেছেন কিজ়। কেরিয়ারে কোনও দিন সেরিনাকে তিনি হারাতে পারেননি। তবে ভিনাসকে তিন বার হারিয়েছেন কিজ।

১০ বছর বয়সে আরও ভাল ভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে ফ্লরিডায় যান কিজ়। সেখানে এভার্ট টেনিস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। জুনিয়র স্তরে ভাল খেলায় মাত্র ১৫ বছরে পেশাদার সার্কিটে পা দেন কিজ়। তাঁকে আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রতিভা ধরা হত। কিন্তু পেশাদার সার্কিটে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন কিজ়। তিনি এর আগে এক বারই কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছিলেন। ২০১৭ সালে ইউএস ওপেনের ফাইনালে স্লোয়ানে স্টিফেন্সের কাছে স্ট্রেট সেটে হারেন কিজ়। গোটা ম্যাচে মাত্র তিনটি গেম জিতেছিলেন তিনি। ফাইনালে দ্বিতীয় সেটে একটিও গেম জেতেননি। খেলা শেষে বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয়েছিল কিজ়কে। অনেকে টেনিসের সবচেয়ে খারাপ ফাইনালিস্টের আখ্যা দিয়েছিলেন তাঁকে। দু’বার করে ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনাল খেলেছেন কিজ়। এক বার খেলেছেন ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনাল। কিন্তু সেখানেই দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশেষে হাসি ফুটল কিজের মুখে।

বার বার চোট তাঁকে সমস্যায় ফেলেছে। পিছিয়ে পড়েছেন। ২০২১ সালে ক্রমতালিকায় প্রথম ৫০-এর বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই কথাই বললেন তিনি। কিজ বললেন, “আমি বার বার চোটের কারণে পিছিয়ে গিয়েছি। এক সময় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দল আমার উপর ভরসা রেখেছিল। আমার স্বামী ও কোচ আমাকে ভরসা দিয়েছিল। ওদের জন্যই এই ট্রফি জিততে পেরেছি। এই পরিস্থিতিতে আবেগ ধরে রাখা কঠিন। আমি কিন্তু এ বার কেঁদে ফেলব।” কিজ যখন এই কথাগুলি বলছেন, তখন তাঁর দলের প্রত্যেকের চোখে জল। স্বামী বিয়র্নের চোখ ছলছল করছে। 

সাবালেঙ্কাও কিজের খেলার প্রশংসা করেছেন। তাঁর নাছোড় মনোভাবের প্রশংসা করেছেন। হার না মানা লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা করাই উচিত। সাবালেঙ্কার মতো কঠিন প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেমিফাইনালে বিশ্বের দ্বিতীয় বাছাই তথা চার বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী ইগা শিয়নটেকের বিরুদ্ধে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে জিতেছিলেন কিজ। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এ বার সহজে তাঁকে হারানো সম্ভব হবে না। ফাইনালে সাবালেঙ্কা সেটাই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফিতে খোদাই হল কিজ়ের নাম। প্রায় ৩০ বছর বয়সে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন। কিজ বুঝিয়ে দিলেন, স্বপ্ন সত্যি করার জন্য পরিশ্রম চালিয়ে গেলে তিনি সফল হবেনই। সে সামনে শিয়নটেক বা সাবালেঙ্কা, যে-ই থাকুন না কেন।

 

একুশে সংবাদ/ এস কে

Link copied!