ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদা পূর্ণ ফরম্যাট হলো টেস্ট। সাদা জার্সি পরে লাল বলের সঙ্গে লড়াই করার জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে দেখা গেছে স্টার্ক-ম্যাক্সওয়েলদের মতো তারকা ক্রিকেটারদের। আজ ১৫ই মার্চ টেস্ট ক্রিকেটের জন্মদিন। ১৪৮ বছরে পা রেখেছে ক্রিকেটের এই বনেদী ফরম্যাট। ১৮৭৭ সালের আজকের দিনে মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হয়েছিল ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অফিসিয়াল টেস্ট। প্রথম সেঞ্চুরি, প্রথম উইকেট, প্রথম রান... সবকিছুর শুরুটা আজকের দিনে।
প্রথম সেঞ্চুরিটা ছিল চার্লস ব্যানারম্যানের। বলা হয়, তিনিই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের প্রিমিয়াম ব্যাটসম্যান। প্রথম টেস্টে করেছিলেন ১৬৫ রান। প্রথম আউট হওয়া ব্যাটার ন্যাট থমসন। প্রথম উইকেট অ্যালেন হিলের। আর প্রথম টেস্ট জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ৪৫ রানের ব্যবধানে।
মূলত, ১৮৭৬ সালের নভেম্বরে খেলার চেয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের একটি দল জেমস লিলিহোয়াইটের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফর করেছিলো। অস্ট্রেলিয়ার তখন কেন্দ্রীয় কোনো ক্রিকেট দল ছিল না। নানা রাজ্য দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডের দলটি খেলে অর্থ উপার্জনে মনোনিবেশ করে।
জেমস লিলিহোয়াইট যদিও তার দলে এই সফরে কোনো অপেশাদার (অ্যামেচার) ক্রিকেটারকে রাখেননি। এর অর্থ, বিখ্যাত ডব্লিউ জি গ্রেস এই সফরে অন্তর্ভূক্ত হতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড ঘুরে আবার লিলিহোয়াইটরা অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসে। অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলস লিলিহোয়াইটদের চ্যালেঞ্জ জানায় একটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার জন্য।
১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ মেলবোর্নের বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড বা এমসিজিতে শুরু হয় ওই ম্যাচটি। যেখানে ইংল্যান্ড দলের ১১ জনের সবাই পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড এবং নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার সম্মিলিত একাদশ মুখোমুখি হয় এমসিজিতে।
শুরুতে এই ম্যাচটিকে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে প্রচারিত হয়নি। কিন্তু এটি দুটি প্রতিনিধিত্বমূলক দলের মধ্যে প্রথম ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে এবং শেষ পর্যন্ত এটাকেই ক্রিকেটের প্রথম অফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচের মর্যাদা দেয়া হয়। সেই থেকে কেটে গেছে ১৪৮টি বছর।
ম্যাচটিতে টস জিতে স্বাগতিকরা ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ট্রেলিয়ান দলটিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ফ্রেডরিক স্পফোর্থ ছিলেন না। ইংল্যান্ডের অপেশাদার দলে ছিল সেরা সেরা ব্যাটাররা। কিন্তু পেশাদার দল নিয়ে খেলায় ডব্লিউ জি গ্রেসসহ অনেকেই ছিলেন না ওই ম্যাচে। অর্থ্যাৎ, দুই দলই পূর্ণ শক্তির ছিল না বলা যায়।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ২৪৫ রান। দলীয় স্কোরের মধ্যে ৬৭.৩ শতাংশ রান সংগ্রহ করেন ব্যানারম্যান, যা ১৩০ বছর পরও একটি রেকর্ড হিসেবে টিকেছিল। অস্ট্রেলিয়ার করা ২৪৫ রানের জবাবে ইংল্যান্ড অলআউট হয় ১৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ১০৪ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেট নেন ইংল্যান্ডের বোলার অ্যান্ড্রু শ।জয়ের জন্য ১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ান বোলার টম কেন্ডালের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১০৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। টম কেন্ডাল ৩৩.১ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে একাই নেন ৭ উইকেট।
সবচেয়ে পুরাতন ফরম্যাট হলেও আইসিসি টেস্ট ক্রিকেট ঘিরে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা চালু করেছে সবার শেষে। ২০১৯ থেকে শুরু হয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন পর্যন্ত হয়েছে দুই চক্রের শেষ। ২০২৫ সালে হবে তৃতীয় চক্রের ফাইনাল। আর এই প্রতিযোগিতাই নতুন করে টেস্টকে নিয়েছে মানুষের আরও কাছে।
তবে বনেদি এই ফরম্যাটেই বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দীর্ঘ ২৪ বছরে ১৫০ ম্যাচ খেলে জয় মোটে ২২ ম্যাচে। হার ১১০ ম্যাচে। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে জয় কিছুটা নিয়মিত হলেও টেস্ট ক্রিকেটে এখনও বাংলাদেশ যেন অপরিণত একটা দল।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :