সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মালিক কাব্য মারানের ছবি এবং ভিডিও কোনও ম্যাচের আগে ও পরে, কিংবা ম্যাচ চলাকালীনও ভাইরাল হওয়া নতুন কিছু নয়। তিনি এমন একজন আবেগপ্রবণ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক, যিনি খোলা মনে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং তা লুকানোর বিশেষ চেষ্টা করেন না। একবার কাব্যর দিকে তাকালেই বোঝা যায় ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কোন অবস্থায় রয়েছে।
আইপিএল ২০২৫-এও ছবিটা বদলায়নি। ১৮তম আসরের প্রথম ম্যাচে ইশান কিষান তার আইপিএল কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে দুর্দান্ত জয় এনে দেওয়ার সময় কাব্য ছিলেন দারুণ উচ্ছ্বসিত। কিন্তু বৃহস্পতিবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের (এলএসজি) বিরুদ্ধে হায়দরাবাদের দ্বিতীয় ম্যাচে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো ছিল।
স্টেডিয়ামে প্রচুর রান দেখা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা সানরাইজার্সের ব্যাটারদের ব্যাট থেকে নয়। তারা নিজেদের রান তোলার যে মানদণ্ড তৈরি করেছে, বিশেষ করে নিজেদের ঘরের মাঠ রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে, সেখানে ৯.৫ রান গড়ে তোলা যেন ধীরগতির ব্যাটিং মনে হচ্ছিল। এই ধারণা বাস্তবে পরিণত হয় যখন লখনউ ব্যাট করতে নামে। ১৯১ রানের লক্ষ্য তারা মাত্র ১৬.১ ওভারে পাঁচ উইকেট হাতে রেখেই পূরণ করে ফেলে, যেখানে নিকোলাস পুরান এবং মিচেল মার্শ বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন।
সাধারণত ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, ইশান কিষান এবং এনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে ছক্কার ফুলঝুরি দেখতে অভ্যস্ত কাব্য মারান, এবার সেই একই দৃশ্য দেখতে হল তাঁর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলারদের বিরুদ্ধে, যেখানে নিকোলাস পুরান যেন একাই ম্যাচ শেষ করে দেন। এই বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান মাত্র ২৬ বলে ৭০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ছয়টি ছক্কা এবং ছয়টি চার মারেন। এমনকি এসআরএইচ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এবং ভারতের অভিজ্ঞ পেসার মহম্মদ শামিও তাঁর আক্রমণের কোনও জবাব খুঁজে পাননি।
যখন পুরান এসআরএইচ বোলারদের ধ্বংস করছিলেন, ক্যামেরা বারবার কাব্যর মুখের অভিব্যক্তির দিকে ঘুরছিল। মাথায় হাত দিয়ে হতাশ মুখে তিনি যেন একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। অপর প্রান্ত থেকে মিচেল মার্শও কোনও রেহাই দেননি। `ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার` হিসেবে ওপেনিংয়ে নামা মার্শ ৩১ বলে ৫২ রান করেন, এসআরএইচ বোলারদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেন এবং কাব্যর দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেন।
লখনউয়ের রান তাড়া করার সময় চতুর্থ বলেই এইডেন মার্করামকে মিড-অফে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মহম্মদ শামি। তবে তারপরই পুরান এবং মার্শ মাত্র ৪৩ বলে ১১৬ রানের ঝোড়ো পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন। পুরান মাত্র ১৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন, যেখানে অ্যাডাম জাম্পাকে সুইপ করে এক বিশাল ছক্কা মারেন। সাত ওভারেই লখনউয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৯৬/১।
প্যাট কামিন্স এক ফুল লেংথ ডেলিভারিতে পুরানকে এলবিডব্লিউ আউট করেন, তবে তার আগেই ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, মার্শ কামিন্সের বলেই লং-অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, যদিও তার আগে তিনি ব্যাক-টু-ব্যাক বাউন্ডারি মেরে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন মার্শ। ঋষভ পন্ত (১৫) বল ঠেলে শর্ট থার্ড ম্যানের হাতে ক্যাচ দেন, আর আয়ুষ বাদোনিকে দারুণ দক্ষতায় মিড উইকেট থেকে দৌড়ে এসে হার্ষাল প্যাটেল এক দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন।
শেষদিকে আব্দুল সামাদ ঝড় তোলার চেষ্টা করেন। মাত্র ৮ বলে ২২ রান করেন, যেখানে দুটি ছক্কা ও দুটি চার হাঁকান তিনি। তবে ততক্ষণে লখনউ সহজেই ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছিল এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের পরাজয়ের ক্ষত ভুলে যায়।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :